‘৩ গোল অসম্ভব নয়’, ফুটবলারদের নিজেদের উপর আস্থা না হারানোর পরামর্শ ATK MB কোচের
সেমিফাইনালের প্রথম লেগে জামশেদপুরের কাছে ১-৩ হেরে চাপে পড়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। দ্বিতীয় লেগের ৩ গোলের ব্যবধানে জেতার চ্যালেঞ্জটা নিঃসন্দেহে কঠিন সবুজ-মেরুনের কাছে। তবে বাগানের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্ডো মনে করেন, ফুটবলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। তাঁর মতে, আজ বুধবার নিজেদের ওপর আস্থা রেখে পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
এই গুরুত্বপূর্ণ ও মরণ-বাঁচন ম্যাচের আগে সাংবাদিকদের যা বললেন ফেরান্দো:
সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ১-৩ হেরেছেন, দ্বিতীয় লেগে কি আপনাদের পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব?
ফুটবলে সব কিছু সম্ভব। অবশ্যই কাজটা সোজা নয় এবং এটাই বাস্তব। তবে অসম্ভবও নয়।
আপনাদের যখন ৩ গোলের ব্যবধানে জিততেই হবে, তখন নিশ্চয়ই আপনারা আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলবেন। এর জেরে তো আপনাদের ডিফেন্ডারদের অতিরিক্ত চাপ নিতে হবে, কারণ, হায়দরাবাদ প্রতি আক্রমণে ভয়ঙ্কর।
সে রকম ভাবেই পরিকল্পনা করতে হবে আমাদের। হায়দরাবাদ কী ভাবে খেলবে, সেটাও আমাদের দেখতে হবে। কিন্তু নিজেদের পরিকল্পনার ওপরই বেশি জোর দেব আমরা। আমাদের ফোকাস বজায় রাখতে হবে এবং জিততে হবে।
এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে আপনাকে কখনও পড়তে হয়েছে?
হ্যাঁ। পরিস্থিতিটা মোটেই সহজ নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের একটা ভাল পরিকল্পনা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী খেলতে হবে। এখানে মানসিকতাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। গত মাসটা আমাদের কোভিড, চোট, অসুস্থতা, কোয়ারান্টইনের মধ্যে দিয়ে কেটেছে। প্র্যাকটিস খুবই কম পেয়েছি আমরা। এখন আমাদের পুরোপুরি পেশাদার হতে হবে এবং আমাদের মনে হওয়া দরকার, আমরা পারব।
রয় কৃষ্ণকে আমরা নম্বর নাইন হিসেবেই দেখে এসেছি বরাবর। কিন্তু ইদানীং তাঁকে ডান বা বাঁ দিকের উইং বরাবর খেলতে দেখা যাচ্ছে। কখনও একটু নেমেও খেলছেন। এগুলো কি সবই কৌশলের অঙ্গ?
আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, রয় শেষবার যখন উইঙ্গার হিসেবে খেলেছিল, তখন সাফল্য পেয়েছে। চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে ভাল গোলও পেয়েছিল। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধেও এ ভাবে খেলে গোল পেয়েছিল ও। জায়গা তৈরি করা এবং ওকে কাজে লাগানোটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তাই রয়, উইলি, কাউকো, প্রবীর—এদের কাউকে নিয়েই কোনও সমস্যা নেই।
প্রথম লেগে এটিকে মোহনবাগান ডিফেন্ডারদের মনসংযোগে ব্যাঘ্যাত ঘটল কেন?
কিছু কিছু সময়, খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়া খুব ভাল থাকে না। এটা খেলতে খেলতে হয়ে যায়। তবে সবসময় এই অজুহাত দেওয়া যায় না। ওদের আমি চিনি। ওদের চোখ-মুখ দেখে বুঝতে পারি, কতটা ক্লান্ত ওরা। তা ছাড়া মাঝে মাঝে ছোটখাটো ভুলও হয়ে যায়। কারণ, ফোকাস ঠিক মতো বজায় থাকে না। তাই গত ম্যাচে আমরা সমস্যায় পড়েছিলাম।
কোন কোন জায়গায় আপনাদের উন্নতি করতে হবে বলে মনে করেন?
অনেক জায়গাতেই। তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মানসিকতা। এক গোলে এগিয়ে থাকলে সবসময়ই ২-০ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। ২-০ হলে ৩-০ করার চেষ্টা করা উচিত। এই মানসিকতা দরকার।
টানা ১৫টি ম্যাচে অপরাজিত থাকার পরে হঠাৎ কী হল যে, আপনারা পরের দু’টো ম্যাচেই হারলেন?
শেষ ম্যাচে জামশেদপুর এফসি আমাদের কাছে খুব কঠিন হয়ে উঠেছিল। আমাদের কাছে ওটা ফাইনালের মতো ছিল, যেখানে আমাদের জিততেই হত। কিন্তু গত দুটো ম্যাচে আমাদের হারের কারণ আগেও বলেছি। যখন ডিসেম্বরে এই ক্লাবে যোগ দিই, তখন থেকে আমাদের কাছে প্রতিটি ম্যাচই ছিল ফাইনালের মতো। এ রকম ম্যাচ ২-৩টি ম্যাচ খেলতে হলে ঠিক আছে। কিন্তু যখন এ রকম ১৬টি ম্যাচ খেলতে হয়, তখন তো দলের ছেলেদের ক্লান্তি আসাই স্বাভাবিক। তবু আমি সৌভাগ্যবান যে ওরা তখন ভাল খেলছিল। কিন্তু গত দু’টি ম্যাচে আমাদের ভাগ্য ভাল ছিল না। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে একটার বেশি শট লক্ষ্যে রাখতে পারিনি আর হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে সেট পিসে আমরা মার খেয়ে গিয়েছি।
দ্বিতীয় লেগে ঘুরে দাঁড়াতে আপনাদের কী করতে হবে?
নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। ৯০ মিনিটের খেলায় তিনটে গোল হতেই পারে। এই মানসিকতা নিয়ে খেলতে হবে।
গত ম্যাচে আপনারা দু’টো গোল খেয়েছেন কর্নারে। সেটপিসে ডিফেন্ডারদের কী সমস্যা হচ্ছে?
এই ব্যাপারে আগেও বলেছি। ছোটখাটো ব্যাপারে সমানে ভুল হতে থাকলে ফোকাসটা নড়ে যায়। আসলে দলের ছেলেরা খুব ক্লান্ত। এখন আর প্রত্যেককে তাদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার সময় নয়। এখানে প্রত্যেক খেলোয়াড়কেই খাঁচাবন্দী জীবন কাটাতে হয়েছে। সবসময় ঘরের মধ্যে থাকো। বাসে চড়ে মাঠে যাও আবার ফিরে এসো। এটা খুবই কঠিন জীবন। ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাব মাঠেও তো পড়ে।
গত ম্যাচে হায়দরাবাদ দুটো উইং দিয়ে আক্রমণে উঠলেও আপনার দলের খেলোয়াড়দের দুই দিকে ব্লক করার প্রবণতা সে ভাবে দেখা যায়নি। এই ব্যাপারে কী বলবেন?
আসলে পরিকল্পনার ব্যাপারে এখানে কিছু বলা যাবে না। এটুকু বলতে পারি, দ্বিতীয় লেগে পরিকল্পনায় বদল আসবে।
ডেভিড উইলিয়ামস, তিরি আর হুগো বুমৌসের চোটের কী অবস্থা?
মোটেই ভাল না। শুধু ওরা নয়। রয়ের কথাই ধরুন। একমাস পরে ও এখন ৯০ মিনিট খেলতে পারছে। কার্লের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যাবে। মনবীরেরও হাঁটুতে ছোট চোট আছে। সত্যি বলতে কিছু কিছু চোট আছে, যেগুলো সহজে সারার নয়।
For all the latest Sports News Click Here