‘সময় অনেক এগিয়েছে, সাউন্ডে বদল এসেছে’, বাংলা ছবির গান নিয়ে কী মত নবারুণের
অনুপম রায় ব্যান্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং অবশ্যই বাংলা ইন্ডাস্ট্রির প্রতিভাবান শিল্পী তিনি। একই অঙ্গে তাঁর অনেক রূপ, একদিকে যেমন ভালো কিবোর্ড বাজান, তেমনই ভালো গান গান, মিউজিক কম্পোজ করা হোক বা অ্যারেঞ্জ করা সবেতেই সুদক্ষ তিনি। কার কথা বলছি? ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’ ছবির অন্যতম কম্পোজার নবারুণ বসুর। সামনেই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর আরও একটি কাজ, ‘বিয়ে বিভ্রাট’। তার আগেই HT বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।
কেমন আছেন?
নবারুণ: এই তো ভালোই। কাজকর্মের মধ্যেই আছি বেশ।
তারপর, কত বছর হল এই গান বাজনার জগতে?
নবারুণ: প্রফেশনালি ১৫ বছর হয়েই গেল। যদিও আমি এমন একটা পরিবারে বড় হয়েছি যেখানে গানের পরিবেশ ছোট থেকেই ছিল। আমার মা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিল্পী। বাবা আবার ভীষণ ব্যান্ড মিউজিক শুনতে পছন্দ করেন। ফলে বাড়িতে দুটোরই চর্চা ছিল। আমি নিজেও ছোটবেলায় সেতার শিখেছি, স্কুল লাইফের শেষে এসে কিবোর্ড শিখতে শুরু করি।
ইন্ডাস্ট্রিতে আসা কীভাবে?
নবারুণ: সৌভিকদা অর্থাৎ এখন সবাইকে যাঁকে স্যাভি বলেই চেনেন আমি তাঁর কাছে কিবোর্ড শিখতাম। তিনিই আমায় প্রথম স্টুডিও সেশনে পাঠান। সেখান থেকেই আর কী। এছাড়া আমি নিজেও একাধিক ব্যান্ডের সঙ্গে বহুদিন ধরেই যুক্ত। দ্য কালার্স বলে একটি ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, সেখানেই আমার প্রথম অ্যালবাম রেকর্ডিংয়ের অভিজ্ঞতা হয়। এরপর অনুপমদা (অনুপম রায়) যখন ব্যান্ড তৈরি করছেন তখন তিনি স্যাভিদার থেকে আমার নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করেন। তারপর অনুপমদার সঙ্গেই কাজ করতে করতে মিউজিক প্রোডাকশনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ি। গান অ্যারেঞ্জ করতে শুরু করি, মিউজিকের বিভিন্ন দিকের সঙ্গে যুক্ত হই।
মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে প্রথম কাজ?
নবারুণ: এটা ২০১৫ সালে হয়। সৌকর্য (সৌকর্য ঘোষাল) তখন একটি টেলিফিল্ম বানায় ‘লোডশেডিং’ বলে। আমি সেটার মিউজিকটা করি পুরোটা। তাছাড়া সেই বছরই সুজয় ঘোষের ‘অহল্যা’ শর্ট ফিল্মটিও মুক্তি পেয়েছিল। সেটার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরও আমি করেছিলাম। তবে ফিচার ফিল্মে প্রথম কাজ করি সৌকর্যের ‘রেইনবো জেলি’তে। এরপর একে একে ‘কালি’ ওয়েব সিরিজ, ‘দময়ন্তী’, ‘ট্যাংরা ব্লুজ’, ইত্যাদি হল।
নিজেরও তো একটা ব্যান্ড আছে, সেটার বিশেষত্ব কী?
নবারুণ: হ্যাঁ, আমার ব্যান্ডের নাম প্রফেসর। আমরা মূলত Rap মেটাল ফরম্যাটে গান করি। আসলে ২০১৫-১৬ সাল নাগাদ আমাদের এই দল তৈরি হয়। আমার তখন এমন কিছু গান লেখা ছিল যা এই ফর্মে প্রেজেন্ট করতে চেয়েছিলাম। তো যাঁরা আমার মতো একই ধরনের সাউন্ড পছন্দ করেন তখন তাঁদের নিয়ে একটা দল তৈরি করি। সেই থেকেই শুরু।
যেহেতু অনুপম রায়ের সঙ্গে নিবিড় ভাবে কাজ করেছেন, সবটা জানেন বা দেখেছেন, তাই এই প্রশ্ন। অনুপমের হাত ধরে অটোগ্রাফের সময় যে বদল এসেছিল বাংলা ছবির গানে, সেটায় কি আবার কোথাও বদল আসছে বলে মনে করেন?
নবারুণ: এটা সময় বলবে। অটোগ্রাফের পর সময় অনেকটাই এগিয়েছে। সাউন্ড পরিণত হয়েছে, গান লেখার ধরনে বদল এসেছে। ফ্রেশ সাউন্ড তৈরি হচ্ছে। নতুন আর্টিস্ট যত আসবেন তত নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
বিয়ে বিভ্রাট তো সামনেই মুক্তি পাচ্ছে, রাজা চন্দের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
নবারুণ: হ্যাঁ, রাজাদার (রাজা চন্দ) সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। যদিও আমি এই ছবির সঙ্গে অনেকটাই পরে যুক্ত হই। ততক্ষনে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছাড়া মোটামুটি সবই হয়ে গিয়েছে। তবে কাজটা দারুণ জমিয়ে, মজা করে করেছি। আসলে গল্পটাই এত ভালো, এত টানটান মজা, উত্তেজনা আছে যে কোথাও বোর হওয়ার জায়গা নেই। নিজেরাই ভীষণ হেসেছি কাজ করতে গিয়ে। আর রাজাদার বিষয়ে কী বলি। উনি এত সিনিয়র, তবুও আমি যখন প্রথমবার নিজের মতো একটা খসড়া করে পাঠাই এই ছবির জন্য সেটা পছন্দ তো করেনই সঙ্গে খুব বাহবা দিয়েছিলেন।
বিয়ে বিভ্রাটে তো কাজ করলেন, নিজের বিয়েতেও কোনও বিভ্রাট হয়েছিল নাকি?
নবারুণ: (হেসে নিয়ে) আমার বিয়েটাই তো বিভ্রাটের মধ্যে হয়েছে। লকডাউনে বিয়ে করেছি, একদিন শুনছি ৬০ জনকে বলা যাবে তো আরেকদিন শুনছি অন্য কিছু। আমাদের সমস্ত অনুষ্ঠান একদিনেই হয়েছিল। ফলে গোটা পৃথিবী যখন একটা বিভ্রাটের মুখোমুখি তখন আমরা বিয়ে করেছি।
বেশ, বেশ, বিয়ে বিভ্রাটের গল্প তো শুনলাম ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’ তো অন্যদিকে হিট। প্রতিটা গান দর্শকদের মুখে মুখে ফিরছে। এটা কীভাবে হল?
নবারুণ: হাহা, ধন্যবাদ। আসলে অরিত্র যেদিন প্রথম আমাদের স্ক্রিপ্ট শোনায় সেদিনই আমরা গান নিয়ে আলোচনা করি। ছবিটার নামটাই তো একটা জনপ্রিয় গানের, ফলে এখানে গানগুলোর আলাদা একটা গুরুত্ব থাকবে সেটা বলাই বাহুল্য। আমরা যখন এই ছবি গান বানাই আমাদের মাথায় ছিল যে আমরা কলেজে পড়াকালীন যে ধরনের গান শুনতাম বা পছন্দ করতাম সেটার ফ্লেভার রাখব এই ছবিতে। অর্থাৎ বাংলা ব্যান্ডের গান। বাংলা ব্যান্ডের গান একটা সততা আছে, সেটার সঙ্গে কলকাতা, ওদের বন্ধুত্ব আর প্রেম সবটা মিশিয়ে ‘রাতের কাছে’ গানটি তৈরি করা। এটা ছবিটা হওয়ার আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আর ‘টাইম মেশিন’ গানটা ছবিটা এডিট হওয়ার পর সেই আমেজটা রেখে বানানো হয়েছে।
একদিকে ব্যান্ড, একদিকে ছবির কাজ সবটা সামলান কীভাবে?
নবারুণ: ব্যালেন্স করেই চলছে। মাঝে মধ্যে ভীষণ খাটনি পড়ে, ঘুম কমে যায়। কিন্তু তারপর ভাবি আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। ফুল টাইম মিউজিক করতেই তো চেয়েছিলাম। আর এখন যে আমি সেটা করতে পারছি তার জন্য আমি ধন্য। যাঁরা যাঁরা আমায় এই সফরে সাহায্য করেছেন, পাশে থেকেছেন তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
তা, এত যে মহিলা ভক্ত সেটা নিয়ে হোম মিনিস্টার কিছু বলেন না?
নবারুণ: (হেসে নিয়ে) না না, এসব নিয়ে কিছু বলে না। অন্যান্য বিষয়ে বকা খাই যদিও, তবে এসব নিয়ে নয়। আমরা আসলে খুব ভালো বন্ধু। সবটা নিয়েই আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়।
আগামী পরিকল্পনা কী?
নবারুণ: একাধিক কাজ আসছে পরপর। আরণ্যক চট্টোপাধ্যায়ের ‘নিখোঁজ’ আর সৌকর্যের ‘ভূতপরী’র কাজ সবে শেষ করলাম। পরমব্রতদার (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) একটি হরর সিরিজ আসছে, সেটার মিউজিক আমি করছি। এছাড়া অনুপম রায় ব্যান্ডের শো আছে। একটা বিদেশ সফরও আছে এই বছর। ফলে মনে হচ্ছে এই বছরের বাকিটা বেশ কাজে কাজেই কাটবে।
For all the latest entertainment News Click Here