৪০-৫০ করে আউট হওয়া কুরে কুরে খাচ্ছিল- ১২০৫ দিনের অপেক্ষা নিয়ে অকপট কোহলি
আমদাবাদ টেস্টের চতুর্থ দিন। নাথান লিয়নের একটি ডেলিভারি অন সাইডে খেলে রান নিতে শুরু করেন তিনি। যখন তিনি পিচে মাঝামাঝি তখনই সমর্থকদের উল্লাস শুরু হয়। কারণ দীর্ঘদিন পর টেস্টে করলেন কিং কোহলি। লাল বলের ক্রিকেটে সেঞ্চুরির জন্য ১২০৫ দিন, ২৪ টেস্ট এবং ৪২ ইনিংস অপেক্ষা করতে হয়েছে বিরাটকে। তবে শতরান সম্পূর্ণ করে সেই আগ্রাসী মনোভাব দেখা যায়নি কোহলির মধ্যে। নিজের আংটিতে চুম্বন করে উদযাপন করেন তিনি।
নামটা যখন বিরাট কোহলি ফলে সমর্থকদের মধ্যে প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু টেস্টে বিরাটকে এই শতকরানে জন্য অপেক্ষা করতে হল প্রায় তিন বছর। আমদাবাদের আগে ২০১৯ সালে কলকাতায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শতরান করেন কোহলি। এরপর টেস্টে শতরানের দেখা পাননি তিনি। ২০১৯ সাল থেকে ২৪টি টেস্টে মাত্র ৬টি অর্ধশতরান করেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই যথেষ্ট চাপেই ছিলেন তিনি। তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
একটা সময় ক্রিকেটের প্রতিটি ফরম্যাটেই তাঁকে ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়েছে। তবে সেই ব্যর্থতার প্রভাব কাটতে শুরু করে গত বছরের শেষের দিক থেকে। টি-টোয়েন্টি থেকে একদিনের ফরম্যাটে সেঞ্চুরি পান তিনি। বাকি ছিল শুধুমাত্র টেস্ট। সেই বৃত্তটাও পূর্ণ করলেন তিনি। শুধু নিজের ব্যক্তিগত বিশাল ১৮০ রান নয়, তাঁর এই ইনিংস দলকেও সাহায্য করেছে পাহাড়প্রমাণ ৪৮০ রানের বোঝাকে সরিয়ে এগিয়ে যেতে। চতুর্থ টেস্ট ড্র হওয়ায় ২-১ ব্য়বধানে জিতে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি নিজেদের দখলেই রেখেছে ভারত।
ম্যাচ শেষে বিসিসিআই টিভির সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড় বিরাটকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমরা জানি তুমি নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খুব গর্ববোধ করো এবং নিয়মিতভাবে একশো করতে চাও। কিন্তু অনেকদিন ধরে শতরান না পাওয়ায় তোমার মনে কী চলছিল এতদিন?’
জবাবে বিরাট বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি আমার ত্রুটির কারণে জটিলতা বাড়িয়েছি। আমি ৪০-৫০ রানে কখনোই সন্তুষ্ট হই না। দলের হয়ে ভালো পারফর্ম করে অনেক গর্ববোধ করি। আমি যখন ৪০ রানে ব্যাট করছিলাম তখন আমি জানতাম এটাকে ১৫০ নিয়ে যেতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে একটা জিনিস সব সময় ভাবাচ্ছিল, আমি কেন দলের জন্য ভালো পারফরম্যান্স করতে পারব না। এর আগে দলের যখন প্রয়োজন হয়েছে আমি উঠে দাঁড়িয়েছি। কঠিন পরিস্থিতিতে ভালো স্কোর করেছি। তবে এতদিন আমি যা করতে পারিনি সেটাই আমাকে সব থেকে বিরক্ত করে তোলে। ৪০-৫০-এ আউট হয়ে যাওয়াটা আমায় কুরে কুরে খাচ্ছিল’।
এরপর রাহুল দ্রাবিড় তাঁকে ফিটনেস নিয়ে জিজ্ঞেস করেন। সেখানে কোহলি বলেন যে তিনি প্রয়োজনে ধীরে সুস্থে পাঁচ-ছটা সেশন ধরে খেলতে পারেন কারণ তাঁর ফিটনেস সেরকম আছে। প্রয়োজনে সিঙ্গল-দুইয়ের ওপর ভরসা করে খেলে যেতে পারেন ওভারের পর ওভার ফিটনেসের সৌজন্যে। ব্যক্তি নয় দল বড়, সেটাই বারবার ফুটে ওঠে কোহলির কথায়। তবে তারপরেও বারবার যে বাইরের থেকে চাপ তাঁকে কিছুটা হলেও অস্থির করে তুলছিল শতরান পাওয়ার জন্য, সেটা অকপটে স্বীকার করে নেন তিনি। দ্রাবিড়ের সামনে একেবারেই মন খুলে উত্তর দিলেন কিং কোহলি, ক্লিশে জবাব নয়, ভেতর থেকে বেরিয়ে এল রক্তাক্ত একটা ক্রিকেটিয় সত্ত্বা, ১২০৫ দিন ধরে যা অপেক্ষা করছিল বহুকাঙ্খিত ২৮তম শতরানের জন্য। হাজার ওয়াটের আলোর ঝলকানির পরেও বিরাট কোহলি যে নেহাতই একজন রক্তমাংসের মানুষ, তাঁর সেই সংগ্রামের কাহিনির পুঁজি তিনি উপুড় করে দিলেন আমজনতার সামনে।
For all the latest Sports News Click Here