83 Review: সিনেমা কম, খেলাই বেশি— সেটাই ‘৮৩’-র সাফল্যের কারণ

এমন একটা ছবি, যার শুরু এবং শেষটা কেমন হবে, ছবিটা দেখার আগে থেকেই সকলের জানা। এমন একটা ছবি, যার মাঝের ঘটনাগুলোর গতিপ্রকৃতি কেমন হবে— সেটাও হয়তো কমবেশি অনেকে জানেন। তবু এমন একটা ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত কেন নিলেন নির্মাতারা? সেটাই ‘৮৩’ ছবির সাফল্যের কারণ।

ইতিমধ্যেই নেটদুনিয়ায় ‘৮৩’ ছবির গুণগান করেছেন অনেকে। বেশির ভাগেরই যুক্তি ১৯৮৩ সালে জাতীয় ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতি পুরোদস্তুর ফিরিয়ে এনেছে এই ছবি। আবার চোখের সামনে ফের দেখা গিয়েছে গায়ে কাঁটা দেওয়া দৃশ্যগুলো। সেই নস্টালজিয়ার কারণেই এই ছবি এত ভালো লেগেছে। 




কিন্তু যাঁরা সেই সময়ে জন্মাননি বা সেই সময়ের কোনও স্মৃতি নেই? তাঁরা কীসের ভরসায় এই ছবি দেখতে বসবেন? তাঁদের তো নস্টালজিয়া উস্কে দেওয়ার মতো কোনও উপাদান নেই। তাহলে? তবুও ১৯৮৩ পরবর্তীতে জন্মানো দর্শকদের অনেকেরই ভালো লেগেছে এই ছবি। ভালো লেগেছে সাধারণ ক্রিকেট-প্রেমীর। এমনকী যাঁরা খেলাধুলোর বিষয়ে অতটাও উৎসাহী নন, নিখাদ বিনোদনের খোঁজে পর্দার সামনে হাজির হন— ভালো লেগেছে তেমন অনেকেরই। এই সাফল্যের কারণ কী?

বলিউডে সফল ‘স্পোর্টস ফিল্ম’-এর তালিকার দিকে একটু তাকানো যাক তার আগে। ‘চক দে ইন্ডিয়া’, ‘লগান’, ‘মেরি কম’, ‘ভাগ মিলখা ভাগ’, ‘পান সিং তোমার’, ‘কাই পো চে’, ‘ইকবাল’, ‘গোল্ড’, ‘সাইনা’, এমনকী সময়সারণী ধরে পিছোতে পিছোতে পৌঁছে যাওয়া যেতে পারে ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ পর্যন্ত। বলিউড ছবিতে ‘স্পোর্টস ফিল্ম’-এর সংখ্যা নেহাত কম নয়। এর প্রতিটারই আবার কিছু মিল রয়েছে।

কেমন মিল? বিশেষ করে প্রতিটা ছবিতেই খেলার গল্পের সমান্তরালে চলতে থাকে অন্য একটা গল্প। অন্য একটা লড়াইয়ের গল্প। ছবির প্রোটাগনিস্ট বা তার পাশে থাকা মানুষের জীবন গল্পের শেষে এসে বদলে যায় খেলার মাঠে জয়ের মধ্যে দিয়ে। খেলার মাঠের জয় কখনও তাদের পাইয়ে দেয় প্রেম, কখনও পাইয়ে দেয় হারিয়ে যাওয়া সম্মান, কখনও জাতীয়তাবাদী শ্লাঘা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘স্পোর্টস ফিল্ম’-এ খেলাটা হয়ে যায় অন্য লড়াইগুলো জেতার হাতিয়ার। সামনে থেকেও ‘সেকেন্ডারি’ একটা বিষয়। 

এখানেই ব্যতিক্রম ‘৮৩’। এখানে খেলাটাই ‘প্রাইমারি’। অন্য লড়াই ‘সেকেন্ডারি’। সাহেবদের থেকে লর্ডসে ঢোকার পাস চাইতে গিয়ে মান সিংয়ের হেনস্থা হওয়া এবং গল্প যখন শেষ হওয়ার মুখে, দম্ভের সঙ্গে সে পাস আদায় করার মতো টুকরো লড়াই, ব্রিটিশ সাংবাদিকের সামনে শ্রীকান্তের রসিকতার ঢঙে ‘মুহ তোড় জবাব’-এর মতো ঘটনা ব্যতিরেকে বাকি গল্পে কোথাও মাথাচাড়া দেয় না ‘সেকেন্ডারি’ লড়াইগুলো। এমনকী মাথাচাড়া দেয় না জাতীয়তাবাদ পর্যন্ত। খেলা নিখাদ খেলার স্তরেই থাকে। আবেগের বন্যায় ভেসে যায় না।

এবার আসা যাক, ছবির নির্মাণে। পরিচালক কবীর খান-সহ নির্মাতারা ছবিটাকে একটা পুরোদস্তুর ফিচার ফিল্মের ঢঙে বানানো থেকে দূরেই থেকেছেন। বরং তাঁদের উদ্দেশ্য অনেকটাই তথ্যচিত্র-মূলক ফিচার ছবি বা ডকু-ফিচার বানানোর দিকে, তা ভালোভাবে টের পাওয়া যায়। বল করতে দৌড়ে আসছেন কপিল-রূপী রণবীর সিং, মুহূর্তে সে দৃশ্য কেটে ঢুকে পড়ে ১৯৮৩ সালের খেলার আসল দৃশ্য। ছুটে আসেন রণবীর, কিন্তু বলটি করেন খোদ কপিল দেবই। ১৯৮৩ সালের ম্যাচেরই ওই বলের দৃশ্যটিই জুড়ে দেওয়া হয় সিনেমার দৃশ্যে। আউট হন ‘শ্রীকান্ত’-রূপী অভিনেতা জিভা। কিন্তু ব্যাট হাতে যিনি মাঠ ছাড়েন তিনি খোদ শ্রীকান্ত। এভাবেই ‘জাকস্টাপোজ’ করে মিলিয়ে দেওয়া হয় সিনেমা এবং বাস্তবকে। কখনও পুরনো ভিডিয়ো, কখনও বা স্টিল ছবির মাধ্যমে। ফিচার ফিল্মের ক্ষেত্রের বাইরে বেরিয়ে ইতিহাসের দলিল হয়ে ওঠার চেষ্টা করে ‘৮৩’।

ইতিহাসের জুতোয় পা গলানোর চেষ্টা অন্য ভাবেও আছে। সে কথা অনেকেই জানেন। অভিনেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেমন। সন্দীপ পাটিল পুত্র চিরাগকে যেমন দেখা যায় বাবার ভূমিকায়, তেমনই গর্ডন গ্রিনিজের ছেলে কার্লও অভিনয় করেছেন তাঁর বাবার চরিত্রে। ম্যালকম মার্শালের নাতি মালি অভিনয় করেছেন ঠাকুরদাদার ভূমিকায়। এর ব্যতিক্রমও আছে। ক্লাইভ লয়েডের ছেলে অভিনয় করেছেন জোয়েল গার্নারের ভূমিকায় আর চন্দ্রপলের ছেলে অভিনয় করেছেন ল্যারি গোমসের ভূমিকায়। চমক আরও আছে। মহিন্দর অমরনাথ অভিনয় করেছেন বাবা লালা অমরনাথের চরিত্রে। তবে এ সব ইতিহাস-তুতো সম্পর্ক ছাপিয়ে গিয়ে কপিল দেবের কেউ না হওয়া সত্ত্বেও রণবীর অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য ভাবেই হয়ে উঠেছেন কপিল। হাবে-ভাবে-খেলায়— সবেতে।

‘৮৩’ নিখাদ একটি ‘স্পোর্টস ফিল্ম’, যার ৬০ শতাংশ জুড়েই আছে খেলা। বাকি ৪০ শতাংশ জুড়ে সেই বিশ্বকাপের সঙ্গে জুড়ে থাকা ছোট ছোট ঘটনার পর্দায় উপস্থাপন। ইতিহাসকে ছাপিয়ে যাওয়ার কোনও বাসনা যার নেই, অতিনাটকীয়তা আরোপের কোনও উদ্দেশ্যও যেখানে নেই।

সাধারণত ‘স্পোর্টস ফিল্ম’-এর শেষ লড়াইয়ের আগে আমরা প্রোটাগনিস্টকে দেখি, গল্পের পার্শ্বচরিত্রদের গলা পর্যন্ত ভোকাল টনিক গিলিয়ে দিতে। ‘৮৩’ সেখানেও ব্যতিক্রম। কপিল দেবকে যদি গল্পের প্রধান চরিত্র হিসাবে বিচার করাও যায়, তাঁর চরিত্রে কোনও অতিনাটকীয়তা আরোপ করা হয় না এই সিনেমায়।

এর ঝুঁকিও আছে। নাটকীয়তার অভাবে অনেক সময়েই ডুবতে পারে ছবি। কিন্তু বক্সঅফিসের রেকর্ড বলছে, ‘৮৩’-র ক্ষেত্রে তেমন হয়নি। জীবনের স্রোতকে যদি ঝরোঝরো আবেগ বাদ দিয়েই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া যায়, সে গল্প যদি দর্শককে হাল্কা চালে বলা যায়, জোর করে দাঁত-নখ বার করা খলনায়ক তৈরি না করে, বিরোধী শিবিরের সবচেয়ে তাগড়া খেলোয়ারের মুখের হাসি পর্দায় ধরে তাকে দিয়ে নায়কের পিঠ চাপড়ে দেওয়ানো যায়— তাহলেও যে সিনেমা সফল হতে পারে, তার প্রমাণ এই ‘৮৩’। কারণ কে না জানে, খেলার মাঠের এই সব দৃশ্যই তো সফল, এ সব দৃশ্যই তো মনে থাকে সকলের। আর ‘৮৩’ তো সিনেমা কম, খেলাই বেশি।

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.