Ranji Trophy: বড় ভাইয়ের কারণেই ২৫০ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন ‘বীরেন্দ্র সেহওয়াগের ভক্ত’ সাকিবুল গনি
বিহার ক্রিকেটে শীর্ষ স্তরের দ্বন্দ্বের কারণে সাকিবুল গনির বাবা চাইতেন না তার ছেলে ক্রিকেট খেলুক। তবে বাবা না বুঝলেও সাকিবুলের দাদা ভাইয়ের আবেগকে বুঝে ছিলেন। ভাইয়ের স্বপ্নকে পূরণ করতে এগিয়ে এসেছিলেন সাকিবুলের দাদা। যখন বাবা তার ছেলের ভবিষ্যত সম্পর্কে খুব বেশি নিশ্চিত ছিলেন না। তখন সাকিবুলের বড় ভাই তাকে সমর্থন করেছিলেন। যার ফলে সাকিবুল তার অভিষেক ম্যাচেই ট্রিপল সেঞ্চুরি করে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ইতিহাস তৈরি করে ফেলেছেন।
মিজোরামের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফি ম্যাচে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক করেছিলেন বিহারের সাকিবুল গনি। তিনি তার প্রথম ইনিংসে ৩৪১ রান করেন। ১৭৭২ সালে শুরু হওয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে কোনও ব্যাটসম্যানই করতে পারেননি। ১৮২৬ সালের ২৬শে জুলাই ইংল্যান্ডের থমাস মার্সডেন যখন বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তার প্রথম প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করেন, তখন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে অভিষেক ম্যাচে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড কেউ গড়তে পারবে। প্রায় ২০০ বছর পর এই রেকর্ড করে দেখালেন ভারতের বিহারের ২২ বছর বয়সী সাকিবুল গনি।
মতিহারির আগরওয়া শহরের সাকিবুলের নাম ক্রিকেট ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হওয়ায় এখন তার বাবা আদনান গনিও ছেলেকে নিয়ে গর্বিত। আদনান গনি, পেশায় একজন কৃষক। তিনি সর্বদা চাইতেন তার চার ছেলে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করুক বা কৃষিকাজে হাত লাগাক। এর একটি বড় কারণ ছিল যে বিহার ২০০৪ সাল থেকে রঞ্জি ট্রফি খেলছিল না। রাজ্য সংস্থায় দলাদলির কারণে বিসিসিআই নবগঠিত ঝাড়খণ্ড রাজ্যকে স্বীকৃতি দেওয়া উপযুক্ত বলে মনে করেছিল।
কোচবিহার ট্রফি এবং ভিজি ট্রফিতে খেলা সাকিবুলের বড় ভাই ফয়সাল গনি সহ বিহারের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের ভবিষ্যত হুমকির মুখে ছিল। কিন্তু ফয়জল আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে একদিন বিহারের ক্রিকেটের পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তাই তিনি তার ছোট ভাই সাকিবুলকে ক্রিকেটের দক্ষতা শিখিয়েছিলেন। কঠিন পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও তার অনুশীলন যাতে ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করেছিলেন সাকিবুলের দাদা ফয়জল।
২০১৮ সালে বিহার রঞ্জি ট্রফিতে ফিরে আসে এবং এরই মধ্যে সাকিবুল তার ভাইয়ের আস্থা বজায় রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। সাকিবুলের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় যখন তিনি বিহারের প্রাক্তন অনূর্ধ্ব-২৩ কোচ অজয় রাত্রার নজরে আসেন। একবার মতিহারির গান্ধী ময়দানে খেলার সময় পাটনার মইনুল হক স্টেডিয়ামে তাকে দেখতে পান অজয় রাত্রা। তার ‘ট্রায়াল’ চলাকালীন তরুণ ব্যাটসম্যানকে দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। সাকিবুলের ‘শট’ নির্বাচন এবং ‘টাইমিং’ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন রাত্রা। তিনি জানতেন যে এই খেলোয়াড়কে একটু ঘষা মাজা করলেই উন্নতি করা যাবে। পরবর্তিতে সেটাই হল। রাত্রা সাকিবুলের কৌশলে কিছু পরিবর্তন করলেন। এরপর জুনিয়র ক্রিকেটে সাকিবুল বিহারের ‘রান মেশিন’ হয়ে উঠলেন। বীরেন্দ্র সেহওয়াগের ভক্ত সাকিবুল ২০১৮-১৯ মরশুমে বিহার ‘অনূর্ধ্ব-২৩’ দল থেকে সর্বোচ্চ ৬৮৫ রান করেছিলেন, যেখানে তার সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ২৮২ রান।
পরের মরশুমে সিকে নাইডু ট্রফিতে তিনি ৬৯৪ রান করে সিনিয়র দলের দরজায় কড়া নাড়লেন। বিজয় হাজারে ট্রফি ওডিআই টুর্নামেন্টে বিহারের হয়ে জয়পুরে ৭ অক্টোবর ২০১৯-এ জম্মু ও কাশ্মীরের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলেন। এরপরে তিনি বিহারের সীমিত ওভারের দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে রঞ্জি ট্রফির না হওয়ার কারণে তাকে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এদিকে, সাকিবুলকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ফ্র্যাঞ্চাইজি দিল্লি ক্যাপিটালসও ট্রায়ালের জন্য ডাকে। তিনি আইপিএল নিলামের অংশ ছিলেন না, তবে রঞ্জি ট্রফিতে রেকর্ড-ব্রেকিং পারফরম্যান্সের পরে, সাকিবুলের নাম অবশ্যই ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলির মনে থাকবে।
For all the latest Sports News Click Here