IND vs WI: বিহার থেকে বাংলা, সেখান থেকে জাতীয় দল- লড়াই সহজ ছিল না মুকেশের
বিহারের গোপালগঞ্জে পৈতৃক বাড়ি। সেখান থেকে রুজিরুটির টানে কাশীনাথ সিং এসেছিলেন কলকাতায়। এই শহরে এসে ট্যাক্সি চালানো শুরু করেন কাশীনাথ। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফোরায় দশা! ভেবেছিলেন, ছেলেকেও কোনও একটা কাজে লাগিয়ে দেবেন। কিন্তু ছেলেকে তখন হাতছানি দিচ্ছে ক্রিকেট। ২২ গজের হাতছানিকে ভাগ্যিস উপেক্ষা করতে পারেননি কাশীনাথের ছেলে। এখন সেই ছেলেই ঘরোয়া ক্রিকেটে রাজ করছেন। আর সেই সুবাদেই খুলে গিয়েছে জাতীয় দলের দরজা। শুধু টিমে সুযোগ পাওয়া নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে একেবারে জায়গা করে নিয়েছেন মুকেশ কুমার।
কলকাতায় এসে মুকেশের লড়াই
মুকেশ কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে বিহারের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে সংসারের প্রয়োজনেই ২০১২ সাল বিহার থেকে বাবাকে সাহায্য করতে কলকাতায় আসেন মুকেশ। তখনও তাঁর চোখে ছিল ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন। কলকাতায় এসে মুকেশের নতুন লড়াই শুরু হয়।
তবে ক্যারিয়ারের প্রাথমিক বছরগুলিতে প্রচুর লড়াই করতে হয়েছিল মুকেশকে। একটা সময়ে তো মুকেশ অপুষ্টিতেও ভুগছিলেন। কারণ তাঁর সঠিক ডায়েট মানা হত না। আসলে ডায়েট মেনে খাবারের ব্যবস্থা করা, তাঁর বাবার কাছে কঠিন ছিল। তিনি তাঁর চার মেয়ের মধ্যে তিনটি বিয়ে দিয়েই আর্থিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।
আরও পড়ুন: একজন বাদে টেস্টে সবাই করেছেন হাজারের বেশি, ইংল্যান্ড দল গড়ল ইতিহাস
সৌরভের সাহায্য
রণদেব বসু সেই সময়ে বাংলার বোলিং কোচ ছিলেন। তিনি তৎকালীন সিএবি সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে মুকেশকে নিয়ে আলাদা করে কথা বলেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে ইডেন গার্ডেনে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর খাবারেরও যত্ন নেওয়া হয়েছিল।
‘ভিশন ২০২০’ প্রজেক্ট
শিবপুর ক্লাবের হয়ে তখন খেলছেন ডানহাতি মিডিয়াম পেসার। সেই সময়ে ২০১৪ সালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ভবিষ্যতের ক্রিকেটার তুলে আনতে ‘ভিশন ২০২০’ শিবির চালু করছিল সিএবি। ক্লাব কর্তা রবি মিত্র এবং কোচ বীরেন্দ্র সিং মুকেশের নাম ভিশনের শিবিরে পাঠান। সেখানে প্রথমে ওয়াকার ইউনিস এবং পরে টি এ শেখরের তত্ত্বাবধানে প্র্যাক্টিস করেন। তার পরেই মুকেশের জন্য খুলে যায় বাংলা টিমের দরজা।
আরও পড়ুন: ‘ইসলাম মেনে জীবনযাপন’ করতে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই অবসর নিলেন লম্বা ছক্কা হাঁকানো পাক তরুণী
বাংলার হয়ে সাফল্য
গত তিন মরশুমে বাংলাকে দু’বার রঞ্জি ফাইনালে তোলার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন মুকেশ। ৩৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৪৯ উইকেট রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। আইপিএলে তাঁকে রেকর্ড অর্থে কিনেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। সাড়ে পাঁচ কোটি টাকায়। বাংলা থেকে কোনও ক্রিকেটার কোনও দিন আইপিএলে এত দর পাননি। তবে বল হাতে খুব একটা ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি আইপিএলে। দিল্লিও প্লে অফের আগেই ছিটকে গিয়েছিল।
ঘরোয়া পারফরম্যান্সের হাত ধরে খোলে জাতীয় দলের দরজা
বাংলা দলের হয়ে ধারাবাহিক ভাবে পারফরম্যান্স করতে শুরু করেন মুকেশ। আর তাঁর ঘরোয়া ক্রিকেটে দুরন্ত পারফরম্যান্সই জাতীয় দলের দরজা খুলে দেয় মুকেশের জন্য। বাংলাদেশ এ দলের বিরুদ্ধে টেস্টে ভারত এ দলের হয়ে দুরন্ত বোলিং করেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার অবসান হয়। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে জায়গা করে নেয় মুকেশ।
For all the latest Sports News Click Here