চোল রাজা কি হিন্দু নন? কমল হাসনের বিতর্কিত দাবির পর লাগল রাজনীতির রং
হালে মুক্তি পেয়েছে মণিরত্নম পরিচালিত ‘পোনিইন সেলভান ১’ বা ‘পিএস ১’ । আর তার পর থেকেই নানা ধরনের বিতর্ক শুরু হয়েছে এই ছবি নিয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিতর্ক দেখা দিয়েছে পরিচালক ভেটরিমারানের উক্তিতে। তার পর থেকেই রাজনৈতিক মহল উত্তপ্ত। তার পরে এই বিতর্কে মন্তব্য করেছেন সুপারস্টার কমল হাসন পর্যন্ত। দেখে নেওয়া যাক, পর পর কী কী হয়েছে।
বিতর্কের শুরু:
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে মণিরত্নম পরিচালিত ‘পোনিইন সেলভান’ বা ‘পিএস ১’ । ছবির কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছেন চোল সম্রাট রাজারাজা। তার পরে তামিলনাড়ুর বিজেপির নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ বলা শুরু করেন, রাজারাজা চোল ছিলেন অন্যতম সেরা হিন্দু রাজা। বিতর্কের সূচনা সেখানেই। এর পরে পরিচালক ভেটরিমারান বলেন, এটি মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। তামিল পরিচয়কে মুছে দিয়ে হিন্দুত্ববাদী পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে। চোল রাজারা মোটেই হিন্দু ছিলেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিজেপির পালটা জবাব:
এর পরে বিজেপির তরফে এর বিরোধিতা করা হয়। স্থানীয় নেতৃত্বের তরফে বলা হয়, ভেটরিমারানের কথা ভুল। রাজারাজা ছিলেন হিন্দু রাজা। রাজারাজা শিবের মন্দির তৈরি করেছিলেন। ফলে তাঁকে হিন্দু বলে না ভাবার কোনও কারণ নেই। বিজেপির নেতা এইচ রাজা বলেন, ‘ভেটরিমারান যে ইতিহাস পড়েছেন, তা আমার জানা নেই। কিন্তু ওঁকে বলব, দুটো চার্চ বা মসজিদের নাম বলতে, যেগুলি রাজারাজার তৈরি।’
কমল হাসনের প্রবেশ:
এর পরে বিতর্কে ঢুকে পড়েন ভারতীয় ছবির সুপারস্টার কমল হাসন। তিনি পুরোপুরি সমর্থন করেন ভেটরিমারানকে। বলেন, চোল রাজাদের সময়ে হিন্দু বলে কোনও কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। তাই রাজারাজাকে কোনওভাবেই হিন্দু রাজা বলার যুক্তি নেই। তাঁর মতে, হিন্দু ধর্মের ধারণা এর অনেক পরে এসেছে। সে সময়ে ‘হিন্দু ধর্ম’ বলে আলাদা করে কিছু ছিল না। যা ছিল, তা হল শৈব, শাক্ত— এই ধরনের ধর্ম।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কমলকে সমর্থন:
একদিকে যেমন কমল হাসনের এই উক্তি বিতর্ক উসকে দিয়েছে, তেমনই অন্য দিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বড় অংশের মানুষ সমর্থন করেছেন কমল হাসনকেই। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘হিন্দু’ শব্দটির সেই সময়ে কোনও অস্বস্তি ছিল না। এটি পারস্যদের মুখ থেকে আসা শব্দ। কারণ তারা সিন্ধু উচ্চারণ করতে পারত না বলে সেটিকে ‘হিন্দু’ বলত। আর সেখান থেকেই ‘হিন্দু’ শব্দের উৎপত্তি।
বিশেষজ্ঞের মত:
এর পরে হিন্দুস্তান টাইমসের তরফে ঐতিহাসিক এস জয়কুমারের সঙ্গে কথা বলা হয়। ঘটনাচক্রে এই জয়কুমার ‘পোনিইন সেলভান ১’-এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, যদিও চোল রাজাদের সময়ে ‘হিন্দু’ শব্দটি পাওয়া যায়নি, কিন্তু হিন্দু ধর্ম বলতে যা বোঝায়, তাঁরা সেই ধর্মেই বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘সেই সময়ে যাঁরা শিবের উপাসনা করতেন, তাঁরা শৈব বলে পরিচিত ছিলেন। একই রকমভাবে বিষ্ণুর উপাসকরা ছিলেন বৈষ্ণব।’ তাঁর বক্তব্য, রাজারাজা কট্টর শৈব হলেও বিষ্ণু মন্দিরও তৈরি করেন। তার পাশাপাশি তিনি দুর্গা, শক্তি, কালী, গণেশের মন্দিরও বানান।
সব মিলিয়ে বিতর্ক এখন এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। তবে এটা পরিষ্কার, যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, তাতে ইতিহাসের সঙ্গে মিশছে রাজনীতির রংও। ফলে এই তর্কের খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে মনেও হয় না।
For all the latest entertainment News Click Here