ISL 2022-23: ATKMB-র কাছে বদলার ম্যাচ,হায়দরাবাদ মরিয়া গত বারের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে
গত বছর এই হায়দরাবাদ এফসি-র কাছে সেমিফাইনালে নাস্তানাবুদ হয়েই আইএসএল থেকে ছিটকে গিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। এ বার সেই হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ফের সেমিফাইনাল খেলতে নামবে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।
এ বারের লড়াইটা যতটা না আক্রমণের, তার চেয়ে বেশি রক্ষণের। কারণ, দুই দল নিজেদের দূর্গ রক্ষার ক্ষেত্রে চলতি লিগে সেরা। সবচেয়ে কম গোল খাওয়া, সবচেয়ে বেশি ক্লিন শিট বজায় রাখা, বিপক্ষকে সবচেয়ে কম শট গোলে রাখতে দেওয়া- এই সব ব্যাপারে দুই দলই একে অপরকে কার্যত পাল্লা দিচ্ছে। তবে এ বারা বাগানের কাছে যেমন বদলার ম্যাচ, তেমনই গত বারের চ্যাম্পিয়নদের কাছে এই লড়াই মর্যাদা রক্ষার। সাফল্যের ধারা ধরে রাখতে নিজামের শহরের দলটি মাটি কামড়ে লড়াই করবে।
কোন দল এগিয়ে বা পিছিয়ে
এটিকে মোহনবাগান তাদের শেষ তিনটি ম্যাচই জিতেছে। আর হায়দরাবাদ শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে জিতেছে মাত্র দু’টিতে। লিগের শেষ পর্যায়ে তারা হারে ওড়িশা এফসি, জামশেদপুর এফসি-র কাছে। ড্র করে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে। হারায় এটিকে মোহনবাগান এবং কেরালা ব্লাস্টার্সকে।
অন্য দিকে, ইস্টবেঙ্গল এফসি, কেরালা ব্লাস্টার্সের পরে প্লে অফের প্রথম ম্যাচে ওড়িশা এফসি-কে হারায় এটিকে মোহনবাগান। অর্থাৎ কলকাতার দল হায়দরাবাদের দলের চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো ছন্দে রয়েছে। সেই ছন্দ তারা যদি বজায় রাখতে পারে, তা হলে বৃহস্পতিবার জিএমসি বালাযোগী স্টেডিয়ামে হায়দরাবাদকে ছেড়ে কথা বলবে না। বিশেষ করে হুগো বৌমাস, দিমিত্রি পেত্রাতোস, কার্ল ম্যাকহিউরা যে রকম ফর্মে রয়েছেন, তাতে বাগান সমর্থকেরা আশার আলো দেখতেই পারেন।
কিন্তু দু’টি জায়গায় হোঁচট খেতে পারে জুয়া ন ফেরান্দোর টিম। এক) আশিক কুরুনিয়ানের চোট এবং লিস্টন কোলাসোর ফর্মে না থাকা এবং দুই) বাগানের অ্যাওয়ে রেকর্ড।
প্রসঙ্গত, গত ম্যাচে আশিক গোড়ালিতে যে গুরুতর চোট পান, সেই চোট নিয়ে বৃহস্পতিবার তাঁর খেলতে পারার সম্ভাবনা বেশ কম। তাঁর জায়গায় হয়তো লিস্টন কোলাসোকে নামাতে বাধ্য হবেন দলের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। কিন্তু তিনি যেন গোল করতেই ভুলে গিয়েছেন।
একই রোগে আক্রান্ত ছিলেন মনবীর সিংও। তিনি নিজেকে কিছুটা হলেও শুধরেছেন। গোল করতে না পারুন, গোলে সাহায্য করছেন। পরপর দু’টি ম্যাচে যে ভাবে ব্যাকহিল করে গোল করিয়েছেন, তার প্রশংসা করতেই হবে। কিন্তু লিগ শেষ হতে চলল, লিস্টন কোলাসো কিছুতেই নিজেকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসতে পারছেন না।
এ ছাড়া সবুজ-মেরুন শিবিরের অ্যাওয়ে রেকর্ড এ বার বেশ খারাপ। প্রতিপক্ষের পাড়ায় গিয়ে দশটি ম্যাচের মধ্যে তারা জিতেছে মাত্র তিনটিতে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে তাদের হারিয়ে আসার পর কলকাতার বাইরে আর কোনও অ্যাওয়ে ম্যাচ জিততে পারেননি বৌমাসরা। আবার হায়দরাবাদ এ বার তাদের ঘরের মাঠে মাত্র দু’টি ম্যাচ হেরেছে। কলকাতার বাইরে গিয়ে এটিকে মোহনবাগানের সাফল্যের হার যখন এ রকম এবং ঘরের মাঠে হায়দরাবাদ যখন এতটাই অপ্রতিরোধ্য, তখন বৃহস্পতিবার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের হারানোটা মোটেও সহজ কাজ হবে না।
পরিসংখ্যান যা বলছে
হায়দরাবাদের সেটপিস মুভমেন্ট নিয়ে যথেষ্ট সাবধান থাকতে হবে এটিকে মোহনবাগানকে। এখনও পর্যন্ত ১৬টি গোল তারা করেছে সেটপিস থেকে। এর মধ্যে সাতটি গোল তারা করেছে কর্নার কিক থেকে। থ্রো ইন থেকেও তিন গোল করেছে তারা। এটিকে মোহনবাগান সেটপিস থেকে মাত্র সাতটি গোল করেছে। সবচেয়ে কম সেটপিসে গোল করা দলের তালিকায় তারা তিন নম্বরে।
সবুজ-মেরুন বাহিনী বরং কাউন্টার অ্যাটাকে বেশি বিপজ্জনক। তাদের প্রতি আক্রমণ সামলানোর জন্য বিশেষ তৎপরতা দেখাতে হবে হায়দরাবাদকে। এই মরশুমে মোট গোলের অর্ধেক, অর্থাৎ ১৩টি গোল পেত্রাতোসরা করেছেন প্রতি আক্রমণ থেকে। একমাত্র চেন্নাইয়িন এফসি (১৫) কাউন্টার অ্যাটাক থেকে তাদের চেয়ে বেশি গোল করেছে। এটিক মোহনবাগানের এই ১৩টি গোলের মধ্যে দশটির সঙ্গেই যুক্ত আছেন পেত্রাতোস। সাতটি তিনি নিজে গোল করেছেন ও তিনটিতে অ্যাসিস্ট করেছেন। হুগো বুমৌস সাতটি কাউন্টার গোলের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনটি করেছেন ও চারটি করিয়েছেন।
দুই দলেরই রক্ষণ দুর্ভেদ্য। এ পর্যন্ত দুই দলই দশটি করে ম্যাচে কোনও গোল খায়নি। কোনও দল যদি আর একটি ম্যাচে ক্লিন শিট রাখতে পারে, তা হলে তারা ২০১৯-২০-তে বেঙ্গালুরুর ১১টি ক্লিন শিটের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবে। এ বারের লিগে সবচেয়ে কম গোলও খেয়েছে এই দুই দলই। এটিকে মোহনবাগান ১৭ ও হায়দরাবাদ ১৬টি গোল করেছেন। তাদের গোলে সবচেয়ে কম শটের তালিকাতেও সবার উপরে রয়েছে।
এটিকে মোহনবাগানের ভারতীয় ফুটবলাররা এ বার সব মিলিয়ে পাঁচটি গোল করেছেন, যা অন্য যে কোনও দলের ভারতীয়দের চেয়ে সবচেয়ে কম। হায়দরাবাদের ভারতীয় ফুটবলাররা এ বার সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করেছেন। মোট ১৫টি গোল করিয়েছেন তাঁরা, যা অন্য সব দলের ভারতীয়দের চেয়ে বেশি।
এটিকে মোহনবাগানের গোলকিপার বিশাল কাইথ এ বার দশটি ম্যাচে ক্লিন শিট রাখতে পেরেছেন। যা এ বারের লিগে সর্বোচ্চ। আর একটি ম্যাচে তিনি ক্লিন শিট রাখতে পারলে ২০১৯-২০ মরশুমে গুরপ্রীত সিং সান্ধুর ১১টি ক্লিন শিটের রেকর্ড স্পর্শ করবেন এবং এটিকে মোহনবাগানের গোলকিপারদের মধ্যেও সর্বোচ্চ ক্লিনশিটের মালিক হবেন। বিশাল সেই চার গোলকিপারের একজন, যারা লিগের একই মরশুমে দশ বা তার বেশি ক্লিন শিট রাখতে পেরেছেন। গত ম্যাচে মাথায় চোট পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে ক্লাব সূত্রের খবর, তিনি বৃহস্পতিবার খেলবেন।
বার্থোলোমিউ ওগবেচে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি, ন’টি ম্যাচে পাঁচ গোল করেছেন। দুই দলের মধ্যে শেষ ম্যাচেও ৮৬ মিনিটে করা তাঁর গোলেই জেতে হায়দরাবাদ। আইএসএলে আর কোনও ফুটবলারের এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এত গোল নেই। তবে প্লে অফে তাঁর রেকর্ড তেমন ভাল নয়। সাতটি প্লে-অফ ম্যাচে তিনি একটি মাত্র গোল করেছেন। গত মরশুমের সেমিফাইনালে। তবে প্লে অফে তাঁর দুটি অ্যাসিস্ট আছে। ২০২০-২১-এর ফাইনালে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে মুম্বই সিটি এফসি-র হয়ে নেমে একটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ নাইজেরিয়ার এই ফুটবলার সবুজ-মেরুন শিবিরের সবচেয়ে বড় ‘খলনায়ক’।
দ্বৈরথের ইতিহাস
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট আট বার। তার মধ্যে তিনটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। তিন বার জেতে এটিকে মোহনবাগান এবং দু’টি ম্যাচে হায়দরাবাদ এফসি। এ বারের লিগে প্রথমে জেতে এটিকে মোহনবাগান, পরে তার বদলা নিয়ে নেয় হায়দরাবাদ এফসি। দুই ম্যাচেই ফল হয় ১-০। দুই দলের ম্যাচে এখনও পর্যন্ত মোট ২০টি গোল হয়েছে। দশটি করে গোল করেছে দুই দলই। এ বার প্রথম লিগে ১১ মিনিটের মাথায় হুগো বৌমাসের গোলে জেতে এটিকে মোহনবাগান। গত মাসে ওগবেচের গোলে যেতে হায়দরাবাদ এফসি।
For all the latest Sports News Click Here