সুরের আলোকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়: জন্মদিনে ফিরে দেখা

রণবীর ভট্টাচার্য

এটা হেমন্ত কাল নয়, তবু আজ যেন সুর জুড়ে স্রেফ হেমন্ত আবহ। আজ কিংবদন্তি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিবস। ধুতি, শার্ট আর সুরের এই অপরূপ রসায়ন বাঙালি এর আগে সেরকম দেখেনি, সামনের ১০০ বছরেও দেখার সম্ভাবনা কম। বাঙলা তাকে চেনে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বলে, আর বাকি ভারত বা তার চেয়েও বেশি হেমন্ত কুমার বলে।

গ্রামাফোন পেরিয়ে ইউটিউব বা স্পটিফাইয়ের জমানায় এখন একই রকম ভাবে প্রাসঙ্গিক তিনি। বাঙালির সুখ দুঃখ, মান, অভিমানের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী আজও তিনি। আর যদি বাংলা বিনোদনের সোনালি দিনের কথা বলা হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় হেমন্ত, মান্না, সলিল চৌধুরী নামগুলো উঠে আসবে। সঙ্গীতের সাধক হওয়ার তাগিদে আর ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করা হয় না তার। কিন্তু নাসিরউদ্দিন স্কুল বা ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের পর্ব কিংবা পরবর্তীকালে আজকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বত্র তার ছাপ রেখে গিয়েছেন তিনি। তাঁর চলে যাওয়ার তিন দশক পরেও তার সৃষ্টির জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি।

শৈলেশ দত্তগুপ্তর কাছে গানের তালিম নিয়েছিলেন তিনি, তবে তার গানের ছাঁচ তৈরি হয়েছিল আরেক প্রবাদপ্রতিম গায়ক পঙ্কজ মল্লিকের আদলে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিতে শুরু করলেও ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁয়ের চলে যাওয়ায় অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

১৯৩৭ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত গ্রামাফোন কোম্পানি অব ইন্ডিয়ার জন্য তিনি গান রেকর্ড করেছেন। প্রথম বাংলা গান রেকর্ড ছিল ‘জানিতে যদি গো তুমি’ আর হিন্দিতে ‘ কিতনা দুখ ভুলায়া তুমনে’ – আর বাকিটা ইতিহাস! বাংলা সিনেমায় প্লে ব্যাকের কথা বলতে গেলে ১৯৪১ সালে মুক্তি পাওয়া নিমাই সন্ন্যাস সিনেমায় প্রথমবার গান রেকর্ড করেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। হিন্দির ক্ষেত্রে ১৯৪৪ সালে ইরাদা সিনেমার জন্য পণ্ডিত অমরনাথের সুরে প্রথমবার গান রেকর্ড করেন তিনি।

আজকের দিনে যখন গায়ক গায়িকা কিম্বা সুরকাররা, সমাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকেন, তখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় চল্লিশের দশকে আইপিটিএ এর সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন। আর এখানেই তার আলাপ হয় সলিল চৌধুরীর সাথে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর সলিল চৌধুরী জুটির ‘গাঁয়ের বধূ’ অসামান্য এক সৃষ্টি যা তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল সর্বত্র। আর হিন্দি সিনেমায় গায়ক কিম্বা সুরকার, সবেতেই সফল হয়েছেন তিনি।

ভাষা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তার কাছে। রবীন্দ্রসংগীত আর উত্তম কুমার – এই দুটি যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছিল ওনার গানের ভাষায়। আর পাবলিক ফাংশনে তার পারফরম্যান্স তো ভোলার নয়। আজকের যুগে নেহা কক্কর, ধ্বনি ভানুশালী থেকে সবাই যখন অটো টিউনের ভরসায় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়, তখন অবলীলায় একের পর এক গান গেয়েছেন তিনি। বেসিক রেকর্ড না রুপোলি পর্দা? হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিলেন দুই দিকেই স্বাচ্ছন্দ্য। তাই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরের রোমান্টিকতা অমর, যা নিখাদ বাঙালির নয়, অসমুদ্রহিমাচলের। এখানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সার্থকতা।

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.