সুন্দরবনের গাইড থেকে ‘বনবিবি’ হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে পর্দায় ফিরছেন পার্নো
সক্রিয় রাজনীতি থেকে বর্তমানে বেশ কিছুটা দূরেই রয়েছেন পার্নো মিত্র। ফের একবার রুপোলি পর্দাতেই দেখা যাবে তাঁকে। সৌজন্যে, পরিচালক রাজদীপ ঘোষের ছবি ‘বনবিবি’। যদিও এই ছবিকে তাঁর ‘কামব্যাক’ কিংবা ‘ফেরা’ বলতে আপত্তি রয়েছে পার্নোর। তাঁর যুক্তি, ‘করোনাকালে পুরো ইন্ডাস্ট্রি তো বন্ধ ছিল। কাজ কোথায় হচ্ছিল? আর আমার তো একাধিক ছবি এখনও মুক্তির অপেক্ষায়। করোনার জন্যই সেসব ছবি মুক্তির তারিখ পিছিয়েছে। তাছাড়া যখন যে কাজটা করি মন দিয়ে করি। রাজনীতি যখন করেছি সেইসময় অভিনয় করার সময় কোথায় ছিল?’
ফেরা যাক ‘বনবিবি’ প্রসঙ্গে। সুন্দরবনের লোকগাথা ও তার বিভিন্ন চরিত্রকে বর্তমানের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই ছবিতে তুলে ধরবেন পরিচালক। সহজ কথায় সুন্দরবনের বহুল প্রচলিত বনবিবি ও দক্ষিণ রায়ের লোকগাথাকে কেন্দ্র করেই এই ছবি। ‘বনবিবি’ ছবিতে একজন বিধবার চরিত্রে দেখা যাবে পার্নোকে। আরও ভালো করে বললে বাঘ-বিধবা। বাঘ বিধবা অর্থাৎ যাঁর স্বামীকে বাঘে খেয়েছে। ছবিতে পার্নোর অভিনীত চরিত্রের নাম রেশম। কীভাবে ‘দক্ষিণ রায়’-এর সঙ্গে লড়াই করে ‘বনবিবি’ হয়ে উঠল ‘রেশম’ তা নিয়েই এই ছবির গল্প।
‘বনবিবি’ প্রসঙ্গে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পার্নো জানান যে এই ছবির প্রস্তাব পেয়ে প্রথম থেকেই আগ্রহী হয়েছিলেন তিনি। তাঁর প্রথম কারণ, এই ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য। অভিনেত্রীর কথায়, ‘সুন্দরবনের প্রেক্ষাপটে বনবিবি লোকগাথাকে যেভাবে এই ছবির চিত্রনাট্যে বাঁধা হয়েছে তা শুনে চমকে উঠেছিলাম। আমি নিশ্চিত এ ধরনের বিষয় নিয়ে টলিউডে আগে কাজ হয়নি। তার ওপর রেশম চরিত্রটির যেভাবে উত্তরণ ঘটেছে এই ছবিতে তা যেন কোথাও নারীবাদের জয়গান গেয়েছে। তাছাড়া চিত্রনাট্য পড়েই বুঝেছিলাম রেশমের সঙ্গে বেশ কিছু ব্যাপারে আমারও যথেষ্ঠ মিল রয়েছে।বাস্তবে আমি গড়িয়াহাট এবং রেশম চরিত্রটি সুন্দরবনে থাকলেও দু’জনেই ভীষণভাবে নারীবাদে বিশ্বাসী’।
সামান্য থেমে পার্নো আরও বলেন, ‘এই ছবি আদতে নারী সংগ্রামের গল্প, সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে তাঁদের জয়ী হওয়ার গল্প। নারীদের উদ্দেশে সমাজের চাপিয়ে দেওয়া নানান ‘নিয়ম’ এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার কথাই তুলে ধরবে ‘বনবিবি’। সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত গ্রামের এক যুবতী বিধবা ‘রেশম’ কীভাবে সমাজের চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে ফের ভালোবাসার স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি অন্য নারীদেরও উত্তরণের পথ দেখায় সেসব উঠে আসবে এই ছবিতে’। প্রসঙ্গত, পেটের দায়ে সুন্দরবন এলাকাতেই গাইডের কাজ করে রেশম । পর্যটকদের সুন্দরবন ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ঘুরে দেখায় সে। সঙ্গে গ্রামের ছোট ছোট শিশুদের শিক্ষিত ও সাহসী করে তোলার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে ‘রেশম’।
ছবিতে মুম্বই খ্যাত বাঙালি অভিনেতা দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য অভিনীত চরিত্র ‘জাহাঙ্গীর’ এর বিরুদ্ধেই অস্তিত্বের লড়াইয়ে নামবেন পার্নো। দুঃসাহসী ও খুনে এই জাহাঙ্গীর বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ফিরেছিল বলে গোটা সুন্দরবনের অধিবাসীদের কাছে তাঁর পরিচিতি ‘খোঁড়া বাদশাহ’ নামে। এহেন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে তাঁর কায়েম করা তন্ত্র-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয় ‘রেশম’। তাঁর অভিনীত ‘রেশম’ এর সঙ্গে ‘জাহাঙ্গীর’-এর টক্করই ছবির অন্যতম উপজীব্য।শেষপর্যন্ত সে কী সফল হবে? তা নিয়েই এগোবে ‘বনবিবি’-র গল্প।
উঠল রাজনীতির প্রসঙ্গও। আপাতত রাজনীতি সম্পর্কিত কোনও ব্যাপারে মন্তব্য করতে না চাইলেও বিজেপি-র কোনও নেতা এই ছবির জন্য তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কি না প্রশ্নের উত্তরে মিষ্টি হেসে পার্নো জানালেন, ‘নম্বরটা বেশ কিছুদিন হল বদলে ফেলেছি। সেই ফোন নম্বরটি খুব বেশি মানুষের কাছে নেই। তাই শুভেচ্ছা জানাতে পারেননি তেমন কেউই’।
‘বনবিবি’-তে পার্নো ও দিব্যেন্দু ছাড়াও রয়েছে আর্য, ভাস্কর, সুলগ্নার মতো একগুচ্ছ নতুন মুখ।বিশেষ দু’টি চরিত্রে রয়েছেন সোহিনী সরকার এবং রূপাঞ্জনা মিত্র। বর্তমানে জোরকদমে কলকাতা থেকে সামান্য দূরে চলছে এই ছবির শ্যুটিং। দ্বিতীয় দফার শ্যুটিং রয়েছে সুন্দরবনে। সেখানেও গোটা ইউনিটের সঙ্গে পাড়ি দেবেন ‘রেশম’।
For all the latest entertainment News Click Here