ব্যক্তিগত জীবনেও কি ‘প্রেমে পড়া বারণ’? মনের কথা অকপটে জানালেন রণজয়
‘কেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছি/যেন ঘরে ফিরে যাওয়া মৌমাছি/কত দেওয়া নেওয়া বাকি রয়ে গেছে/হেরে যাওয়াতেও ভালো লাগা আছে’। সালটা ২০১৯। মুক্তি পেল ‘সোয়েটার’। ‘প্রেমে পড়া বারণ’ গানটিতে ভেসে গেল গোটা বাংলা। মিউজিক কম্পোজার তথা পরিচালক হিসেবে প্রথম ছবিতেই নিজের জায়গা পাকা করলেন রণজয় ভট্টাচার্য। কিন্তু গোটা অ্যালবামে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ হয়ে থেকে গেল ‘আজ আমার আকাশ’। ৪ বছর কেটেছে ইতিমধ্যেই। সামনেই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর আরও একটি কাজ, আরও একটি ছবি, ‘বিয়ে বিভ্রাট’। তার আগে HT বাংলার মুখোমুখি হলেন রণজয়। আড্ডা জমলো আমাদের সঙ্গে।
কেমন আছেন আগে বলুন?
রণজয়: ভীষণ ভালো আছি।
কত বছর হয়ে গেল এই ইন্ডাস্ট্রিতে?
রণজয়: বলিউডে আছি সেই ২০১৪ থেকে। বাংলায় ৪-৫ বছর হল। ২০১৯ -এ প্রথম কাজ।
বলিউড থেকে টলিউড, সুযোগটা এল কীভাবে?
রণজয়: আমি তখন মুম্বইতে। সেই সময়ই শিলাদিত্য মৌলিক অর্থাৎ ‘সোয়েটার’ ছবির যিনি পরিচালক তাঁর সঙ্গে আলাপ হল। আমরা ওখানেই একসঙ্গে গান বাজনা করতাম, জ্যামিং করতাম। এরপরই ও আমায় জানাল যে ও একটি ছবি করতে চলেছে। সেখানে আমায় গানের দায়িত্ব নিতে হবে। ওটা দিয়েই শুরু। যদিও আমরা ২০১৭ থেকেই ছবিটা নিয়ে কাজ শুরু করি, এরপর সেটা ২০১৯ -এ মুক্তি পায়।
আর গানের সঙ্গে আলাপ?
রণজয়: আমার যখন ৫ বছর বয়স তখন। আমি মূলত ক্ল্যাসিকাল আর নজরুল গীতি শিখেছি। যা হয় বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে, নাচ-গান শেখানো, কম্পিটিশনে যাওয়া, সবটাই করেছি। তবে কেউ কিন্তু আমায় জোর করেননি। আমি নিজের ইচ্ছেয় করেছি। আমায় যিনি ছোটবেলায় গান শেখাতেন তাঁর কাছে গিয়ে আমি রীতিমত বায়না জুড়ে গান শিখেছিলাম। পরে পিয়ানো শিখি।
বেশ, কিন্তু ‘সোয়েটার’ বলুন বা অন্য ছবি, সবগুলোর গানই দর্শক-শ্রোতাদের থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছে। এটা কীভাবে হল?
রণজয়: দেখুন, আমি কিন্তু খুব একটা ভেবে গান বানাই না। আমি অরগ্যানিক ইমোশন থেকে যা কাজ করার সেটা করি। সেটা গান লেখা হোক বা সুর করা। আমার ইমোশন আমায় যেদিকে নিয়ে যায় আমি সেদিকে যাই। গান হিট হবে কিনা, দর্শকদের কেমন লাগবে এসব ভাবি না। তবে আমার গানগুলোর সঙ্গে মানুষ নিজেদের মেলাতে পারেন হয়তো, তাই তাঁদের এত ভালো লাগে।
‘বিয়ে বিভ্রাট’-এ কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
রণজয়: এটা একটা রমকম। এখানে যেমন মজা আছে, প্রেম আছে, তেমনই মন খারাপ আছে। একাধিক ইমোশন রয়েছে এই ছবিতে। পাশাপাশি এই ছবিতে দুটো পুরুষ চরিত্র দুই রকমের। একজন ইউটিউবার, একজন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের গায়ক। ফলে তাঁদের জন্য আলাদা আলাদা জ্যঁরের গান আছে। এখানে যেমন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আছে, তেমনই পপ মিউজিক, ফিউশন আছে। রাগের সঙ্গে পপ মিউজিকের ফিউশন পাবেন দর্শকরা এখানে। আশা করছি ভালো লাগবে তাঁদের।
হ্যাঁ, সেটার আন্দাজ খানিক প্রকাশিত গানগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে। অরিজিতের সঙ্গে এটা তবে প্রথম কাজ?
রণজয়: হ্যাঁ।
কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
রণজয়: ভালো না হয়ে উপায় আছে? উনি এত ভালো, বিনয়ী যে ভীষণ ভালো লেগেছে কাজ করতে। উনি এত সুন্দর কথা বলেন যে কী বলব। আমার কম্পোজিশন শুনেই ওঁর এত ভালো লাগে, এত প্রশংসা করেন যে সেটা আমায় অনেক উৎসাহ দিয়েছে। অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। জানেন, ওঁর গান পছন্দ না হলে উনি গান গান না। সেখানে আমার ছবিতে ওঁর তিনটি গান আছে। এটা অনেক বড় পাওয়া। যদিও অরিজিৎ যেহেতু ভীষণ ব্যস্ত থাকেন, তাই কাজটা করতে আমাদের সময় লেগেছে, তবুও যখন গানগুলো তৈরি হল তখন সেটার সৌন্দর্যের মাত্রা সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে গেল।
বাহ! অরিজিতের সঙ্গে তো কাজের অভিজ্ঞতা হল। আগামীতে আর কোন শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতে চান?
রণজয়: অনেকে আছেন, হরিহরণ, সোনু নিগম, সুখবিন্দর সিং, শঙ্কর মহাদেবন, শ্রেয়া ঘোষাল প্রমুখের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে।
প্রথম ছবিতেই ফিল্মফেয়ার। কী মনে হয়েছিল অ্যাওয়ার্ড হাতে পেয়ে?
রণজয়: এটা না ভাষায় বোঝানো যাবে না। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন অ্যাওয়ার্ড বলতে ফিল্মফেয়ার বুঝতাম। শাহরুখ-সলমনকে ফিল্মফেয়ার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। সেটাই যখন নিজে হাতে পেলাম তখন আলাদা একটা অনুভুতি হয়েছিল। আমি আশাই করিনি প্রথম ছবিতে দুটো ফিল্মফেয়ার, অতগুলো মির্চি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড পাব। তখন আমি এখানে নতুন, কেউ আমায় চিনতেন না। তারপরেও এত অ্যাওয়ার্ড পেয়ে ভীষণ ভালো লেগেছিল।
আচ্ছা, এবার আমাদের এই সিরিজে সমস্ত শিল্পীদের কাছেই যে প্রশ্ন রাখছি, সেটাই আপনাকে করতে চাই।
বাংলা সিনে গানের জগতে কী কোথাও একটা বদল আসছে?
রণজয়: আমায় অনেকেই বলেছেন, আমার গানের হাত ধরে নাকি একটা নতুন ট্রেন্ড এসেছে বাংলা সিনেমার গানে। এটা অবশ্য যাঁরা গান শুনছেন তাঁরা বলতে পারবেন। তবে আমি চেয়েছিলাম বাংলা গানে মেলোডি ফেরাতে, সেটা চেষ্টা করছি।
আগামীতে আর কী কী কাজ আসছে আপনার?
রণজয়: তথাগত মুখোপাধ্যায়ের ‘পারিয়া’ ছবিতে কাজ করলাম। এছাড়া ‘বিজয়ার পরে’র কাজ শেষ হল। সেটা এখন মুক্তির অপেক্ষায়। এছাড়া ‘সেদিন কুয়াশা ছিল’, ‘মেঘলা’ এই ছবিগুলোর কাজও হয়েছে, মুক্তি পাবে আগামীতে। আরও ২-৩ ছবি নিয়ে কথা চলছে, ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আনব সবটা।
বেশ! প্রেমে পড়তে বারণ করেছিলেন যিনি তাঁর জীবনে প্রেম আছে নাকি?
রণজয়: প্রেম না থাকলে তো মুশকিল!
তাহলে বিশেষ মানুষটি কে?
রণজয়: বিশেষ মানুষ তো অনেকেই আছেন। বিভিন্ন ইমোশনের জন্য আলাদা আলাদা মানুষ জীবনে থাকা উচিত। এই যেমন ভাই, বোন, বন্ধু।
For all the latest entertainment News Click Here