সচিন তেন্ডুলকরকে চোখ রাঙিয়ে কী ফল হয়, হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন অশোক দিন্দা
শুধু ভারতীয় ক্রিকেটমহলেই নয়, বরং সারা ক্রিকেটবিশ্বে সচিন তেন্ডুলকরকে শ্রদ্ধা করেন না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ১০০টি আন্তর্জাতিক শতরান। প্রায় ৩৫ হাজার আন্তর্জাতিক রান। টেস্ট ও ওয়ান ডে-র সর্বোচ্চ রান ও সব থেকে বেশি শতরানকারী। এমন পারফর্ম্যান্স রয়েছে যাঁর ঝুলিতে, তাঁকে প্রতিপক্ষ বোলাররাও সম্মান করবেন এটাই স্বাভাবিক।
অন্তত তেন্ডুলকরের চোখে চোখ রেখে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, এমন বোলার ক্রিকেটবিশ্বে খুব কমই দেখা গিয়েছে। যাঁরা এমন ভুল করেছেন, শাস্তি পেয়ে হয়েছে তৎক্ষণাৎ। ব্যাট হাতেই স্লেজিংয়ের পালটা জবাব দিয়েছেন মাস্টার ব্লাস্টার।
বিদেশি বোলাররা যেখানে সচিনকে ঘাঁটাতে ভয় পেতেন, একজন ভারতীয় পেসার সেখানে একবার তেন্ডুলকরকে পরাস্ত করে চোখ রাঙিয়েছিলেন। সেই নির্বাক স্লেজিংয়ের যেভাবে জবাব দিয়েছিলেন তেন্ডুলকর, তা কখনও ভোলা সম্ভব হবে না সংশ্লিষ্ট বোলারের পক্ষে। যদিও তাঁর দলকেও ভুগতে হয়েছিল ফল।
অন্য কেউ নন, সেই বোলার ছিলেন বাংলা তথা টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন পেসার অশোক দিন্দা, যিনি খেলা ছেড়ে রাজনীতিতে নতুন ইনিংস শুরু করেছেন। ২০০৬-০৭ মরশুমের রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে মুম্বইয়ের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলা। রাজ্যদলে অশোক দিন্দা তখন একেবারেই নতুন। সেই ম্যাচে সচিন, জাহির, আগরকর, জাফর, রোহিতরা খেলেছিলেন মুম্বইয়ের হয়ে। বাংলার ক্যাপ্টেন ছিলেন দীপ দাশগুপ্ত। বাংলার হয়ে মাঠে নামেন সৌরভও।
আরও পড়ুন:- বিন্দ্রাকে অলিম্পিক্সে সোনা জিততে সাহায্য করেছিলেন দ্রাবিড়, টিম ইন্ডিয়ার হেড কোচকে এতদিনে ধন্যবাদ জানালেন অভিনব
ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ান ডে ম্যাচের ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় দীপ শোনালেন পুরনো সেই দিনের কথা। আসলে সেই ম্যাচে দিন্দার একটি ডেলিভারিতে বল গিয়ে সচিনের কনুইয়ে আঘাত করে। তখন সচিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে চোখ রাঙিয়েছিলেন দিন্দা। তার পরেই সচিন সেই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন। বাংলা ম্যাচ হেরে মাঠ ছাড়ে।
দীপ বলেন, ‘সেটা বাংলা ও মুম্বইয়ের মধ্যে রঞ্জি ম্যাচ ছিল। আমি বাংলার ক্যাপ্টেন ছিলাম। আমরা টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নিই। পিচ ভিজে ছিল। মুম্বই তাড়াতাড়ি গোটা দুয়েক উইকেট হারায়। এক্কেবারে যথাযথ মুম্বই দল ছিল সেটা। সচিন, জাহির, অজিত, রোহিত, কে ছিল না সেই দলে।’
দাশগুপ্ত আরও যোগ করেন, ‘ওরা শুরুতেই ২টো উইকেট হারানোর পরে সচিন ব্যাট করতে নামে। অশোকের সম্ভবত সেটাই প্রথম মরশুম ছিল। তরুণ পেসার, গতিও ছিল। আমি আগাগোড়া দিন্দাকে বলেছিলাম যে, সচিন যখন ব্যাট করবে, গিয়ে চুপচাপ শুধু বল করে যাবে। সেই সময় দিন্দার একটা অভ্যাস ছিল, যখনই ও ব্যাটসম্যানকে পরাস্ত করত, ফলো থ্রুয়ে বাড়তি ২-৩ পা এগিয়ে গিয়ে ব্যাটসম্যানের দিকে চোখ রাঙাত। সেকারণেই আমি বারবার বলেছিলাম যে, সচিনকে এমনটা না করতে।’
আরও পড়ুন:- সচিনের রেকর্ড ভাঙব, দম্ভ করেছিলেন ২৪ বছরের কোহলি, আজ হাতড়াচ্ছেন ফর্মের জন্য
শেষে দীপ বলেন, ‘পরে সচিনকে একটা তুলনায় শর্ট বল করে দিন্দা। বল গিয়ে লাগে সচিনের কনুইয়ে। সচিন মাথা ঝাঁকায়। বোঝা যাচ্ছিল যে, ওর লেগেছে। দিন্দা দেখি এগিয়ে গিয়ে চোখ দেখাচ্ছে। আমার তখন অবস্থা এমন যে, আরে করছটা কী! আমি ছুটে গিয়ে দিন্দার কাঁধে হাত দিয়ে বলি, ভাগ। আর তার পরেই সচিন ৮০ বোধহয় ১০০ রান করে দেয়।’
সচিন সেই ইনিংসে ১০৫ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে মাস্টার ব্লাস্টার আরও ৪৩ রান যোগ করেন। বাংলার হয়ে সৌরভ দ্বিতীয় ইনিংসে ৯০ রান করেন। ওয়াংখেড়েতে মুম্বই ১৩২ রানে ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। রঞ্জি ফাইনালে হারের যন্ত্রণা নিয়ে ফিরতে হয়েছিল বাংলাকে।
For all the latest Sports News Click Here