সৃজিতকে নিয়ে হেডলাইন করবেন না প্লিজ, আমার কাজ নিয়ে করুন: মিথিলা

মন্টু পাইলট-২র হাত ধরে OTT-তে ডেবিউ করে ফেলেছেন আগেই। স্বল্পক্ষণের জন্য হলেও ‘আয় খুকু আয়’ ছবিতে মিথিলার মুখ দেখেছেন বড় পর্দার দর্শকরা। আর শুক্রবার ৭ জুলাই মুক্তি পেয়েছে মিথিলার এপার বাংলার প্রথম ছবি ‘মায়া’। সেই ছবি নিয়েই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন মিথিলা। সঙ্গে উঠে এল নানান টুকিটাকি ব্যক্তিগত বিষয়।

কেমন আছেন?

মিথিলা: বেশ ভালো (হাসি)।

‘মায়া’ মুক্তি পেয়েছে, প্রিমিয়ারে গিয়ে ছবি নিয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া পেলেন?

মিথিলা: প্রিমিয়ারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। ছবিটা লম্বা, অনেকেই এতটা লম্বা ছবি দেখতে অভ্যস্ত নন। তবে আবার অনেকেরই ভালো লেগেছে। সকলের পারফরম্যান্স নিয়ে ইতিবাচক কথা শুনেছি। সকল অভিনেতারা পুরোটা দিয়েছেন, সবাই দারুণ। আর এটা যেহেতু ম্যাকবেথের একটু ভিন্ন অ্যাডাপটেশন, তো সেটা কারো কারো খুব ভালো লেগেছে।

‘মায়া’তে তোমার চরিত্রটি ঠিক কেমন?

মিথিলা: এই ছবিটা আসলে ‘মায়া’ মানে আমারই গল্প, যেটা ম্যাকবেথের প্রেক্ষাপটে গল্প বলা হয়েছে। ‘মায়া’র দৃষ্টিকোণ থেকেই পুরোটা দেখানো হয়েছে। ছবিতে কখনও কখনও মায়াকে ‘ম্যাকবেথ’-এর সেই ডাইনিও মনে হতে পারে। ম্যাকবেথে যেমন তিন ডাইনিকে ভবিষ্যদ্বাণী করতে দেখা যায়, এটা এখানে ‘মায়া’ করে। এটা যদিও ‘ম্যাকবেথ’-এর সরাসরি অ্যাডাপটেশন নয়, এখানে সৃজনশীলতার খাতিরে পরিচালক (রাজর্ষি দে) কিছু বদলও এনেছেন। বিভিন্ন বয়সের টাইমলাইনে ‘মায়া’কে দেখানো হয়েছে।

‘মায়া’ সেই অর্থে কলকাতায় আপনার ডেবিউ ছবি, কতটা স্পেশাল?

মিথিলা: ভীষণই স্পেশাল এটা। আমি তিন বছরের বেশি কলকাতায় আছি, এই প্রথম এখানে কোনও ছবি মুক্তি হল। এটা গুরুত্বপূর্ণ ছবি, আমার চরিত্রটাও লিড। অবশ্যই চেয়েছিলাম এই বাংলাতেও আমার ছবি মুক্তি পাক। আমার অভিনয় এখানকার মানুষও দেখুক। শেষপর্যন্ত সেটাই হল।

<p>'মায়া' রূপে মিথিলা</p>

‘মায়া’ রূপে মিথিলা

পরিচালক রাজর্ষি দে-র সঙ্গে আলাপ কি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরেই?

মিথিলা: হ্যাঁ, রাজর্ষিদার আমার ফোন নম্বর সৃজিতের থেকেই নিয়েছিলেন, তারপর উনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে রাজর্ষিদার সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর জেনেছি, আমার বাংলাদেশের কিছু কাজ উনি আগেই দেখেছেন। কারণ, আমার কাজ না দেখে থাকলে কেউ এমন একটা চরিত্র দিতে কখনওই সাহস করবেন না। পরে জেনেছি, এখানে অনেকেই বাংলাদেশের অনেক কাজ দেখেন, আমার অভিনয়ও অনেকে দেখেছেন।

আপনি তো অভিনয়ের পাশাপাশি চাকরিও করেন…

মিথিলা: আমি আসলে চাকরিটাই করি ফুল টাইম। মাঝেমধ্যে অভিনয় করি। হয়ত নিয়মিত অফিস যেতে হয় না, তবে সপ্তাহে ৫দিন অফিস করি, তাও গুরুত্বপূর্ণ পদে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আমায় যেতে হয়। আবার ঢাকাতেও যেতে হয়, কারণ ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের হেড কোয়ার্টার ওখানেই। ওটা নিয়েই থাকি কারণ, ‘আর্লি চাইল্ডহুড ডেভলপমেন্ট’-এর হেড হিসাবে অনেকগুলো দায়িত্ব রয়েছে।

চাকরি আর শ্যুটিং, ম্য়ানেজ করেন কীভাবে?

মিথিলা: আসলে সারাজীবনই এভাবেই কাজ করি। বাংলাদেশে যখন আমি নাটক ও টেলিভিশন করতাম, তখনও চাকরি করেই অভিনয় করেছি। হয়ত আমি আমার সমসাময়িকদের মতো অনেক অভিনয় করিনি, বেছে কিছু ভালো কাজ করেছি। সপ্তাহন্তে ছুটির দিনগুলোর কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশের পরিচালকরা অনেক আগে থেকে ডেট নিয়ে রাখতেন। কারণ, আমার পক্ষে বললেই সঙ্গে সঙ্গে ডেট বের করা সম্ভব নয়। কাজের জন্য প্রায়ই আমি বাইরেও থাকি। এই তিনবছরে আমি এখানে মাত্র তিনটে ছবি করেছি। ‘নীতিশাস্ত্র’, ‘মায়া’ আর ‘মেঘলা’। ‘মায়া’র জন্য দেখা গেল আমার ৮ দিন শিডিউল ছিল। তো একবছরে ৮ দিন বের করতেই পারি। (হাসি) আসলে পরপর রিলিজ দেখে মনে হবে অনেক কাজ করছি, কিন্তু আসলে তা নয়। আমি এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৪টে ছবি করেছি।

ওপার বাংলায় কী কী ছবি করছেন?

মিথিলা: বাংলাদেশেও তিনটি ছবি পাইপলাইনে আছে। বাংলাদেশে সরকারি অনুদানে ছবি হয়, যেগুলোতে কাজ করা খুব সম্মানের। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সরকারি তরফে চিত্রনাট্য বাছা হয়। সেই ছবির মধ্যে তিনটেতে কাজ করেছি। একটা ‘জলে জ্বলে তারা’। সেখানেও কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘তারা’ (আমি)র জীবনের গল্প। আরেকটা গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’, যেটা ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ থেকে তৈরি হচ্ছে। এটা মিউজিক্যাল গল্প। ওখানে আমি আবার মূল খলনায়িকা। আরেকটা হল শিশুদের অ্যাডভেঞ্চারের উপর ছবি ‘সোনার পাহাড়’। ওখানে আমি ‘মেলি খালা’র চরিত্রে, খালা মানে ‘মাসি’র চরিত্রে।

বাংলাদেশ ও কলকাতা, দুই ইন্ডাস্ট্রির পার্থক্য কোথায়? কী মনে হয়?

মিথিলা: কলকাতা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অনেক পুরনো, অরগানাইজড। এখানে গিল্ড আছে, একটা কাঠানো আছে। এদিকে বাংলাদেশে যে পুরনো FDC ছিল, যেটাকে ঢালিউড বলা হত। সেই কাঠামোটা আর ওখানে কাজ করছে না। এই যা ‘হাওয়া’, ‘সুরঙ্গ’, ভালো ভালো ছবি হচ্ছে সেগুলো FDC-র বাইরে গিয়েই হচ্ছে। তবে হ্য়াঁ, FDC-র কিছু নিয়মনীতি মেনেই ছবি করতে হয়। FDC-র অনুমতি নিতে হয়, ওরাই ছবি সেন্সার করে। এটা তো গেল কাঠামোগত পার্থক্য। আর এছাড়া আমার মনে হয় এই বাংলায় অনেক বেশি সাহিত্য নির্ভর ছবি হয়। আর বাংলাদেশে বেশিরভাগই মৌলিক গল্প।

অভিনয়, চাকরি, ঢাকা-কলকাতা, আফ্রিকা ঘুরে জীবন কাটছে, এতকিছুতে কখনও ক্লান্ত লাগে না?

মিথিলা: কখনও কখনও ক্লান্ত তো লাগে। তবে আমি আবার বসে থাকলে হাঁপিয়ে উঠব। আমি চাপেই ভালো পারফর্ম করি (হাসি)। একসপ্তাহ টানা বসে থাকতে হলে পারব না। একটা সৃজনশীল, কিছু না কিছু কাজ নিয়ে থাকতেই ভালো লাগে। আর এছাড়া আমার মেয়ে আয়রার প্রতি দায়িত্বও আছে।

<p>মেয়ে আয়রার সঙ্গে মিথিলা</p>

মেয়ে আয়রার সঙ্গে মিথিলা

আয়রাও তো আপনার সঙ্গেই ঘুরে বেড়ায়…

মিথিলা: এই যে PHD-র জন্য সুইৎজারল্যান্ডে গিয়েছিলাম। আয়রার স্কুল ছুটি ছিল বলে ওকেও নিয়ে গিয়েছি। অফিসের কাজে আফ্রিকায় যখন যাই, আয়রার স্কুলের ব্রেক থাকলে সেখানেও ওকে সঙ্গে নিয়ে যাই। আর কলকাতায় আসার পর থেকে আমি তো অফিস যাই না, বাড়ি থেকেই সাধারণত কাজ করি।

কাজের জন্য তানজানিয়া, সাউথ সুদান বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। তানজানিয়া, উগান্ডা একরকম দেশ। আবার সাউথ সুদান তো যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশ। তবে আমি তো শিশুদের নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে কাজ করি, সেটা খুব উপভোগ করি। পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তেই শিশুদের সরলতা সেই এক। আর বিভিন্ন দেশের এই যে সংস্কৃতিগত পার্থক্য, এটাকে উপভোগ করি, অনেক কিছু শিখতে পারি। আয়রাও উপভোগ করে। বাচ্চাদের ভাষা লাগে না। আফ্রিকার শিশু হয়ত ওদের ভাষায় কথা বলছে, আয়রা ইংরাজি বলছে, তাতে কোনও সমস্যা হয় না। ভাষা যাই হোক ওরা কিন্তু একসঙ্গেই খেলে।

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই যে বিচ্ছেদের গুঞ্জন কেন বারবার…

মিথিলা: আমার মনে হয় যেকোনও দাম্পত্যে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, খিটিমিটি,খুবই সাধারণ বিষয়। সেটা কোথা থেকে কীভাবে খবরে চলে আসছে বুঝতে পারি না। আমি যেহেতু বাইরে বাইরে থাকি, নিজেদের মধ্যে বিষয়গুলির সমাধান হওয়ার আগেই বিষয়গুলো পাবলিক হয়ে যায়। এবার যদি সত্যিই সিরিয়াস কিছু ঘটে, সেটা তো আমরা জানাবই। তার অপেক্ষা না করে এই যে গুঞ্জন বলে খবর হয়ে যাচ্ছে। সত্যিই বিচ্ছেদ হলে এরপর কেউ বিশ্বাস করবেন না। সেই পালে বাঘ পড়ার মতো হবে। (হাসি)  

ইদে আসার কথা ছিল, নাকি স্বামীর অসুস্থতার খবরে ছুটে এলেন?

মিথিলা: আসলে ইদের ঠিক পরদিন আসব ভেবেছিলাম। ইদের দিনটা ঢাকায় থাকার কথা ছিল, পরদিন কলকাতায় আসতাম। তার মধ্যে আমার শাশুড়িমা মেসেজ করলেন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলে সৃজিতের বুকে ব্যাথা হচ্ছে। ডাক্তার দেখিয়েছে বলেছেন অ্যাঞ্জিওগ্রাম করাতে। ওর আসলে তো ফুড হ্য়াবিট খারাপ, ওজন বেশি, হাই কোলেস্টেরল, তো সবমিলিয়ে ডাক্তার অ্যাঞ্জিওগ্রামের কথা বলেছিলেন। এটা শুনে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে টিকিট পাচ্ছিলাম না। কারণ ইদে সবাই বেড়াতে যায়। শেষপর্যন্ত ২৬ তারিখ রাত ২টোর সময় টিকিট পাই। ২৭ তারিখ সকালেই চলে আসি। আর ২৮ তারিখ অ্যাঞ্জিওগ্রাম হয়েছে। যদিও তাতে কিছু পাওয়া যায়নি। ওর হার্ট ভালো আছে। আর তারমধ্যে সেটা নিয়েও তো কত বাজে খবর হয়েছে।

<p>মিথিলা ও সৃজিত</p>

মিথিলা ও সৃজিত

সৃজিতের ‘দশম অবতার’-এ জয়া আহসান, একসময় ওঁদের নিয়েও অনেক কথা শোনা যেত, ফের একসঙ্গে কাজ করছেন, কী বলবেন?

মিথিলা: সে তো কতজনের সঙ্গেই কতকিছু শোনা গিয়েছে। সকলকে বাদ দিলে আর কাউকে কাজের জন্য পাবে না। (হাসি) পুরনো কারোর সঙ্গে সম্পর্ক থাকতেই পারে, তবে আর কাজ করবেন না সেটা তো নয়। কাজটা তো কাজই। এটা নিয়ে আমার আসলে কোন ভাবনা নেই। আসলে এগুলো আমার জন্য খুবই অবান্তর প্রশ্ন। আমি জয়া আপাকে অনেক আগে থেকে চিনি, সৃজিতেরও আগে। আমি যদি ঝামেলা করি, তাহলে তো কাজই হবে না। আমি এসব নিয়ে ঝামেলা করি না, করবও না। (হাসি) বিয়ের ৩ বছর হয়ে গেছে, এখন এই সম্পর্কটা স্টেবল। এসব আর ভাবি না। আর এসব নিয়ে রাগ করে কী করব! এতে কার কী লাভ! কারোর কোনও লাভ হয় না। কারোর অতীত আমি তো বদলাতে পারব না, সেটা নিয়ে রাগ করে লাভ নেই। তার থেকে বর্তমানে ভালো থাকি।

এধরনের গুঞ্জনে আয়রার উপরও তো প্রভাব পড়ে?

মিথিলা: এখনও পর্যন্ত ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ও অ্যাক্টিভ নয়, ও খবরের কাগজও সেভাবে পড়ে না। তাই এসব থেকে এখনও ও দূরে। তবে ১০ বছর হয়ে গেছে, এবার তো ও ধীরে ধীরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসবে, খবরের কাগজ পড়বে। তাই আমি মাঝে মধ্যে চিন্তিত হয়ে পড়ি। মাঝে মাঝে রাগ হয়, এধরনের খবর করার আগে কেউ ভাবে না। আমার এসব খবরে কিছুই যায় আসে না। ব্যক্তিগত জীবনটা একান্তই আমার। তবে ওকে যেভাবে বড় করছি, তাতে আমি চেষ্টা করব বোঝানোর যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কীভাবে কাজ হয়। কিন্তু ও স্কুলে যাবে, বিভিন্ন জায়গায় যাবে, নানান কথা শুনবে। পরে যাতে সবকিছু সামলাতে পারে, সেভাবেই বড় করছি ওকে। ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমাকে ও সবটাই বলতে পারে।

সৃজিত মুখোপাধ্যায় ‘মায়া’ দেখে আপনার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন…

মিথিলা: হ্য়াঁ এই প্রথম, তাও জনসমক্ষে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটা আমার ভালো লাগার জায়গা। ও সাধারণত লেখে না, স্ত্রী হলে আরও না। তাই যখন লিখেছে, বিশ্বাস করছি, যে নিশ্চয় ভালো হয়েছে। যখন পাশে বসে ছবি দেখছিল, ভাবছিলাম কী আবার বলবে! (হাসি) 

আর একটা কথা, এই যে এত কথা বললাম, আমার কাজ নিয়ে লিখবেন প্লিজ, সৃজিতকে দিয়ে হেডলাইন করবেন না…

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

—-

 

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.