FIFA WC: মেসি-ম্যাজিক আর টিমগেম- দুইয়ের যুগলবন্দিতে স্বপ্ন সাজাচ্ছে আর্জেন্তিনা
লিওনেল মেসিকে আটকানোর ছক কষবে প্রতিপক্ষ। এটা ভালো করেই জানে আর্জেন্তিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। তাই তিনি প্ল্যান-বি, সি- সব তৈরি রাখেন। এবং পুরো টিমের মানসিকতা এমন ভাবে তৈরি করেছেন, যাতে মেসি নির্ভর না হয় তাঁর টিম। আর্জেন্তিনা সে ভাবেই কিন্তু টিম গেম খেলে চলেছে। মেসি না পারলেও, ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন কোনও না কোনও ফুটবলার। শুক্রবারই যেমন মাঝরাতে ত্রাতা হয়ে গেলেন এনিলিয়ানো মার্টিনেজ।
আর্জেন্তিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে ছিল পরতে পরতে নাটক। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকে। প্রথমে আর্জেন্তিনা বিরতির আগে ১-০ করে। দ্বিতীয়ার্ধে তারা ব্যবধান বাড়ায়। ম্যাচের ৮০ মিনিটের বেশি সময় হয়ে যাওয়ার মনে হচ্ছিল, সহজেই সেমিতে উঠবে আর্জেন্তিনা। কিন্তু আসল চমক তো ছিল এর পর।
৮৩ মিনিটে ১-২ করে নেদারল্যান্ডস। সেখানে থেকে ম্যাচ শেষ হওয়ার ১০ সেকেন্ড আগে ডাচেরা সমতা ফেরায়। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও হল না গোল। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হল ম্যাচের ফয়সালা। নেদারল্যান্ডসকে ৪-৩ ব্য়বধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে গেলেন মেসিরা।
আরও পড়ুন: চোখ ধাঁধানো গোল নেইমারের, ছুঁলেন পেলেকে,তবে বিদায় ব্যথায় সবই ম্লান
এ দিন মেসিকে আটকানোর সব রকম চেষ্টা করেছে ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু তাঁকে আটকে রাখা তো সহজ কাজ নয়। আর্জেন্তিনার প্রথম গোলটির আসল কারিগর তো মেসিই। জোনাল মার্কিং ভেঙে বার বার আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছিলেন মেসি। শেষ পর্যন্ত ৩৪ মিনিটে মেসি-ম্যাজিক। প্রায় ৩০ গজ দূরে বল ধরেন মেসি। ডাচ ডিফেন্ডারদের ডজ দিয়ে এগিয়ে যান তিনি। তার পর কোনাকুনি ভাবে মাপা শটে গোলের জন্য সুন্দর করে যেন প্লেটে মোলিনাকে বল সাজিয়ে দেন মেসি। বল ধরে আগুয়ান গোলরক্ষকের ডান দিক থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন মোলিনা।
আর্জেন্তিনা এগিয়ে যাওয়ায় খেলাতেই যেন প্রাণ সঞ্চার হয়। আর্জেন্তিনা আক্রমণের গতি বাড়ায়। নেদারল্যান্ডসও পাল্টা আক্রমণে উঠতে থাকে। ব্যবধান বাড়ানোর একটা হাফ চান্স এসেছিল মেসির সামনে। কিন্তু তাঁর ডান পায়ের শট গোলকিপার আটকে দেয়। এর পরেও ম্যাচের ৬২ মিনিটে গোল পেতে পারতেন মেসি। কিন্তু তাঁর ফ্রিকিক ক্রসপিস ঘেষে বেরিয়ে যায়।
তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি মেসিকে। ম্যাচের ৭৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে কাতার বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ গোল তুলে নেন মেসি। প্রসঙ্গত, ৭১ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে আকুনাকে ফাউল করেন ডেঞ্জিল ডামফ্রিস। পেনাল্টি পায় আর্জেন্তিনা। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফস্কালেও এ বার গোল করতে ভুল করেননি মেসি। গোলরক্ষকের বাঁ দিক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। ২-০ এগিয়ে যায় আর্জেন্তিনা।
আরও পড়ুন: মেসির মঞ্চে নায়ক মার্টিনেজ-ডাচেদের রুখে আর্জেন্তিনাকে তুললেন সেমিতে
তবে ম্যাচের এটি ছিল সবে কলির সন্ধ্যে। আসল খেলা বাকি ছিল এর পর। এখান থেকে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন করে নেদারল্যান্ডস। ৮৩ মিনিটে উইঘর্স্ট দুরন্ত হেডারে ব্যবধান কমান। এর পর ছিল আরও বড় চমক।
পেজেলা একটি আনাড়ি চ্যালেঞ্জ নিয়ে ডি-বক্সের ঠিক সামনেই ফাউল করে বসেন। যার জেরে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি-কিক পায় নেদারল্যান্ডস। খেলার একেবারে শেষ মুহূর্তে এই ফ্রি-কিকই বদলে দেয় ম্যাচের রং। সেই ফ্রিকিক থেকেই উইঘর্স্ট ম্যাচ শেষ হওয়ার ১০ সেকেন্ডে আগে গোল করে সমতা ফেরান। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। বাকি ত্রিশ মিনিটেও ম্যাচের ফল থাকে অমীমাংসিত। এরপর টাইব্রেকারেই হয় ম্যাচের ফয়সালা।
আর টাইব্রেকারে প্রথম দু’টি পেনাল্টি বাঁচিয়ে নায়ক হন আর্জেন্তিনার গোলকিপার মার্টিনেজ। তিনি নেদারল্যান্ডসের ভ্যান ডাইক এবং বর্গহউসের শট বাঁচান মার্টিনেস। আর সেখানেউ ম্যাচ হাতের বাইরে চলে যায় ডাচেদের। পরের তিনটি পেনাল্টিতে অবশ্য গোল করেন কুপমেইনার্স, উইঘর্স্ট, ডি জং। অন্য দিকে আর্জেন্তিনার হয়ে গোল করেন মেসি, পারেদস, মন্টিয়েল এবং লাউতারো মার্টিনেজ। একমাত্র বাইরে মারেন এনজো ফার্নান্দেজ। টাইব্রেকারে বাজিমাত করে সেমিতে পৌঁছে গেল আর্জেন্তিনা। শেষ চারের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্তিনা।
For all the latest Sports News Click Here