৫৬ বছরের শাপমুক্তির পথে আরও এক পা ইংল্যান্ডের- সেনেগলকে হারিয়ে কোয়ার্টারে কেনরা
সেই ১৯৬৬ সালে এক বারই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড। তার পর থেকে আর কখনও বিশ্বকাপ জয় সম্ভব হয়নি ব্রিটিশদের। এ বার কিন্তু ৫৬ বছরের শাপমুক্তির বড় সুযোগ রয়েছে হ্যারি কেনদের সামনে। রবিবাসরীয় রাতে দোহার আল বায়েত স্টেডিয়ামে সেনেগালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শাপমুক্তির পথে আরও এক পা বাড়াল ইংল্যান্ড।
শেষ আটের ছাড়পত্র সংগ্রহ করল রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্টরা। থ্রি লায়ন্স-এর হয়ে গোল করেন জর্ডন হেন্ডারসন, হ্যারি কেন এবং বুকায়ো সাকা। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি ইংল্যান্ড। কাতারে গোলের খাতা খোলেন হ্যারি কেন। ফরাসিদের বিরুদ্ধে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের আগে এটাই স্বস্তি দেবে গ্যারেথ সাউথগেটকে। ১৯৬৬ সালের পর বিশ্বকাপে সাফল্য নেই ইংল্যান্ডের। রাশিয়ায় শেষ চারের লড়াইয়ে বেলজিয়ামের কাছে হেরে গিয়েছিল হ্যারি কেনরা। ইউরোতেও রানার্স তকমা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এবার চোকার্স ট্যাগ ঝেড়ে ফেলতে মরিয়া সাউথগেটের দল।
শক্তিশালী এবং বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিটদের বিরুদ্ধে শুরুটা ভাল করে সেনেগাল। ইংল্যান্ডের বল পজেশন ৭০ শতাংশ থাকলেও শুধু নিজেদের অর্ধে পাস খেলে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। প্রথম ৩৫ মিনিটে কোনও আক্রমণই ছিল না। বরং বার দুয়েক বিপক্ষের বক্সে ঢুকে গোলে শট নেওয়ার চেষ্টা করে আফ্রিকার চ্যাম্পিয়নরা। ২২ মিনিটে ম্যাচের প্রথম সুযোগ সেনেগালের। গোলের মাত্র এক হাত দূরত্বে থেকে ক্রসপিসের ওপর দিয়ে বল ভাসিয়ে দেন ইসমাইলা সার। জন স্টোনসের হাতে বল লাগার দাবি করেন সেনেগালের ফুটবলাররা। ভার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে রেফারি পেনাল্টির দাবি খারিজ করে দেন। প্রথম আধ ঘণ্টা বল মাঝমাঠেই ঘোরাফেরা করে। গোল লক্ষ্য করে প্রথম শট সেনেগালের। ম্যাচের ৩১ মিনিটে বউলায়ে দিয়ার শট বাঁচান ইংল্যান্ড কিপার জর্ডন পিকফোর্ড। গতি দিয়ে কাইল ওয়াকারকে মাঝেমধ্যে পরীক্ষার সামনে ফেলে দেন জ্যাকব, সাররা।
ম্যাচের গতির বিরুদ্ধে গিয়ে প্রথম অ্যাটাক থেকেই গোল তুলে নেয় থ্রি লায়ন্স। ৩৮ মিনিটে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন জর্ডন হেন্ডারসন। মাঝমাঠ থেকে বাঁ দিকে বেলিংহ্যামকে বল বাড়ান হ্যারি কেন।
হেন্ডারসনের উদ্দেশে ক্রস রাখেন তিনি। আলতো টোকায় বল গোলে ঠেলেন ইংলিশ মিডিও। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। চলতি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে মোট সাতজন স্কোরশিটে নাম তোলেন। কিন্তু গোলের বুট যেন ড্রেসিংরুমে খুলে নেমেছিলেন হ্যারি কেন। ম্যাচের ৪১ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ফস্কান। সাকার ক্রস থেকে গোল করা উচিত ছিল ইংল্যান্ড অধিনায়কের। কিন্তু বক্সের ওপর দিয়ে ভাসিয়ে দেন হ্যারি কেন। অবশ্য তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই কাতার বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল পান। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময় কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ২-০ করেন ইংল্যান্ডের নেতা। বেলিংহ্যামের পাস থেকে ফোডেনের পা ছুঁয়ে বল পান হ্যারি কেন। সামনে একা সেনেগাল গোলকিপার মেন্ডিকে পেয়ে ডান পায়ের শটে গোলের খাতা খোলেন রাশিয়া বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা। দেশের জার্সিতে ৫২তম গোল হ্যারি কেনের। ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে মাত্র এক গোল পিছিয়ে। তাঁর আগে একমাত্র ওয়েন রুনি।
প্রথমার্ধে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য শুধু দুটো গোল। এদিন দলে একটি পরিবর্তন করেন সাউথগেট। কাতারে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা মার্কাস রাশফোর্ডের জায়গায় দলে ফেরান বুকায়ো সাকাকে। ওয়েলস ম্যাচে ডানদিকে খেলেন ফিল ফোডেন। কিন্তু আজ তাঁকে বাঁ দিকে খেলান ইংল্যান্ডের কোচ। তাতেও সফল অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের নায়ক। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় গোলের পেছনে অবদান ফোডেনের। দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় ইংল্যান্ড। ৫৭ মিনিটে ম্যাচ সেনেগালের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান বুকায়ো সাকা। বাঁ দিক থেকে ফোডেনের নিখুঁত ক্রসে বাঁ পায়ের টোকায় পারফেক্ট প্লেসিং। বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় গোল তুলে নেন ২১ বছরের সাকা। মাঝমাঠে নেমে সামনে বল সরবরাহের দায়িত্ব নেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। হ্যারি কেন, বেলিংহ্যাম, ফোডেনের ত্রিভুজ আক্রমণে নাস্তানাবুদ সেনেগাল। প্রথম ৬০ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচ পকেটে পুরে ফেলে ইংল্যান্ড। তিন গোল হজম করার পর ম্যাচে ফেরার কোনও সম্ভাবনা ছিল না আফ্রিকার দেশের। বাকি সময়টা পুরোটাই ইংল্যান্ডের। ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলেন রাশফোর্ডরা। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি। তবে ম্যাচের শুরুতে আশা জাগিয়েও এই রেজাল্টে আফশোস থাকবে সাদিও মানের সতীর্থদের।
For all the latest Sports News Click Here