সৌরিশের নির্বাক ছবি ‘জুতো’ কোন গল্প বলবে? আবিষ্কার নাকি আত্মরতির
কথায় বলে মানুষের জুতো দেখলে নাকি তাঁর সম্পর্কে একটা ধারণা মেলে। এ কথার সত্যতা কেই বা আর যাচাই করেছে, কিন্তু কিছু কিছু মানুষ যে জুতো পাগল সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না নিশ্চয়? অনেকেরই জুতো নিয়ে মারাত্মক রকমের অবসেশন থাকে। তাঁদের কাছে যেন জুতোই জীবন, সেটাই ভালোবাসা।
এমনই একজনের জুতো পরিষ্কারের সময় কেউ ফোন করলে সে বিরক্ত হয়। এই জুতো যেন তাঁর প্রাণ। আর সেই জুতো যখন একদিন ছিঁড়ে গেল তখন কি হয়? কার কথা বলছি? ধরুন না এক যুবকের। সে নতুন জুতো কেনে বটে, কিন্তু পুরনো জুতোর যে আরাম সেটা কি আর পাওয়া যায়? না। তার সঙ্গে সখ্য হতে যে সময় লাগে ঢের। আর এই জুতো জীবনের যে সম্পর্ক, এটা ঘিরে যে রূপকথা সেটাই যেন নিজেকে খুঁজে বের করার একটা মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। আর এই গোটা বিষয় নিয়ে একট পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়ে ফেলেছিলেন পরিচালক সৌরিশ দে।
সৌরিশ এই ছবিটি স্বাধীনভাবে বানিয়েছেন। ওই যাকে বলে, ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম।’ জুতো ছবিটিতে দুটি চরিত্রকে দেখা যাবে। আর এই দুই চরিত্র হলেন ভাস্কর দত্ত এবং চলন্তিকা গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু সব ছেড়ে এমন একটা সিনেমা তৈরি ভাবনা কেন এল পরিচালকের? আনন্দবাজারকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে পরিচালক জানান, এই ছবিটি তাঁর ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি করা। তিনি জানান, এমন একটা ছবি তৈরি করতে চেয়েছেন যা কোনও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষও সহজে বুঝতে পারে। তিনি সকলের জন্য ছবি তৈরি করতে চেয়েছেন। এই সংলাপ ছাড়া ছবি যেমন দর্শককে হাসাবে, তেমনই কাঁদাবে।
কিন্তু ‘সবার’ জন্য ছবির ভাবনাটাই বা এল কেন তাঁর? সৌরিশের কথায়, ‘একটি সিনেমা হলে বলিউডের কোনও একটা ছবি চলছিল। সলমনের খানের পোস্টারের সামনে হুড়োহুড়ি একেবারে। আর সেখানেই খেয়াল করি দুই মূক-বধির মানুষকে। মনে হয় তাঁরা এই ভাষা বুঝবেন না। তখন ঠিক করি নির্বাক ছবি বানাব যা সবাই বুঝবে।’
এই ছবির কাজ সৌরিশ ২০১৭ সালে শুরু করেছিলেন। দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু তারপরেও করোনা থাবা বসায় পৃথিবীতে। এর ফলে আর কিছুই এগোয় না। ছবির মুক্তি আটকে যায়। কিন্তু এখন যখন আবার সব স্বাভাবিক হচ্ছে ধীরে ধীরে তখন সৌরিশের সেই স্বপ্ন সফল হতে চলেছে।
সৌরিশ দে পরিচালিত পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক ছবি ‘জুতো’ ২৫ নভেম্বর আসছে প্রেক্ষাগৃহে। সৌরিশ এই ছবির বিষয়ে বলেন, তিনি চেয়েছিলেন যাতে তিনি বাংলার প্রথম নির্বাক ছবিটি তৈরি করতে পারেন। কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় সেটা হয়নি। কিন্তু তাই বলে তিনি শর্ট ফিল্ম বানাতে চাননি। চেয়েছিলেন পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক চলচ্চিত্র বানাতে। কিন্তু কখনই দমে যাননি সৌরিশ। নিজে ছবি সম্পাদনার কাজ জানেন। একটা ছোট দল তৈরি করেন। নিজেরাই এই ছবির যা যা কাজ আছে চিত্রগ্রহণ থেকে অন্যান্য সবই নিজেরাই করেন।
জুতো ছবিটি একাধিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সর্বসাধারণের জন্য তিনি এই ছবি আনতে চেয়েছিলেন, হারিয়ে যেতে দেননি ছবিটিকে। আর কিছুদিনের মধ্যেই এই ছবি প্রেক্ষাগৃহে আসছে সবার জন্য। তবে ওই, পরিচালক যা ভেবে, যাঁদের কথা ভেবে এই ছবি তৈরি করেছিলেন তাঁদের কাছেও যাতে এই ছবি পৌঁছানো যায় তিনি সেই চেষ্টাও করছেন। তাঁর মতে, যাঁরা স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা যেন কখনও ভেঙে না পড়েন, বরং ছবি মুক্তির বিকল্প পথ তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে বলে জানান।
For all the latest entertainment News Click Here