খারাপ রক্ষণ, আত্মতুষ্টি- চোকার্স তকমা নিয়েই বিদায় কেনদের, জিতল ফরাসিদের আগ্রাসন

একরাশ হতাশা নিয়ে ধীরে ধীরে মাঠ ছাড়ছিলেন হ্যারি কেন। চোখে-মুখে তীব্র যন্ত্রণার ছাপ। পাশে মাঠের মধ্যেই উচ্ছ্বাসে ভাসছে ফ্রান্স। তাতে যেন বুকের ভিতরটা আরও বেশি হুহু করে উঠছে ব্রিটিশ অধিনায়কের। যাঁকে ঘিরে ইংল্যান্ড স্বপ্ন দেখেছিল বিশ্ব জয়ের, সেই ব্রিটিশ অধিনায়কই শনিবার ভিলেন হয়ে গেলেন গোটা দেশের কাছে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কেনের পেনাল্টি মিসই যেন সব হিসেব ওলটপালট করে দিল। তবে যত দোষ, সবটাই কি একা হ্যারি কেনের?

একেবারেই নয়। এ দিন ইংল্যান্ড আহামরি কিছু খেলতে পারেনি। সেই প্রত্যাশাটাই তারা পূরণ করতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি ডুবিয়েছে ডিফেন্ডাররা। ব্রিটিশ ডিফেন্ডারদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই কিন্তু ফ্রান্স একের পর এক আক্রমণ করে গিয়েছে। যেখান থেকে ২টি গোলও হয়েছে। তিনকাঠির তলার পিকফোর্ডের মতো অভিজ্ঞ কিপার না থাকলে, ব্যবধান আরও বাড়তে পারত। সেই সঙ্গে বাড়ত ব্রিটিশদের লজ্জাও। সেই যাত্রায় অন্তত বাঁচিয়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ গোলকিপার। যে দু’টি গোল খেয়েছেন পিকফোর্ড, কিছু করার ছিল না। ডিফেন্ডারদের ভুলেই কিন্তু গোল ২টি হজম করতে হয় ইংল্যান্ডকে।

আরও পড়ুন: মরক্কো বনাম ফ্রান্স,মেসিরা মুখোমুখি মদ্রিচদের- সেমিতে কবে, কখন ম্যাচ- জানুন সূচি

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা বরং মাটি কামড়ে লড়াই করে গিয়েছেন। আগ্রাসন দেখিয়েছেন ফরাসি তারকারা। তাঁদের মুহুর্মুহু আক্রমণে কেঁপে গিয়েছে ইংল্যান্ডের ডিফেন্স। ফ্রান্স যে সেমিফাইনালে ওঠার খিদে নিয়ে মাঠে নেমেছে, সেটা বোঝা যাচ্ছিল তাদের মরিয়া ভাবে। ইংল্যান্ডের মধ্যে সেই এক্স ফ্যাক্টরটাই কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে অন্তত খুঁজে পাওয়া যায়নি। যার নিট ফল, ১-২ ম্যাচ হেরে ছিটকে গিয়েছে ইংল্যান্ড। আর হাসতে হাসতে সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের দুই গোলদাতা চৌমেনি এবং অলিভিয়ের জিরু। আর ব্রিটিশ অধিনায়ক হ্যারি কেন দ্বিতীয় পেনাল্টি মিস করলেও, প্রথম পেনাল্টি থেকে গোলটি ঠিকঠাকই করেছিলেন।

এ দিন ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণের মনোভাব ছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। যদিও এমবাপেকে বোতলবন্দি করে রাখার জন্য কাইল ওয়াকারকে রেখেছিলেন ইংরেজ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। তাতে কী আর আটকে রাখা যায় তরুণ তারকাকে। হয়তো এ দিন এমবাপে নিজে গোল করতে পারেননি। কিন্তু প্রথম গোলের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অস্বীকার করা যায় না। সারা ম্যাচে এমবাপে একাধিক বার তাঁর মার্কারকে বোকা বানালেন। আর এমবাপেকে আটকাতে ব্রিটিশরা মন দেওয়ায়, ফ্রান্সের বাকিরা অনেক বেশি মুক্ত হয়ে খেলতে পেরেছেন। যার ফলও তারা হাতে নাতে পাওয়া গিয়েছে।

ম্যাচের ১৭ মিনিটেই দূরপাল্লার শটে চোখধাঁধানো গোল করে চমকে দেন অরেলিয়েঁ চৌমেনি। দুর্দান্ত প্রতি আক্রমণের ফল পায় ফ্রান্স। ডেক্লান রাইসকে টপকে বল নিয়ে এগিয়ে যান কিলিয়ান এমবাপে। তাঁর থেকে বল পেয়ে গ্রিজম্যান পাস দেন চৌমেনিকে। বক্সের বেশ খানিকটা বাইরে থেকে নীচু শটে গোল করেন রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলার। দেশের জার্সিতে দ্বিতীয় গোল চৌমেনির।

আরও পড়ুন: ভিডিয়ো- WC-এর স্বপ্নে ইতি,দলকে জেতাতে না পেরে বাচ্চাদের মতো কেঁদে ভাসালেন রোনাল্ডো

প্রথমে কিছুটা চাপে থাকলেও, ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডও আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে থাকে। তবে প্রথমার্ধে সমতা ফেরাতে পারেনি তারা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কিছু সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি। তবে ম্যাচের ৫২ মিনিটে পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। ডান দিক থেকে ইনসাইড কাট করে ফ্রান্সের বক্সে ঢুকতে গিয়েছিলেন সাকা। তাঁকে অবৈধ ভাবে ফাউল করেন চৌমেনি। পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান হ্যারি কেন। ইংল্যান্ডের জার্সিতে নিজের ৫৩তম গোল করেন কেন। দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে ছুঁয়ে ফেলেন ওয়েন‌ রুনিকে।

এর পর আক্রমণ, প্রতি আক্রমণে ম্যাচ গড়াচ্ছিল। তবে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল ফ্রান্স। ইংল্যান্ডও বেশ কিছু ভালো আক্রমণ করলেও, গোলের মুখ খুুলতে পারেনি। উল্টে ৭৭ মিনিটের মাথায় দেম্বেলের থেকে পাস পেয়ে সপাটে শট মেরেছিলেন জিরু। কিন্তু পিকফোর্ড সেটা বাঁচিয়ে দেন। পরের মিনিটেই বাঁ দিক থেকে গ্রিজম্যানের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন সেই জিরুই। ফ্রান্স যেন অক্সিজেন পায়।

তবে এর পরেও নাটক বাকি ছিল। ফ্রান্স ২-১ করার মিনিট চারেকের মধ্যেই ম্যাসন মাউন্টকে ডি-বক্সের মধ্যে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন থিয়ো হার্নান্ডেজ। ভার-এর সাহায্যে পেনাল্টি দেন রেফারি। কিন্তু হ্যারি কেনের শট বারের অনেকটা উপর দিয়ে উড়ে যায়। ম্যাচে ফেরার এটাই ছিল ইংল্যান্ডের কাছে সুবর্ণ সুযোগ। এই পেনাল্টি মিস করেই খলনায়ক হয়ে যান হ্যারি কেন। তবে একদম শেষ মুহূর্তে বক্সের বাইরে একটি ফ্রিকিক পেয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু মার্কাস র‌্যাশফোর্ডের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। স্বভাবতই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ১-২ হেরে আরও এক বার চোকার্স তকমা গায়ে সেঁটে কাতার থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে ইংল্যান্ডকে।

For all the latest Sports News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.