ISL 2021-22: তারুণ্যের উচ্ছ্বাস থেকে ওগবেচে জাদু, হায়দরাবাদের সাফল্যের পাঁচ রহস্য
২০১৯-২০ সালে লিগ তালিকায় একেবারে সবার নীচে শেষ করার দুই মরশুম পরেই, রবিবার (২০ মার্চ) আইএসএলের ফাইনালে মাঠে নামতে চলেছে হায়দরাবাদ এফসি। এই অল্প সময়ের মধ্য়েই একটা দলের এই আমূল পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং অবশ্যই আরও একাধিক কারণ।
মরশুমের বেশিরভাগ সময়টাই লিগ তালিকার শীর্ষে কাটালেও শিল্ড জয় সম্ভব হয়নি। তবে প্রথমবার সেমিফাইনালে পৌঁছেই হেভিওয়েট এটিকে মোহনবাগানকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে স্বপ্নের খেতাব জয় থেকে আর মাত্র একধাপ দূরে দাঁড়িয়ে ম্যানুয়েল মার্কেজের দল। নিজামদের এই সাফল্যের পিছনের কারণগুলি একটু খতিয়ে দেখা যাক।
ভারতীয় তারুণ্য আস্থা জ্ঞাপন:-
বিগত দুই মরশুমেও হায়দরাবাদ এফসি ভারতীয় তরুণ ফুটবলারদের ওপর নিজেদের আস্থা দেখিয়েছিল। তাই এ মরশুম থেকে যখন ম্যাচে বিদেশির সংখ্যা পাঁচ থেকে কমিয়ে চারে আনা হয়, তখন তা হায়দরাবাদের জন্য কিন্তু তরুণদের চ্যালেঞ্জের সামনে এগিয়ে দেওয়ার বাড়তি লাইসেন্সই ছিল বলে ধরে নেওয়া যায়। আশিস রাই, আকাশ মিশ্র, চিঙলেনসানাসিং,হিতেশ শর্মা, অনিকেত যাদবরা এই মরশুমেও নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। ভারতীয় দলে গাদাখানেক হায়দরাবাদ তারকার উপস্থিতিই এই দলে তরুণদের পারফরম্যান্সের পরিচয়বাহক।
তুখর ট্রান্সফার পরিকল্পনা:-
এটিকে মোহনবাগানের মতো তারকাদের সম্ভার হয়তো হায়দরাবাদ দলে নেই। তবে হায়দরাবাদের ট্রান্সফার পরিকল্পনা, মতান্তরে লিগের সেরা। ভারতীয় তারুণ্যের সঙ্গে দলে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রয়োজন অভিজ্ঞতা। হায়দরাবাদ অতি ভেবেচিন্তে বিদেশি অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের দলে নিয়েছে। শুধু বড় নাম নয়, আইএসএলের অভিজ্ঞতা থাকা তারকাদের পিছনে ছুটেছে তারা।
হুয়ানান এর আগেই বেঙ্গালুরু এফসির সঙ্গে আইএসএল জিতেছেন, এটিকের সঙ্গে একই কৃতিত্ব রয়েছে এডু গার্সিয়ার। খাসা কামারা গত মরশুমে নর্থইস্ট ইউনাইটেড দলের সাফল্যের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন। আর মুম্বই সিটি এফসির সঙ্গে লিগ তথা শিল্ড জয়ী বার্থোলোমিউওগবেচের বিষয়ে আলাদা করে খুব বেশি বলার প্রয়োজন হয় না।
ওগবেচে জাদু:-
এই মরশুমটা ওগবেচের কাছে এখনও অবধি ব্যক্তিগতভাবে সবথেকে সফল মরশুম। ইতিমধ্যেই এক মরশুমে আইএসএল রেকর্ড ১৮টি গোল করে ফেলেছেন তিনি। আইএসএলের গোল্ডেন বুটটা তাঁরই ঘরে আসছে নিশ্চিত। যে দলের গড় বয়স ২৪, সেই দলে ৩৭ বছরের ওগবেচের ফর্ম একেবারে চমকপ্রদ। যে কোনও পরিস্থিতিতে, যে কোনও পরিকল্পনায় বল হোল্ড করা থেকে শুরু করে সূক্ষ্ম টাচে অ্যাসিস্ট প্রদান করা, গোলের পাশপাশি হায়দরাবাদের ফরোয়ার্ড লাইন পুরোটাই ওগবেচেময়।
গ্রুপ পর্বে দাপট:-
প্রথম ম্যাচে চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে ০-১ পরাজয়ের পর মনে হয়েছিল হয়তো, এ মরশুমেও হায়দরাবাদের ভাল কিছু করা চাপ আছে। তবে তারপরেই নাগাড়ে আট অপরাজিত ম্যাচের দৌড়। ফেভারিট মুম্বই সিটিকে ৩-১ হারানো, নর্থইস্টকে ৫-১ উড়িয়ে দেওয়া সবই ছিল এই দৌড়ের অন্তর্গত। তবে একেবারে লিগ পর্বের শেষে এসে ক্যাম্পে করোনার প্রকোপে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে তারকাহীন এক দল মাঠে নামাতে বাধ্য হয় নিজামদের শহর। সেই ম্যাচে ৩-০ পরাজয়ই গ্রুপ পর্বে শীর্ষ শেষ করার আশা চূর্ণ করে। তবে শেষ ম্যাচে মুম্বইকে ২-১ হারিয়ে টেবলে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করে মার্কেজের দল।
প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা:-
আইএসএল হোক আইলিগ, কোনও ভারতীয় ক্লাবই এক কোচ বা এক খেলোয়াড়দের গ্রুপ নিয়ে বেশিদিন তো দূর, দুই মরশুমও টিকে থাকে না। এটিকে মোহনবাগানের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা একটু চোখে পড়ে অবশ্য, তাই তাদের সাফল্যও চোখে পড়ার মতো। যে কোনও ক্ষেত্রে সাফল্যে পেতে গেলে দরকার ধৈর্য এবং আস্থা। বেশিরভাগ ভারতীয় ক্লাব যেখানে সেটা দেখায় না, হায়দরাবাদ কিন্তু সেটা করে দেখিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে তার সুফল প্রমাণ করে দিয়েছে।
মার্কেজ প্রথম মরশুমে পঞ্চমে শেষ করার পরেও তাঁর ওপর আস্থা রেখেছিল হায়দরাবাদ। তুখরভাবে ভারতীয় তরুণদের তৈরি করা থেকে পরিকল্পনায় রদবদল, বিদেশিদের সামলানো, হায়দরাবাদের স্প্যানিশ কোচ সবটাই করে দেখিয়েছে। সুতরাং, এই সাফল্যের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব কিন্তু তারই পাওনা।
তবে কথায় আছে, ‘সব ভাল, যার শেষ ভাল।’ এটাই এখন হায়দরাবাদের লক্ষ্য। রবিবার ফতোরদায় তাই প্রথমবার আইএসএল খেতাব জয়ের লক্ষ্যে নামছে হায়দরাবাদ এফসি।
For all the latest Sports News Click Here