Chamok Hasan: অঙ্ক আর গান আমার কাছে আলাদা কিছু নয়, দু’টোই আনন্দ ছড়ানোর মাধ্যম! 

নতুন বছরের গোড়াতেই ‘এই মায়াবী চাঁদের রাতে’  মজেছে নেটিজেন। মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই এক মিলিয়ন ভিউ ছাড়িয়ে গিয়েছিল ‘বাবা বেবি ও’ ছবির এই গান। গানের সুরকার, সহকারী গীতিকার এবং গায়ক ওপার বাংলার চমক হাসান।  প্রেম, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, খুনসুটি সবটাই মিলে মিশে এই গান। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে একান্ত সাক্ষাৎকারে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা-র সঙ্গে আড্ডা মারলেন এই মুহূর্তে টলিপাড়ায় হইচই ফেলে দেওয়া বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় শিল্পী।

লতা মঙ্গেশকর-এর খবরটা শুনেছেন নিশ্চয়ই? 




জ্বী।খুবই দুঃখজনক। লতা মঙ্গেশকর তো শুধু ভারতবর্ষের নন, সারা পৃথিবীর সম্পদ। পৃথিবীর সীমানা পেরিয়ে তিনি অসীমে ঠাঁই নিলেন। তাঁর কণ্ঠ, তাঁর গান আরও বহুযুগ ধরে মুগ্ধ হয়ে মানুষ শুনবে। তিনি বেঁচে থাকবেন মানুষের অন্তরের মণিকোঠায়।

অঙ্ক ভালোবাসেন আবার দুরন্ত প্রেমের গান লেখেন। মনমাতানো সুর দেন। রহস্যটা কী?

জীবনের দুটো আলাদা পর্যায়ে এই দুই বিষয় নিয়ে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে।  বাবা-কাকারা সবাই একটু আধটু লেখালেখি করতেন, এখনও করেন।  তাই একেবারে ছেলেবেলার শখ ছিল সাহিত্য পড়ার, সাহিত্যিক হওয়ার।  কবিতা, ছন্দ, গানের প্রতি ভালোলাগা ছেলেবেলার। শৈশব-কৈশোরে আমার যেখানে বেড়ে ওঠা সেই কুষ্টিয়া শহরে দারুণ সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল। বাড়ির কাছেই ছিল লালনের আখড়া।আবার সেখান থেকে শিলাইদহে রবিঠাকুরের কুঠিবাড়িও বেশি দূরে নয়, তাঁদের গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি সবসময়।  সুর করার খেয়াল জাগে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে। বাংলা গান শুনে যখন বিস্ময়ে অভিভূত হতাম, মনে হতো, আরও ভালো করে গানকে উপভোগ করা যাবে- যদি নিজে সৃষ্টি করতে পারি। মূলত, বাংলার অসামান্য গানগুলো উপভোগ করার জন্যই নিজে সৃষ্টি করার চেষ্টা করতাম।     

পরে একটু একটু করে অঙ্কে ভালোলাগা তৈরি হয়।  অনেকেই গান আর অঙ্ক দুটোকে আলাদা জগত ভাবেন, কিন্তু আমার এ দুটোকে কখনই সাংঘর্ষিক লাগেনি।অঙ্ক আর গান, আমার কাছে খুব আলাদা কিছু নয়।  আমি সহজ আনন্দে বাঁচা মানুষ।  আনন্দ ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসি।  গান আর অঙ্ক দুটোই আমার কাছে সেই আনন্দ ছড়ানোর মাধ্যম।

আপনাকে নিয়ে ওপারের পাশাপাশি এবার এপার বাংলাতেও এত হইচই। তবু সযত্নে স্পটলাইট থেকে নিজেকে আড়ালে রাখেন। তাই আপনার বিষয়ে যদি কিছু বলেন…

আমার জন্ম বাংলাদেশের কুষ্টিয়াতে।  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিঙ্গে ব্যাচেলর্স করেছি। এরপর মাস্টার্স এবং পিএইচডি করেছি একই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলস-এর কাছে বোস্টন সায়েন্টিফিক করপোরেশন নামে একটি আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে R&D Engineer হিসাবে কর্মরত রয়েছি।সামাজিক মাধ্যমে আমার পরিচিতি দুটো ধারার কাজের জন্য।

আপনি তো আবার বইও লেখেন। পাঠকমহলে আপনার লেখা দারুণ জনপ্রিয়, যাকে বলে বেস্টসেলার! অবসর পান? পেলে কীভাবে কাটান?

 ২০১২ সাল থেকে গণিত ও বিজ্ঞানের আনন্দ নিয়ে ভিডিও বানাই এবং বই লিখি। এগুলো তরুণদীর মাঝে বেশ জনপ্রিয়।  এ যাবৎ প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭। আর অবশ্যই গান! শখের বশে গান বাঁধি। কখনও অন্যের লেখা, কখনও নিজের লেখায় সুর বসাই। অবসরে ঘোরাঘুরি করি, গান বানাই, অঙ্কের ধাঁধা মেলাই। 

আপনার পরিবার?

আমার স্ত্রী , সহমানুষ ফিরোজা বহ্নি। আমরা একই ব্যাচের। ২০০৬-এ এক বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গানের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে পরিচয়, তারপর তাঁকে ভালোবেসে ফেলি। সাড়ে চার বছর গোপনে পুষে রাখার পর মনের কথাটা জানাই ২০১০-এ। অনেক গল্পের পরে ওকে পেয়েছি, সেই পাওয়ার ভালোলাগার আবেশ থেকে বের হতে পারিনি আজও। তাই যতটা সময় ওর সঙ্গে পাই, সেটাকে মমতায় লালন করি। একসাথে স্মৃতি গড়ার খেলা খেলি। সেই খেলার অংশ আমাদের গান, ভ্রমণ, সংসার, সব। আমাদের দুই মেয়ে ৫ বছরের বর্ণমালা আর ৩ মাস বয়সী পরশমণি। পরিবারের সাহচর্য দারুণ উপভোগ করি, করোনাকালে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এর কল্যাণে আমার সুযোগ হয়েছে অনেকটা সময় একসঙ্গে থাকার। ফলে নতুন নতুন আইডিয়াগুলোকে বাস্তবায়ন করাটা সহজ হয়েছে। যদিও ব্যক্তি চমক হাসানের পরিচিতি আগেই ছিল- এই সময়ে পরিবারের অংশ হিসাবেও পরিচিতি বেড়েছে অনেক।

স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে চমক হাসান। (নিজস্ব ছবি)
স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে চমক হাসান। (নিজস্ব ছবি)

কোনওদিন কি ভেবেছিলেন ছবির জন্য গান‌ লিখবেন, গাইবেন, সুর দেবেন?

হ্যাঁ, সত্যিটা হচ্ছে আমি মনে মনে ভেবেছি ছবির জন্য গান লেখার কথা।  আমরা বন্ধুরা মিলে মনে মনেই চলচ্চিত্র বানাতাম, সেখানে আমাদের লেখা গান থাকত।! একদিন হয়তো সত্যি সত্যি কোথাও গাওয়া হবে, একটা ছোট্ট স্বপ্ন ছিল।  তবে এত দ্রুত সেই ভাবনা আলোর মুখ দেখবে এটা ভাবিনি। 

এই বসন্তে এপার বাংলায় আপনার ‘এই মায়াবী’ গানখানা প্রেমের সেরা অলিখিত অ্যান্থেম। জানতে ইচ্ছে করে, ভালোবাসার সংজ্ঞা আপনার কাছে ঠিক কী?

ধন্যবাদ, আপনার প্রশংসার জন্য (হাসি)।  আমার কাছে ভালোবাসা হলো বহুতল-ওয়ালা একটা প্লেটোনিক ঘনবস্তু।  অনেকগুলো উপাদানের একটা প্রতিসম অবস্থা! প্রিয়জনের জন্য মুগ্ধতা, শ্রদ্ধা, তার আনন্দ-দুঃখের ভাগীদার হওয়ার ইচ্ছে, তার সত্তায় বিলীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা- এমন বহু উপাদান সেখানে আছে।

কীভাবে ‘বাবা বেবি ও ‘ এর সুযোগটা এল?

আমি আর আমার স্ত্রী বহ্নি মিলে ২০২০ এর জানুয়ারিতে একটা গান বেঁধেছিলাম খাবার টেবিলে বসে।  সেই গানটা সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করলে খুব জনপ্রিয়তা পায়।  গানটি ছিল ‘এই মায়াবী চাঁদের রাতে’। এরপর আরেকটি লাইভ অনুষ্ঠানে গানটি গাওয়ার সময় আমাদের কন্যা বর্ণমালাও যোগ দেয় সেখানে। ওটাও বেশ ভাইরাল হয়, সেই গানটি দেখেন ‘বাবা বেবি ও’ ছবির লেখিকা জিনিয়া সেন।  তার অনুরোধে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন লস এঞ্জেলস এ থাকা তার এক বন্ধু ‘বাবলি চক্রবর্তীর’ মাধ্যমে। ওনার মতো এত বড় মাপের একজন পরিচালকের ফোন পেয়ে আমি অভিভূত হয়ে যাই।  উনি খুব সম্মান এবং আন্তরিকতার সঙ্গে আমাকে আমন্ত্রণ জানান একসঙ্গে কাজ করার।  এভাবেই সুযোগটা আসে। 

লস এঞ্জেলেসে থাকেন। আপনার সৃষ্টি আপনার কাছে সন্তানসম। রেকর্ডিংয়ে না থাকার আক্ষেপ আছে? উপস্থিত থাকলে ব্যাপারটা কী আরও অন্যরকম হতো?

হ্যাঁ, অবশ্যই আক্ষেপ আছে।  গান নিয়ে যে অখুশি ব্যাপারটা মোটেও অমন নয়, আমি উচ্ছ্বসিত- শেষ পর্যন্ত যা পেয়েছি সেটা নিয়ে।  তবে আমার গান যেখানে তৈরি হচ্ছে, সুর-সংগীত-বাদ্যে সজ্জিত হচ্ছে সেই প্রক্রিয়াটা সামনে থেকে দেখতে না পারার আক্ষেপ আছে।  উপস্থিত থাকলে কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন আসতো নিশ্চয়ই। 

সব মিলিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা হল? ভবিষ্যতে বাংলা ছবিতে গান গাওয়া, লেখার প্রস্তাব পেলে সাড়া দেবেন?

অভিজ্ঞতা অসাধারণ।  অনেক অনেক কিছু শিখেছি। একটা চলচ্চিত্রের গান কী করে তৈরি হয়? কেমন গান মানুষ পছন্দ করে, এমন অনেক কিছু শিখেছি। পরিচালক অরিত্রদা, উইন্ডোজের সহকর্মীরা সবাই দারুণভাবে সাহায্য করেছে। খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যেটাকে সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে মনে করি।

 এপার বাংলার গান শোনা হয়? প্রিয় গায়ক…প্রিয় গান? কোনও ভাগ করে নেওয়ার মতো স্মৃতি? আধুনিক বাংলা গান সমন্ধে কী ভাবছেন?

হ্যাঁ, গান শোনা হয়। অনেকের গানই ভালো লাগে।  অনুপম রায় দারুণ প্রিয়।  পুরনোদের ভেতরে অঞ্জন-সুমন-নচিকেতা ওঁদের গান এখনও নিয়মিত শুনি। 

 পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা দেখার সুযোগ হয়? এর আগে যিশুর কোনও ছবি দেখেছেন? 

সত্যি বলতে সিনেমা দেখার সময়ই এখন কম পাই।  তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর কারণে দেখার সুযোগ বেড়েছে। যিশু সেনগুপ্তের ‘পোস্ত’ ছবিটা দেখেছি। তাঁর অভিনয় ভালো লেগেছে, দারুণ সাবলীল তিনি। 

এই গান দারুণভাবে গৃহীত হওয়ার পর যিশুর তরফে কোনও বার্তা এসে পৌঁছেছে আপনার কাছে?

 যিশু সেনগুপ্ত আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, ধন্যবাদ জানিয়েছেন গানটির জন্য।  আমি পরে জানতে পারি যে, জিনিয়া সেন এই গানটি শোনার পরেই প্রেমের ছবি লেখার অনুপ্রেরণা পান।  যেহেতু এই গানটি দিয়েই ছবির ভাবনা শুরু, যিশু বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে মজার ছলে বলেছেন আমাকে কারণ গানটা নাহলে নাকি ছবিতে তাঁর কাজই করা হতো না।   

হালকা চালের গান, মজার গান লিখতে পছন্দ করেন। সেগুলো কী শুধুই মজার না তার মধ্যে লুকনো কোনও বার্তা থাকে কথার মধ্যে?

গানগুলোর ক্ষেত্রে আনন্দটাই মুখ্য।  জ্ঞান দেওয়ার জন্য আমার গণিতের চ্যানেল আছে।  তবে আমরা মানুষ তো, না চাইলেও জীবন দর্শনের ছায়া গানের ভেতরে কোনও না কোনওভাবে পড়েই যাবে।  কেউ আমাদের মজার ছলে বানানো ‘মায়াবী চাঁদের রাতে’ ‘পরিপাটি সংসার’ গান দেখে একটা সহজ, সুন্দর জীবনের মন্ত্র খুঁজে পেতেই পারেন। 

বলতে চাইছি, সুকুমারের কবিতা বা সত্যজিৎ রায়ের গুপি গাইন বাঘা বাইন আপাতদৃষ্টিতে মজার মনে হলেও তার পরতে পরতে নানান বার্তা থাকে যা ধাক্কা খাওয়ার মতো। সেরকম কিছু চিন্তাভাবনা করেছেন বা করছেন?

‘ফেসবুক সংগীত’ নামে একটা রম্য-গান করেছিলাম, সেখানে ভাবার মতো বিষয় ছিল।  তবে আগে যেটা বলেছি- আনন্দটাই এসব ক্ষেত্রে মুখ্য।

এতদিন নিজের লেখা কথায়, নিজের সুরে গেয়ে এসেছেন। এবার ছবিতে গাওয়ার সুবাদে অন্যদের মতামত নিতে হয়েছে। সুবিধা, অসুবিধে দু’টোই রয়েছে নিশ্চয়ই?

অবশ্যই সুবিধা অসুবিধা দু’টোই আছে। মূল সুবিধা হলো নিজেকে চ্যালেঞ্জ করা যায়, যেটা আত্মোন্নয়নের জন্য খুব দরকারী।  ধরা যাক, একটা গান করলাম, সেটা পরিচালকের পছন্দ হল না।  এটা মানসিকভাবে বেশ চাপ তৈরি করে।  কিন্তু সেটা থেকে যতটা শেখা যায়, একটা গান সরাসরি গৃহীত হয়ে গেলে অতটা শেখা যায় না।  অসুবিধা হলো অনেক বেশি সময় দিতে হয়। 

ভবিষ্যতে কবে আবার শুনতে পাব বাংলা ছবিতে আপনার গান? কোনও নয়া প্রস্তাব এসেছে কিংবা ‌কথাবর্তা হয়েছে? 

হ্যাঁ, উইন্ডোজের সঙ্গেই প্রাথমিক কথাবার্তা চলছে।  তবে কোনও কিছু এখনও চূড়ান্ত হয়নি।।  আশা রাখি, এ বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরে আবার গান শুনতে পাবেন। 

পশ্চিমবঙ্গে আপনার অসংখ্য ফ্যানেদের জন্য কোনও বার্তা?

সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই।  এতটা ভালোবাসা নিয়ে আপনারা আমাকে, আমার গানকে বরণ করে নেবেন, সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল।  আপনাদের সবার জীবন সহজ, সুন্দর হোক।  শুভকামনা রইল।

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.