সুরের জগৎকে পিছনে রেখে বিদায় নিলেন ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র বাপি’দা
‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র সমস্ত ঘোড়াই একে একে বিদায় নিয়েছেন বহুদিন আগেই। শেষ ঘোড়া, তাপস দাস ওরফে ‘বাপিদা’ও অনেক লড়াই করেছেন। দীর্ঘদিন লড়াই চালিয়েছেন ক্যানসারের সঙ্গে। অবশেষে তিনিও হার মানলেন। থামল তাঁর জীবনযুদ্ধ। নিভল মহীনের ঘোড়াগুলির বাতি। চলে গেলেন বাংলা সঙ্গীত জগতের সবার প্রিয় বাপিদা।
বাংলা গানের জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছিল একটি দল। আমূল পরিবর্তন এনেছিল। যাঁদের গান আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে, যে প্রজন্ম তাঁদের পারফরমেন্স কোনওদিন স্টেজে দেখেনি তাঁদেরও একটা বড় অংশ যাঁদের ভক্ত, সেই দল হল এক এবং একমাত্র ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। ১৯৭৫ সালে তৈরি হয়ে বাংলার প্রথম রক ব্যান্ড। মাঝে ৪৭ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আজও এই ব্যান্ডের গানগুলির জনপ্রিয়তা এতটা হারায়নি। গান না হারালেও গানের স্রষ্টাদের অধিকাংশই একে একে পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। এবার চলে গেলেন তাঁদেরই অন্যতম বাপিদাও।
লাং ক্যানসারের তৃতীয় স্টেজে ছিলেন তিনি। অর্থাভাব থাকায় চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারছিলেন না একটা সময়। এই দুরারোগ্য ব্যাধির বিপুল খরচের কাছে একটা সময় তাঁর পরিবার যেন নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়। তখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান বর্তমান সময়ের একাধিক বাংলা ব্যান্ডের গায়করা।
বাংলা গানের জগতের এই মহীরুহর পথ চলা যাতে না থামে সেই জন্যই ক্যাকটাসের সিধু থেকে রূপম ইসলাম, অর্ক সহ গৌরব চট্টোপাধ্যায় সকলেই সোশ্যাল মিডিয়াকে বেছে নেন। তাঁরা সকলের কাছে আবেদন করেন তাপস দাসের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। শুরু হয় ক্রাউড ফান্ডিং। যদিও এরপর বিশেষ ক্রাউড ফান্ডিং করতে হয়নি। সরকারের তরফে তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়। কিন্তু সেই লড়াই বেশিদিন জারি রইল না। অচিরেই থামল তাঁর পথ চলা।
তবে তাঁর প্রাণ শক্তি যে কতটা ছিল সেটা সকলেই জানেন। একদিকে যখন এই মারণ কর্কট রোগ তাঁর বুকে থাবা বসিয়েছে, জীবনে বহু বিচ্ছেদ যন্ত্রণা সয়েছেন তখনও কিন্তু তিনি শেষদিন পর্যন্ত গানকে ছাড়েননি। চলে যাওয়ার কয়েক মাস আগে পর্যন্ত তিনি মঞ্চে উঠে গান গেয়েছেন। নাকে মুখে নল লাগানো তবুও চলতি বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হওয়া সঙ্গীত মেলায় তিনি ভালোবাসো গানটি গেয়ে আবার দর্শকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন।
গান থেকে এই সমস্ত স্মৃতিই ভক্তদের জন্য রেখে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন বাপিদা। থেকে গেল পৃথিবীটা নাকি, আমার প্রিয় ক্যাফে, তোমায় দিলাম, মানুষ চেনা দায়, তাকে তাড়াই যত দূরে, ভালোবাসি, ঘরে ফেরার গানের মতো বহু কালজয়ী গান। শ্রোতাদের কাছে, শ্রোতাদের হয়ে থেকে গেল মহীনের ঘোড়াগুলি। অবিনশ্বর, চিররঙিন, চিরস্থায়ী হয়ে।
For all the latest entertainment News Click Here