Aparajito review: সাদাকালো পর্দায় অনবদ্য জিতু, দর্শকের মন জয় করলেন অনীক

অরুণাভ রাহারায়: সাদাকালো পর্দায় সত্যজিৎ রায়ের জীবনের একটা বিশেষ অংশ এঁকেছেন পরিচালক অনীক দত্ত। অপরাজিত ছবি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আগে থেকেই যথেষ্ট উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল। দর্শকদের সেই আশা হয়ত পূরণ করতে পারলেন পরিচালক। বহু প্রতিক্ষিত ছবিটি স্পেশাল স্ক্রিনিং দেখার পর এমনটা মত দিলেন সিনেপ্রেমীরা। শহরের এক আইনক্সের পর্দায় আজ সন্ধ্যায় প্রথম দেখানো হয় অপরাজিত ছবিটি। প্রথম শো দেখতে উপস্থিত ছিলেন অপর্ণা সেন, কল্যাণ রায়, বরুণ চন্দ্র, সৃজিত, মিথিলা, বিক্রম ঘোষ, জয়া শীল-সহ রূপোলি জগতের বহু তারকা। ছবি শেষে তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় উঠে এল ছবিটি ভালো লাগার প্রসঙ্গ।

কী দেখানো হল ছবিতে? সত্যজিৎ রায়ের বর্ণময় জীবনের একটা অংশ। সত্যজিতের জীবন পর্দায় দেখানো কি সহজ কাজ? কোভিড পর্বের লকডাউনের সময়ই ঝুঁকি নিয়েছিলেন পরিচালক। তিলে তিলে গড়ে ওঠে ছবিটি। শুরু হচ্ছে আকাশবাণীতে অপরাজিত রায়ের সাক্ষাৎকার দিয়ে। আর ফ্ল্যাশব্যাকে এগিয়ে চলে গল্প। সত্যজিৎ রায় ওরফে অপরাজিত রায়ের ভূমিকায় জিতু কমল দর্শকের মন ছুঁয়ে নেন। ছবিতে তাঁর স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সায়নী ঘোষ। তিনিও অনবদ্য। পথের পাঁচালী (ছবিতে নাম পথের পদাবলী) ছবিকে কেন্দ্র করে সত্যজিৎ রায়ের জীবনছবি এঁকেছেন অনীক দত্ত। হুবুহু সত্যজিৎ রায়ের মতো দেখতে জিতু কমলের উপস্থাপন প্রশংসার দাবি রাখে।

অ্যাড এজেন্সিতে চাকরি করতে করতেই বিলেতে যাওয়ার সুযোগ এবং সেখানকার সিনেমা হলে দ্যা বাইসাইকেল রাইড ছবিটি দেখে নিজে ছবি বানানোর অনুপ্রেরণা পান অপরাজিত রায়। যদিও ‘অপরাজিত’ অথরাইজ বায়োপিক নয়, তবে এ ছবি যে মহান প্রতিভা সত্যজিৎ রায়ের জীবন নিয়েই সেকথা বুঝতে আর দর্শকের অসুবিধে হয় না। বাংলার গ্রামের ছবি অপূর্ব ভাবে পথের পাঁচালীতে তুলে ধরেছিলেন সত্যজিৎ রায়। সেই ছবির নির্মাণকাহিনীই ‘পরাজিতর’-র প্রাণ। যা দেখতে গিয়ে আমরা জানতে পারি সেই সময় কতটা বেগ পেতে হয়েছিল পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে।

কলকাতার কাছেই এক গ্রামে পথের পাঁচালীর শুটিং করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। আগের দিন দেখে আসা কাশবন পরেরদিন উধাও। অপরাজিত রায়ের কথায়– গরু খেয়ে নিয়েছিল। এক অভিনেতার টাকে বৃষ্টি পতনের দৃশ্য কীভাবে হয়ে উঠেছিল, অপরাজিত ছবিটি দেখে আমরা তা জানতে পারি। সেই ব্যক্তিতে গ্রামে একদিন দেখেছিলেন সত্যজিৎ রায়। কিন্তু নাম জানা নেই। তাই গ্রামবাসীরাও কেউ খোঁজ দিতে পারছেন না। তখনই একটা সাদা পৃষ্ঠায় খসখস করে অপরাজিত রায় এঁকে ফেললেন ছবি! এ বোধ হয় কেবল সত্যজিৎ রায়ের পক্ষেই সম্ভব। যা দেখে চিতে পারে গ্রামবাসীরা। পরে সেই ব্যক্তিকে দিয়েই দৃশ্যটির অভিনয় করানো হয়।

পথের পাঁচালীর সবচেয়ে আশ্চর্য দৃশ্য কাশবনের ভেতর দিয়ে ট্রেনের ছুটে যাওয়া। এই দৃশ্যকেও অপরাজিত ছবিতে সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক অনীক দত্ত। দৃশ্যটিতে পরিচালকের মুন্সিয়ানা লক্ষ্য করার মতো। সে জন্যই বোধ হয় দর্শকদের পক্ষ থেকে সমবেত হাততালির আওয়াজ উঠে আসে প্রেক্ষাগৃহে। ইন্দির ঠাকরুনের মৃত্যু দৃশ্যটিও আমাদের আশ্চর্য করে। অপু ওরফে মানিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শিশুশিল্পী আয়ুস এবং দুর্গা ওরফে উমার ভূমিকায় অনুষা বিশ্বনাথন। অর্থের অভাবে একসময় শুটিং বন্ধ হয়ে যায় পথের পদাবলীর। তারপর মুখ্যমন্ত্রী বিমান রায়ের কাছে সাহায্যের জন্য যান অপরাজিত রায়। অনেক ভেবেচিন্তে পথের পদাবলী নাম শুনে তিনি পরিচালকে পাঠিয়ে দেন পূর্ত দফতরে। সরকারি সাহায্য পেলে আবার শুরু হয় শুটিং এবং ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে।

বিমান রায়ের ভূমিকায় বর্ষিয়ান অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়ের যাদু নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অপরাজিত রায়ের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অনসূয়া মজুমদার। ছেলের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন সুরমা দেবীকে এক আত্মীয়ার কাছে বলতে শোনা যায়– এত কষ্ট করে অপুকে লেখাপড়া শেখালাম, শান্তিনিকেতনে পাঠিয়ে ছবি আঁকা শেখালাম তা কি কেবল ফিল্ম করে বখে যাওয়ার জন্যে? তখন সেই আত্মীয়া অভয় দিয়ে বলেন, আমাদের অপু কি বখে যাওয়ার মতো ছেলে! সেই কথাই পরে প্রমাণিত হয়। তাই রেডিয়োয় ছেলের সাক্ষাৎকার শুনতে শুনতে মায়ের চোখে জল আসে।

বিজয়া রায় ছাড়া সত্যজিৎ রায়ের জীবন যে অসম্পূর্ণ এ ছবিতে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সায়নী ঘোষ অভিনয় করেছেন সেই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। অন্যরকম ফিল্ম বানাতে চাওয়া অপরাজিতকে যখন সবাই ফিরিয়ে দিচ্ছেন বা ছবিতে গান ঢোকানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন স্ত্রী। এমন কি বিয়েতে পাওয়া গয়নাও বন্ধক দিতে পিছু পা হননি। তাঁর বিশ্বাস ছিল এ ছবি একদিন সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। শেষমেশ হলেও তাই। নিউ ইয়র্ক থেকে প্রশংসা এল। তারপর বিখ্যাত কান ফেস্টিভ্যালে দর্শকের মন জয় করল পথের পদাবলী। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অপরাজিত রায়কে। এ ছবির মধ্যে দিয়েই তাঁর জীবন বাঁক নেয় নতুন পৃথিবীর দিকে। কলকাতার মঞ্চে সংবর্ধিত হন তিনি। ছবিতে তাঁর সঙ্গীদের ভূমিকায় ঋত্বিক, দেবাশিস, শোয়েব প্রমুখ যথার্থ অভিনয় করেছেন। মুক্তি পাওয়ার পরেই যথেষ্ট সারা ফেলেছে অপরাজিত। আগামী দিনে বিপুল দর্শক এই ছবিকে কতটা গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার।

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.