WTC Report Card: রোহিত,কোহলি, গিল অত্যন্ত খারাপ, রাহানে,পূজারার ভবিষ্যত অন্ধকারে
২০১৩ সালের ২৩ জুন শেষ বার ভারতীয় ক্রিকেট দল আইসিসি শিরোপা হাতে তুলেছিল। এক দশক পর বিভিন্ন ফরম্যাটে আইসিসির ন’টি আসরে অংশ নিয়েছে ভারত। কিন্তু আইসিসি-র শিরোপার খোঁজ এখনও অব্যাহত। খালি হাতে ব্যর্থ মনোরথে বারবার শিরোপা হাতছাড়া করেছে টিম ইন্ডিয়া। প্রায় ১০ বছর আগে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর থেকে ভারত আইসিসি ইভেন্টে খারাপ পারফরম্যান্স করেছে, এমনটা নয়। ন’টি টুর্নামেন্টের মধ্যে তারা চার বার ফাইনাল খেলেছে এবং অনেক বার সেমিফাইনালে উঠেছে। ২০২১ সালে শুধুমাত্র সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে অনুষ্ঠিত ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা খারাপ ভাবে ছিটকে গিয়েছি। গ্রুপ লিগ থেকেই ভরতকে বিদায় নিতে হয়েছিল। সত্যি কথা বলতে, ভারত সেমিফাইনাল বা ফাইনালে উঠুক না কেন, জিততে না পারলে ব্যর্থতার বোঝাটা ঘাড়ে চেপেই থাকে।
ওভালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে হার হল আইসিসি ইভেন্টে নকআউট ম্যাচে ভারতের হতাশার সর্বশেষ সংস্করণ। ভারত এই ম্যাচে রীতিমতো ল্যাজেগোবরে হয়ে হেরেছে। ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে তাদের হারত হয়েছে। সব বিভাগই ব্যর্থ হয়েছে। এই ফাইনালের পর কারা কী রকম পারফরম্যান্স করেছেন, সেই রিপোর্ট কার্ড দেখে নিন এক নজরে:
রোহিত শর্মা, অধিনায়ক (৪/১০, অত্যন্ত খারাপ): টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে অশ্বিনকে বাদ দেওয়া পর্যন্ত- ডব্লিউটিসি ফাইনালে অধিনায়ক হিসেবে রোহিতের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স ছিল। প্রথম ইনিংসে ট্র্যাভিস হেড এবং স্টিভ স্মিথের আক্রমণের কোনও উত্তর ছিল না তাঁর কাছে। ব্যাটসম্যান হিসেবেও দুই ইনিংসেই খুব খারাপ খেলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে রোহিত ১৫ রানে আউট হন। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য ৪৩ করেছিলেন। তবে দলকে জেতাতে এই রান কিছুই ছিল না।
শুভমন গিল (৩/১০, অত্যন্ত খারাপ): দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪ রানে তাঁর আউট নিয়ে বিতর্ক ছিল। তবে তিনি যে শটটি খেলেছিলেন, সেই শটটি মোটেও ঠিকঠাক ছিল না। এই নিয়ে গিল প্রতিবাদ করে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার পরপরই সোশ্যাল মিডিয়া বিতর্কিত পোস্ট করেছিলেন। যার জেরে শুভমনকে দরিমানা করে আইসিসি। যাইহোক দ্বিতীয় ইনিংসে গিলের আউট নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, প্রথম ইনিংসেও তিনি অশ্বডিম্বই প্রসব করেছেন। তিনি প্রথম ইনিংসে স্কট বোল্যান্ডের ডেলিভারিতে মাত্র ১৩ করে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। যে উইকেট স্মিথ-হেড দাপিয়ে খেলেছেন, সেখানে তারাক ব্যাটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা শুভমন গিল ল্যাজেগোবরে হয়েছেন। তরুণ ওপেনারের থেকে প্রত্যাশা বেশি ছিল, কিন্তু তিনি চূড়ান্ত হতাশ করেছেন।
চেতেশ্বর পূজারা (২/১০, হতশ্রী): চেতেশ্বর পূজারার আইপিএল খেলার কোনও ক্লান্তি ছিল না। তিনি আইপিএলের সময়ে বরং কাউন্টি খেলে নিজেকে ভালো ভাবে প্রস্তুত করেছিলেন। ১০৩ টেস্টে খেলা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান দ্য ওভালে দুই ইনিংসেই দলকে ডুবিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ১৪ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭ রান করেন তিনি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কয়েকটি ম্যাচে ভালো খেলেচিলেন, বাকি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে পূজারার পারফরম্যান্স কিন্তু হতাশাজনক। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে দলে রাখা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
বিরাট কোহলি (৪/১০, অত্যন্ত খারাপ): বিরাট কোহলিও কিন্তু প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪ রান করে তিনি আউট হয়ে গিয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ভরসা জুগিয়েছিলেন। ৪৯ করে ভালো ছন্দেও ছিলেন। কিন্তু একটি অত্যন্ত খারাপ শট খেলে নিজের উইকেট কার্যত ছুঁড়ে দিয়ে চলে যান বিরাট। সাদা বলের ক্রিকেটে কোহলি তাঁর ফর্ম অনেকাংশে ফিরে পেলেও, লাল বলের ক্রিকেটে তিনি একেবারেই সেরা ছন্দে নেই।
অজিঙ্কা রাহানে (৭/১০, ভালো): ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে বিতর্কিত খেলোয়াড় ফাইনালে ভারতের সেরা পারফর্মার হয়ে ওঠেন। কেএল রাহুল চোটের কারণে ছিটকে গেলে, দলে ঢোকেন রাহানে। পর প্রায় দেড় বছর পর টেস্ট দলে ফেরেন তিনি। প্রাক্তন সহ-অধিনায়ক কিন্তু আঙুলের চোট নিয়েও লড়াই করেছিলেন। প্রথম ইনিংসে তিনি ৮৯ রান করে ভারতকে কিছুটা অক্সিজেন দেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও তাঁকে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে সেরা পারফর্মার লাগছিল। তবে তিনিও ভুল শট খেলে বসেন নিজের ৪৬ রানের মাথায়। রাহানে আউট হতে ভারতের যাবতীয় আশা একেবারে শেষ হয়ে যায়। তবে এই ম্যাচে খুব খারাপ না খেললেও, ভারতীয় টেস্ট দলে রাহানের ভবিষ্যত কিন্তু অন্ধকারে।
রবীন্দ্র জাদেজা (৭/১০, মোটামুটি): রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে না খেলিয়ে একমাত্র স্পিনার হিসেবে রবীন্দ্র জাদেজাকে খেলা হয়েছিল। মূলত তাঁর ব্যাটিংয়ের কারণে। প্রথম ইনিংসে জাদেজা সাবলীল ৪৮ রান করেছিলেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ২ বল খেলে শূন্য করে সাজঘরে ফেরেন। বল হাতে জাদেজার থেকে আরও ভালো পারফরম্যান্স আশা ভালো পারফরম্যান্স আশা করা হয়েছিল। তিনি প্রথম ইনিংসে ভারতের সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার ছিলেন এবং অ্যালেক্স ক্যারির উইকেটও পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে, তিনি সমস্ত অস্ট্রেলিয়ান বাঁ-হাতিদের কিছুটা সমস্যায় ফেলেন এবং ৫৮ রানে ৩ উইকেট নেন।
কেএস ভরত (৪/১০, অত্যন্ত খারাপ): ব্যাট হাতে ভরত কখনও-ই ঋষভ পন্তের জায়গা নিতে পারেননি। কিন্তু তিনি স্টাম্পের পিছনে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন তিনি। তবে টেস্টে ভারতের ব্যাকআপ কিপার হতে চাইলে তাঁকে তাঁর ব্যাটিংয়ে আরও উন্নতি করতে হবে।
শার্দুল ঠাকুর (৫/১০, মোটামুটি): প্রথম ইনিংসে তাঁর সাহসী ৫১ রান ভারতকে ভরসা দিয়েছিল। রহানে আর শার্দুল জুটিই ভারতের ফলোয়ান বাঁচিয়েছিল। কিন্তু শার্দুল যেভাবে বোলিং করেছে, তাতে কেউই সন্তুষ্ট নন। তিনি প্রথম ইনিংসে তাও ২ উইকেট পেয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৮ ওভার বল করেও উইকেট নিতে পারেননি।
মহম্মদ শামি (৪/১০, অত্যন্ত খারাপ): মহম্মদ শামি আশানুরূপ বল করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে তিনি ২ উইকেট পেলেও, বোলিং সন্তোষজনক ছিল না। ব্যাটারদের জন্য যখন ট্র্যাকটি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল, তখন তিনি নতুন বলেও তিনি কিছু করতে পারেননি। ফাইনালের প্রথম দিনই লিড সিমার যদি এক ওভারে ৪ রানের বেশি দেন, তখন সেটা যে কোনও দলের জন্য চাপের হয়। তিনি দ্বিতীয় ইনিংসে কিছু ভালো বল করেছেন। তুলনামূলক কম রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন। তবে ফাইনালে দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৪ উইকেট মোটেও ভালো পরিসংখ্যান নয়।
উমেশ যাদব (২/১০, হতশ্রী): ডব্লিউটিসি ফাইনালে তাঁকে পুরোপুরি অপ্রস্তুত মনে হয়েছে এবং তিনি ছন্দেই ছিলেন না। তার বোলিংয়ে শেই ধারালো ভাবই ছিল না। প্রথম ইনিংসে তাঁর লাইন এবং লেন্থ ছিল উদ্বেগজনক। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি কিছুটা ভালো বোলিং করেন। এবং স্টিভ স্মিথ ও উসমান খোয়াজার উইকেট নেন। তবে এতে কিছু লাভ হয়নি। ভারতীয় টেস্ট দলে তাঁর ভবিষ্যত অন্ধকারে।
মহম্মদ সিরাজ (৭/১০, ভালো): ভারতীয় পেসারদের মধ্যে তিনি কিছুটা ভালো পারফরম্যান্স করেছেন। মহম্মদ সিরাজ প্রথম ইনিংসে চার উইকেট পান। তার জন্যই অস্ট্রেলিয়াকে ৫০০ পার করার আগেই আটকাতে পেরেছিল ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ভালো বোলিং করলেও মাত্র একটি উইকেট পান।
For all the latest Sports News Click Here