৩ বছরের বেতনহীন ‘ছুটি’ নিয়ে বাবার আত্মত্যাগ, পদক জিতে সম্মান জানালেন নীতু
শুভব্রত মুখার্জি: সদ্য শেষ হওয়া কমনওয়েলথ গেমসের মঞ্চ মাতিয়ে তুলেছেন ভারতীয় অ্যাথলিটরা। একের পর এক সম্মান বিভিন্ন ক্রীড়া বিভাগ থেকে ভারতকে এনে দিয়েছেন অ্যাথলিটরা। ক্রীড়িবিদদের এই অসাধারণ পারফরম্যান্সে ভর করে পদক তালিকায় নিউজিল্যান্ডকে টপকে চতুর্থ স্থানে শেষ করেছে ভারতীয় দল। এই দলের পদকজয়ী অন্যতম সদস্যা নবীনা প্রতিভাবান বক্সার নীতু গাঙ্গাস। সব অ্যাথলিটের স্বপ্নপূরণের পিছনেই কারও না কারও অবদান। নীতুও তার ব্যতিক্রম নন। তার সাফল্যের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তার বাবার। যিনি বিশ্বমঞ্চে মেয়ের সাফল্যের জন্য নাকি তিন বছরের বেতনহীন ‘ছুটি’ নিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসের বক্সিংয়ের ৪৮ কেজি বিভাগে ইংল্যান্ডের ডেমিস-জেড রেজস্তানকে ৫-০ পয়েন্টে হারিয়ে সোনা জিতেছেন নীতু। আর সোনা জয়ের পরে মেয়ের মুখেই ধরা পড়ল তার বাবার আত্মত্যাগের কাহিনি। মেয়ের প্রশিক্ষণের যাতে কোনওরকম কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য তিন বছর বেতনহীন ছুটি নিয়েছিলেন তার বাবা। উল্লেখ্য হরিয়ানার সচিবালয়ে কর্মরত রয়েছেন নীতুর বাবা জয় ভগবান। উল্লেখ্য কমনওয়েলথ গেমসের এই সোনাই নীতুর কেরিয়ারের প্রথম সোনা নয়।
নীতু এর আগেও যুব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে দু’বার সোনা জিতেছেন। তবে কমনওয়েলথ গেমসে এটাই তার প্রথম সোনা। উল্লেখ্য নীতুর কেরিয়ারের এটাই ছিল প্রথম কমনওয়েলথ গেমস। আর সেখানেই বক্সিং রিঙে নেমেই বাজিমাত করলেন তিনি। নীতুর মতে বাবা পাশে না থাকলে বক্সিংয়ে সাফল্য কোনও দিনই পাওয়া হত না তাঁর। তিন বছর কাজ থেকে বেতনহীন ছুটি নিয়ে মেয়েকে বক্সার বানাতে রাতদিন এক করে দিয়েছিলেন বাবা। সেই পরিশ্রমের ফল তাকে এনে দিয়ে যোগ্য সম্মান দেখিয়েছেন তার মেয়ে। অবশেষে সফল হয়েছে কমনওয়েলথে সোনা জয়ের মধ্যে দিয়ে।
সোনা জেতার পর নীতু জানান ‘আমার স্বপ্নপূরণ হয়েছে কমনওয়েলথ গেমসে। কিন্তু এই স্বপ্নপূরণের পিছনে সব থেকে বেশি অবদান রয়েছে আমার বাবার। উনি কোনও ত্রুটি রাখেননি আমার খেলা বা অনুশীলনের বিষয়ে। অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন শুধুমাত্র আমার জন্য। আমি যাতে সেরা প্রশিক্ষণ পাই সেই দিক থেকে কোনওদিন তার লক্ষ্য সরেনি। বাবা না থাকলে এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না।’
উল্লেখ্য হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলার ধনানা গ্রামে জন্ম নীতুর। প্রথমে বক্সিংয়ে উৎসাহ ছিল না নীতুর। বাবার ইচ্ছেতেই বক্সিং গ্লাভস হাতে তুলে নেন নীতু। বাবার সঙ্গে স্কুটারে রোজ ৭০ কিমি তাকে আসতে হত। ভিওয়ানি বক্সিং ক্লাবে তিনি আসতেন অনুশীলনের কারণে। এরপরেই মেয়ের কেরিয়ার যাতে সুষ্ঠুভাবে গড়া যায় সেকথা মাথায় রেখে ভগবান সিদ্ধান্ত নেন বেতনহীন ছুটি নেওয়ার।ব্যাপারটা সহজ ছিল না একেবারেই। সংসার চালানোর পাশাপাশি নীতুকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়াটাও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সময় আত্মীয়দের থেকে টাকা ধার নিতে হয়েছিল ভগবানকে। সেই সবের জন্য টাকা যোগাতে নিজের চাষের জমিতে চাষ করে এই সময়টাতে সংসার চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
For all the latest Sports News Click Here