অনেক আবেদন করার পর এশিয়ান গেমসে খেলার ছাড়পত্র পেয়েছে ভারতীয় ফুটবল দল। তবে তা নিয়ে খুব বেশি ভাবার সময় নেই ভারতের। প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে মাঠের বাইরে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। সুনীল ছেত্রী, সন্দেশ ঝিঙ্ঘান, গুরপ্রীত সিং সান্ধুদের মতো প্লেয়ারদের ছাড়াই মাঠে নামতে হতে পারে ভারতীয় দলকে। মাঠে নামার আগে এই জি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনেক কথা তুলে ধরলেন প্রধান কোচ ইগর স্টিম্যাচ।
সাক্ষাৎকার শুরুর পর্বে প্রথমেই তাকে এশিয়ান গেমসে খেলার জন্য শুভেচ্ছা জানানো হয়। সঙ্গে এই বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। ইগর বলেন, ‘এখানে খেলার খবর পাওয়ার পর থেকে আমাদের তাগিদ অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমিও দলের সবাই খুব খুশি। ফের একবার আমরা বিশ্ব মঞ্চে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারব। একজন ফুটবলারের কাছে ও কোচ হিসাবে আমার কাছে এর থেকে বড় কিছু নেই। এতদূর আসার জন্য সবার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এর সঙ্গে এআইএফএফের সভাপতি কল্যাণ চৌবে ও সচিব শাজি প্রভাকরণকে ধন্যবাদ জানাই। ভারতের ক্রিয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীকেও অনেক ধন্যবাদ। এই কয়েক সপ্তাহ ধরে পুরো দেশবাসী আমাদের হয়ে প্রার্থনা করেছে।’
এরপরে স্টিম্যাচকে এশিয়ান গেমসে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন, ‘এখানে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। শুধুমাত্র এই টুর্নামেন্টে খেলাটাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ নয়। মাঠের বাইরেও সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এশিয়ান গেমসের নিয়ম অনুযায়ী সুনীল ছেত্রী, সন্দেশ ঝিঙ্ঘান, গুরপ্রীত সিং সান্ধু খেলতে পারবে কিনা সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এর ফলে দলে জুনিয়র ফুটবলাররা সুযোগ পাবে। সেটাও একটা চ্যালেঞ্জ। সব ফুটবলারই গ্যালারি ভর্তি সমর্থকদের সামনে খেলতে চায়। জিততেও চায়। কিন্তু এর আগে আমাদের অনেক ধাপ পার করতে হবে।’
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এশিয়ান গেমসে ভারত তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলবে সেই বিষয়ে ঘরের থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তর দেন, ‘চীন আমাদের থেকে কিছুটা শক্তিশালী। তবে এর আগে মায়ানমার এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমরা ভালো পারফরম্যান্স করতে পেরেছি। তবে এশিয়ান গেম একটা আলাদা মঞ্চ। এখানে প্রতিটি দেশের প্রতিটি ফুটবলার নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে সেরাটা করার চেষ্টা করবে। তাই বিপক্ষকে সমীহ করে চলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। দলে কয়জন সিনিয়র ফুটবলার খেলতে পারবে সেটাও দেখতে হবে। তবে যাই হোক আমাদের ছেলেরা সহজে হাল ছাড়বে না। ভারতীয় দলের জার্সি ও দেশের পতাকার মান রাখবে।’
এই টুর্নামেন্টে ভারতীয় দলের অনেকেই তরুণ খেলোয়াড় তাদেরকে নিয়ে ম্যাচ জেতা কতটা কঠিন বা সহজ হবে তা প্রধান কোচের থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মঞ্চে ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে ছেলেদের। নিজেদের স্কিল বাড়াতে হবে। যত বেশি ম্যাচ খেলবে, তত ফুটবল জ্ঞান বাড়বে। আমরা সবাই দেখেছি এই তরুনরাই ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপের পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেছে। আমি দাবি করে বলছি এই ছেলেরা বিপক্ষের চোখে চোখ রেখে পারফর্ম করতে পারে। এরা আমার দলের সিনিয়র ফুটবলারদের থেকে কোনও অংশে কম নয়।’
এশিয়ান গেমস ছাড়াও ভারতীয় দল কিংস কাপ, মারডেকা কাপ খেলবে। এছাড়া ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনপর্ব তো আছেই। জাতীয় দলের মান বজায় রাখতে আইএসএলের। দলগুলোর সঙ্গে তিনি কথা বলবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে। ইগর উত্তর দেন, ‘এশিয়ান গেম কত বড় একটা টুর্নামেন্ট তা সবাইকে আলাদা করে বলে দিতে হবে না। এই টুর্নামেন্টের জন্য আইএসএলের দলগুলোকে ফুটবলার রিলিজ করা উচিত। এই বিষয়ে আমরা সবার সঙ্গে কথা বলব। আশা করি সবাই একটা ফুটবল পরিবার হিসাবে দেশের স্বার্থে আমরা কাজ করব।’
ইগরকে ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর বয়স এবং তার সেরা ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জানতে চাওয়া হয় পরবর্তী বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার ম্যাচ পর্যন্ত সুনীল খেলতে পারবেন কিনা? প্রশ্ন শুনে তিনি উত্তর দেন, ‘এই বিষয়ে আমার থেকে সুনীল সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে। তবে আমি যতদিন ভারতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত রয়েছি ততদিন সুনীল ছাড়া অন্য কাউকে ভাবতে পারিনা।’ এরপরে ভারতীয় সমর্থকরা যে এই ফুটবল দলের প্রতি অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে তাদের প্রতি কোনও বার্তা তিনি দেবেন কিনা তা জানতে চাইলে সুনীলদের কোচ বলেন, ‘ভারতীয় ফুটবল প্রেমীদের আমি কুর্নিশ জানাই। ওরা কতটা প্রশংসাযোগ্য তা আমি ভাষায় প্রকাশ করে বলতে পারব না। মাত্র সাড়ে চার বছরে ওরা আমাকে এবং গোটা দলকে আপন করে নিয়েছে। প্রতিটি সমর্থককে অনেক ধন্যবাদ। আমি এখন বলবো আমাদের ওপর ভরসা রাখুন। আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা ভালো ফুটবল উপহার দেব।’
For all the latest Sports News Click Here
