‘সন্ন্যাসীর হাত টমি হিলফিগারের ঘড়ি কেন?’, অমোঘের ‘লীলা’কে কটাক্ষ শ্রীজাতর

ইসকনের সন্ন্যাসী অমোঘ লীলা দাসের বক্তব্য নিয়ে এখন হইচই চারিদিকে। স্বামী বিবেকানন্দ ও শ্রীরাম কৃষ্ণের ‘কুৎসিত সমালোচনা’র কারণে সমালোচনার ঝড় সোশ্যাল মিডিয়াতেও। ইতিমধ্যেই সেই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়েছে ইসকনের তরফে। ১ মাসের জন্য নিষিদ্ধও করা হয়েছে অমোঘ লীলা দাসকে। তবে তাতেও রাগ পড়ছে না কারও। অমোঘ লীলা দাসকে নিয়ে এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় কলম ধরলেন শ্রীজাত। যার ছত্রে ছত্রে সমালোচনা। কড়া প্রশ্নবানে এই সন্ন্যাসীকে বিদ্ধ করলেন কবি। সঙ্গে লোকচক্ষুতে আনলেন ইসকনের সন্ন্যাসীর হাতে থাকা বহুমূল্য টমি হিলফিগারের ঘড়িটিকেও। তাঁর প্রশ্ন, ‘সামান্য দৈনন্দিন সময় দেখার জন্য যাঁর এত বহুমূল্য ঘড়ি প্রয়োজন হয়, তিনি দ্রষ্টা হবেন কোন মুখে?’

অমোঘ লীলাকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক সন্ন্যাসী’ উল্লেখ করে লিখলেন, ‘যে-বহুতল বাড়ির ৪৫ কি ৬৭ বা ৮৩ তলার কোনও একখানা কামরা থেকে তিনি গলা তুলে কথা বলছেন, সেই বহুতলের ভিতটার নাম স্বামী বিবেকানন্দ। আর যে-জমিতে সেই ভিত খোঁড়া হয়েছিল, সেই জমিটার নাম পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণ। আজ গেরুয়া বসন গায়ে চাপিয়ে কপালে তিলক কেটে মুখে মাইক এঁটে যেটুকু করে খাচ্ছেন, তার একবিন্দুও জুটত না, এই দু’জন মানুষ ধর্মচর্চার দরজা হাট করে খুলে না-দিলে। কাজটা হয়তো একা হাতে করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ, কিন্তু তাঁর মাটিকে প্রতিমায় রূপান্তরিত করেছেন যে-কারিগর, সেই শ্রীরামকৃষ্ণের অবদানই বা কম কীসে?’

এই অমোঘ লীলা নিজের বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘স্বামী বিবেকানন্দ যদি মাছ খান, তাহলে তিনি কী করে একজন সিদ্ধপুরুষ? কোনও সিদ্ধপুরুষ কখনও মাছ খাবেন না, কারণ মাছও ব্যথা অনুভব করে। একজন সিদ্ধপুরুষের অন্তরে মমতা থাকে।’ সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রীজাত লিখলেন, ‘আমিষ ভোজন নিয়ে নিদান দিচ্ছেন যখন অমোঘবাবু, তখন নিশ্চয়ই তাঁর এ-খেয়াল হয়নি যে, স্বামী বিবেকানন্দ কেবলমাত্র আরেকজন সন্ন্যাসী নন। তাঁর স্বল্পায়ু জীবনরেখায় যে-ত্যাগ, যে-লড়াই, যে-কৃচ্ছসাধন, যে-তিতিক্ষা, যে-আত্মবিশ্বাস আর যে-দুঃসাহস তিনি দেখিয়ে গেছেন, তা কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে কখনও সম্ভব হতো না। একটা গোটা সমাজের পথপ্রদর্শক ও প্রতিনিধি হয়ে ওঠার জন্য কেবল সন্ন্যাসীর বসন যথেষ্ট নয়, অন্তরটুকুও তেমন হওয়া জরুরি। আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি বেশিদিন জীবিত থাকেননি এবং তাঁর মতো আর একজনকেও আমরা আজ অবধি পাইনি। পেলে, বাঙালি জাতির ইতিহাস অন্যভাবে রচিত হতো।’

‘আমিষ’ প্রসঙ্গে মুখ খুলে ইসকন ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছে, ‘এই মন্তব্য শুধুমাত্র অসম্মানজনক নয় বরং আধ্যাত্মিক পথ এবং ব্যক্তিগত পছন্দের বৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাবেরও নিদর্শন। এই কাজগুলি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সম্প্রীতির মৌলিক নীতিগুলিকে ক্ষুন্ন করে, যা একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক।’

প্রসঙ্গত, রামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথ’ বাণীকে উদ্ধৃত করে এমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন অমোঘ লীলা, যা নিয়ে বেজায় চটেছেন রামকৃষ্ণ ভক্তরা। শ্রীরামকৃষ্ণ যেভাবে মানুষকে ঈশ্বরলাভের বহু পথ সম্পর্কে জ্ঞাত করার চেষ্টা করেছিলেন, তার সমালোচনা করেন অমোঘ লীলা। আর এবার শ্রীজাত লিখলেন, ‘শ্রীরামকৃষ্ণের ‘যত মত, তত পথ’ প্রবচনটি নিয়ে ঠাট্টা করবার সময়েও অমোঘবাবুর নিশ্চয়ই এ-বোধ হয়নি যে, চার শব্দের এই একটি বাক্যের মধ্যে ধর্মচর্চার কত বড় ঔদার্য ও আধুনিকতার পাঠ লুকিয়ে আছে। সেই উদারতা, সেই আধুনিকতার কাছে পৌঁছতে এঁদের বহুজীবনও যথেষ্ট নয়।’

বলে রাখা ভালো, ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা কর্পোরেট দুনিয়াতেই কাজ করেছেন আশিস আরোরা থুরি অমোঘ লীলা। পেশায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়র। লেখার শেষ ছত্রে কটাক্ষের সুরে শ্রীজাত লিখলেন, ‘পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণ বা স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠা কারও পক্ষেই অসম্ভব। কারণ তাঁকে বা তাঁদের প্রথমে গদাধর চট্টোপাধ্যায় এবং নরেন্দ্রনাথ দত্ত হয়ে জন্মাতে হবে। অমোঘবাবু যদি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর এটুকুও বোঝেন, সেই অনেক। সন্ন্যাসীর কেরিয়ার তাঁর জন্য নয়। কারণ একটাই। সন্ন্যাস কোনও কেরিয়ার অপশন নয়। একধরনের যাপন। সেই বোধ এই অমোঘবাবুদের যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল।’

 

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.