Bappi Lahiri: বাপ্পিদা-র সুর থেমে গেল ৬৯ বছরেই!ফিরে দেখা ‘ডিস্কো কিং’-এর কেরিয়ার
বয়স তখন সবে ৩। মঞ্চে তবলা বাজাতে শুরু করে ছোট্ট অলোকেশ লাহিড়ি, সেই ছোট ছেলেটাই একদিন হয়ে উঠে ভারতের ‘ভারতের ডিস্কো কিং’। যাঁকে সবাই এক ডাকে চেনেন ‘বাপ্পি লাহিড়ি’ নামে।
১৯৫২ সালের ১৭শে নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্ম বাপ্পি লাহিড়ির। ছোটথেকেই সুরের জগতের মানুষ ছিলেন বাপ্পিদা, তাঁর বাবা অপরেশ লাহিড়ি ছিলেন বাংলা সংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক। মা বাঁশরী লাহিড়ি ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী। বাপ্পি লাহিড়ি শুধু একজন সংগীত পরিচালকই ছিলেন না, প্লে-ব্যাকও করেছেন সমানতালে। পিতা-মাতার সান্নিধ্যেই তাঁর সঙ্গীতে হাতে খড়ি। তিনি বাংলার গর্ব, বাঙালির গর্ব। ১৯ বছর বয়সে দাদু (১৯৭২) নামক বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন শিল্পী।
গানের জগতের সফরটা বাংলা ছবির সঙ্গে শুরু করলেও খুব দ্রুতই মুম্বইয়ে পাড়ি দেন তিনি। তাঁর স্বপ্ন ছিল মামার (কিশোর কুমার) মতো বলিউডে রাজ করবেন। বলিউডে তাঁর প্রথম কাজ ছিল ‘নানহা শিকারি’ (১৯৭৩), এই ছবির গীতিকারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পরিচালক তাহির হুসনের ‘জখমি’ ছবিতে গান লেখবার পাশাপাশি গেয়েওছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি।
আশির দশকের বলিউডে উল্কা গতিতে তাঁর উত্থান। পরপর হিন্দি ছবিতে কম্পোজ করা সুর থেকে তাঁর গানে বুঁদ হয়েছিল আসমুদ্রহিমাচল। মিঠুন চক্রবর্তীর ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবির মিউজিক কম্পোজ করে রাতারাতি সুপারস্টারে পরিণত হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। তাঁর জনপ্রিয়তা ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিদেশে। এরপর থেকেই ডিস্কো কিং’ নামে পরিচিতি লাভ করেন এই বাঙালি গায়ক।
ডিস্কো মিউজিকের ব্যবহার তাঁর মতো আগে কেউ কোনওদিন করেনি ভারতীয় সিনেমায়। কিশোর কুমার, আশা ভোঁসলে থেকে ঊষা উত্থুপ, রথী-মহারথীদের সঙ্গে কাজ করেছেন বাপ্পি লাহিড়ি। সুরক্ষা, ওয়ারদাত, চলতে চলতে, কমাণ্ডো, ইলজাম, ডিস্কো ড্যান্সার, ড্যান্স ড্যান্স, ফিল্ম হি ফিল্ম, সাহেব, টারজান, কসম পয়দা করনে ওয়ালে কি, ‘নমক হালাল’-অজস্র ছবির সুপারহিট গানের স্রষ্টা তিনি। ‘শরাবী’ ছবির গান কম্পোজ করে ফিল্মফেয়ারের মঞ্চে সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার এসেছিল তাঁর ঝুলিতে।
শুধু সংগীত পরিচালনা নয়, গায়ক বাপ্পি লাহিড়িও কম জনপ্রিয় ছিলেন না। তাঁর হিন্দি উচ্চারণে বাংলা টান ছিল স্পষ্ট, সেই বাঙালিয়ানা আজীবন কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। বা বলা যায় সেই বাংলা টান কাটানোর চেষ্টা ছিল না তাঁর। সেই নিয়েই বোম্বাই সে আয়া মেরা দোস্ত (আপ কি খাতির) থেকে বোম্বাই নাগারিয়া (ট্যাক্সি নং ৯২১১) বা হু লা লা (ডার্টি পিকচার)- সবতেই অপ্রতিরোধ্যা বাপ্পি লাহিড়ি।
শুধুমাত্র ডিস্কো সঙ্গীতের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেননি বাপ্পী লাহিড়ি। বেশ কিছু গজল গানও রচনা করেছেন তিনি। কিসি নজর কো তেরা ইন্তেজার আজ ভি হ্যায় (এইতবার), আওয়াজ দি হিয়া (এইতবার) তার মধ্যে অন্যতম।
শুধু বাপ্পিদার গান নয়, তাঁর ফ্যাশন স্টেটমেন্ট বরাবর ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সোনার প্রতি তাঁর প্রেম কারুর অজানা নয়। তাঁর মুখের হাসিটাও কম জনপ্রিয় ছিল না, সবসময় ঠোঁটের কোণে লেগে থাকত সেই হাসি। আজ সকলকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে পারি দিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। রেখে গেলেন তাঁর দুই সন্তান বাপ্পা ও রিমা লাহিড়ি-কে। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। তবে নিজের সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আজীবন ভারতীয়দের মনে রাজ করবেন বাপ্পিদা।
For all the latest entertainment News Click Here