‘হাতই বাদ চলে যেত হয়ত’, ‘বিরল’ রোগ থেকে সেরে উঠে ফের LSG-কে জেতালেন মহসিন
শেষ ওভারে মাত্র ১১ রানের পুঁজি ছিল। উলটোদিকে ছিলেন ক্যামরুন গ্রিন ও টিম ডেভিডের মতো বিধ্বংসী ব্যাটার। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে ঘড়ির কাঁটা যখন ১১ টা ৩০ মিনিট ছুঁইছুঁই, তখন এক অবিশ্বাস্য ওভারের সাক্ষী থাকল লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে। ২০ তম ওভারে দুর্ধর্ষ বোলিং করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে রুখে দিয়ে পাঁচ রানে লখনউ সুপার জায়েন্টসকে জেতালেন মহসিন খান। যিনি শেষ ওভারে মাত্র পাঁচ রান দেন। দুটি ডট বল করেন। একটিও বাউন্ডারি হজম করেননি। আর সেই দুরন্ত শেষ ওভারের পর আবেগে ভেসে গেলেন উত্তরপ্রদেশের বাঁ-হাতি পেসার। তিনি জানান, অসুস্থতার কারণে যখন মাঠের বাইরে ছিলেন, তখন মনে হয়েছিল যে আর কোনওদিন মাঠে ফিরতে পারবেন না। এমনকী চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন যে আর এক মাস দেরি হলে হাতও বাদ দিতে হতে পারত।
মঙ্গলবার লখনউকে জেতানোর পর সাংবাদিক বৈঠকে মহসিন বলেন, ‘যত ক্রিকেটার আছেন, তাঁদের কারও যেন এরকম না হয়। কারণ এটা উদ্ভট অসুস্থতা ছিল। আমার ধমনী পুরো ব্লক হয়ে গিয়েছিল। হাত, স্নায়ু – সবকিছুতে ব্লকেজ হয়ে গিয়েছিল। সেইসময় (উত্তরপ্রদেশ) ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, রাজীব শুক্লা, আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজির সঞ্জীব গোয়েঙ্কা স্যার, গৌতি স্যার (গৌতম গম্ভীর), আমার পরিবার সমর্থন জুগিয়েছিল। ওঁরা আমায় অনুভব করাতে চাইছিলেন যে বড় কিছু হয়নি।’
আরও পড়ুন: LSG vs MI, IPL 2023: শেষ ওভারে অসাধ্যসাধন, ICU থেকে ফেরা বাবার কথা মনে করে আবেগপ্লুত মহসিন
সকলকে পাশে পেলেও লড়াইটা যে কঠিন ছিল, তা জানাতে ভোলেননি মহসিন। তিনি বলেন, ‘সার্জারির আগে এবং সার্জারির পরে প্রচুর লড়াই করেছি। আমার জন্য ওই সময়টা অত্যন্ত কঠিন ছিল। সবাই আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন। একটা সময় আমি আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম যে আমি ফের ক্রিকেট খেলতে পারব। কারণ আমার হাতও উঠত না। হাত সোজা হচ্ছিল না।’ সেইসঙ্গে মহসিন বলেন, ‘চিকিৎসকরা বলেছিলেন যে এক মাস দেরি হলে হাত কাটতেও হতে পারত।’
বাবাকে উৎসর্গ
গত বছর আইপিএলের অন্যতম সেরা প্রতিভা ছিলেন মহসিন। তাঁর আগুনে বোলিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন ব্যাটাররা। ন’টি ম্যাচে ১৪ টি উইকেট পেয়েছিলেন। ইকোনমি রেট ছিল ৫.৯৬। গড় ছিল ১৪.০৭। সেরা বোলিং ফিগার ছিল – চার উইকেটে ১৬ রান। কিন্তু তারপরই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। হয়েছিল অস্ত্রোপচার। তারপর দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন। এবারের আইপিএলের শুরুতেও ছিলেন না। সেইসময় লখনউ তো তাঁর অভাব অনুভব করছিল। সেইসঙ্গে বিশ্বের তাবড়-তাবড় প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও অপেক্ষা করছিলেন যে মহসিন কবে মাঠে ফিরবেন।
অবশেষে মে’র প্রথম সপ্তাহে দলে ফেরেন মহসিন। প্রথম ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে বল করেননি। বৃষ্টির জন্য সেই ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচটা অবশ্য ভালো কাটেনি। দীর্ঘদিন পরে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে বল করে তিন ওভারে ৪২ রান হজম করেছিলেন। নিয়েছিলেন একটি উইকেট। মুম্বই ম্যাচে অবশ্য মহসিন বুঝিয়ে দিলেন যে তিনি এক মরশুমের ‘স্টার’ ছিলেন না। তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া। মঙ্গলবার তিন ওভারে ২৬ রান দিয়ে এক উইকেট নেন। আর শেষ ওভারে ১১ রানের পুঁজি রক্ষা করেন। তাঁর ঢিমেগতির বল এবং ইয়র্কারের কোনও জবাব ছিল না গ্রিন এবং ডেভিডের কাছে। যাঁরা শেষপর্যন্ত মহসিনের ওভার থেকে পাঁচ রানের বেশি তুলতে পারেননি।
আরও পড়ুন: LSG-র কাছে হেরে IPL 2023 Points Table-এ দ্বিগুণ ক্ষতির সামনে MI, দেখে নিন শীর্ষ চারে কারা রয়েছে
সেই দুরন্ত বোলিংয়ের পর মহসিন জানান, গত ১০ দিন ধরে তাঁর বাবা আইসিইউতে ভরতি ছিলেন। সোমবারই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। আর তারপর মঙ্গলবার তিনি যে পারফরম্যান্সটা করলেন, সেটা বাবাকে উৎসর্গ করেন উত্তরপ্রদেশের পেসার।
উত্তরপ্রদেশের পেসারের কথায়, ‘এক বছর পরে খেলছি। চোট পেয়েছিলাম। আমার জন্য ওটা অত্যন্ত কঠিন সময় ছিল। গত বছর যেভাবে বোলিং করেছিলাম, আজ মনে হচ্ছে যে সেভাবেই (বোলিং) করতে পেরেছি। তাই আমি অত্যন্ত খুশি। সম্প্রতি আমার বাবাও আইসিইউতে ছিল। কালই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। আমি বাবার জন্যও এই ম্যাচটা খেলেছিলাম। বাবা হয়ত টিভিতে ম্যাচটা দেখছে। বাবার জন্য ….. (খেলছিলাম আমি)। গত ১০ দিন ধরে আমার বাবা আইসিইউতে ছিল। বাবা অত্যন্ত আনন্দিত হবে নিশ্চয়ই।’
(IPL 2023: আইপিএল সংক্রান্ত যাবতীয় টাটকা খবর ও আপডেটের জন্য হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার স্পেশাল পেজে – ক্লিক করুন এখানে, তাহলেই প্রবেশ করবেন আইপিএলের দুনিয়ায়)
(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)
For all the latest Sports News Click Here