শুরুতে আমাদের ঠিক জমেনি, ভাবতাম দেবালয় ভট্টাচার্য আর গান বানাতে ডাকবেন না: অমিত

মুক্তির পর থেকেই প্রশংসিত হচ্ছে দেবালয় ভট্টাচার্যের ওয়েবসিরিজ ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। তবে গল্প ছাড়াও ভীষণভাবে মন ছুঁয়েছে ওয়েব সিরিজের গান। যাঁদের ওয়েবসিরিজটি এখনও দেখা হয়ে ওঠেনি, তাঁরাও আলাদা করে গানগুলি শুনে ফেলেছেন। একবার নয়, একাধিকবারও শুনেছেন এমন মানুষও রয়েছেন। ইউটিউবের কমেন্টে বক্সে প্রশংসায় ভরিয়েছেন বহু শ্রোতা। শোনার পর অনেকেই খুঁজে দেখে নিচ্ছেন গায়ক-গায়িকা কিংবা সঙ্গীত পরিচালকের নাম। ‘পাখিদের স্মৃতি’, থেকে ‘ধিকি ধিকি’, ‘আমি একা চিনি’ সহ প্রতিটি গানই প্রশংসিত। এমন গান বাঙালিকে উপহার দেওয়ার জন্য যেমন পরিচালক, লেখক দেবলয় ভট্টাচার্যের ও সঙ্গীত পরিচালক অমিত চট্টোপাধ্যায়ের প্রশংসা প্রাপ্য বইকি। গান সৃষ্টির নানান টুকিটাকি বিষয় নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন সঙ্গীত পরিচালক অমিত।

‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেলে’-র সব গানই কি আপনার সুর করা?

অমিত: এই ওয়েব সিরিজে ‘পাখিদের স্মৃতি’, ‘দেহতরী’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘কোথায় তোমায় পাই’, সহ মোট ১০টি গান রয়েছে, তার মধ্যে ৭টি আমার সুর করা। বাকি ৩টি আমার নয়। যদিও কাখানা হরিবে দুখো মোর গানটিও আমার কম্পোজিশন বলা যেতে পারে। কারণে ওটাতে আমি ভাটিয়ালি গানের সঙ্গে বুন্দেলখন্ডী লোকগীত মিশিয়েছি। ছটপুজোর সময় এই গান শোনা যায়। ওইরকম একটা গান আমি ভাওয়াইয়ার মতো করে করেছি। ‘লছমী’ চরিত্রটা যেহেতু বিহারের একটা চরিত্র, সেকথা মাথায় রেখে এটা বানানো হয়েছে। যদিও এটা আসলে একটা ট্রাডিশনাল গান, যেটা অমর পাল, হেমঙ্গ বিশ্বাসের সংগ্রহ করা। গান, কার গান জানা যায় না।

গানগুলি কীভাবে পরিকল্পনা করলেন?

অমিত: দেবালয়দা প্রায় ১ বছর এই ওয়েব সিরিজটা নিয়ে কাজ করেছেন। আর আমি ১০-১১ মাস ধরে গানগুলো বানিয়েছি। এর আগে আমি অমিত-ঈশান জুটিতে কাজ করতাম। যখন ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের গানে সুর করার প্রস্তাব আসে, তখনই জানতাম প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। কারণ এখানে লোকগান নিয়ে কাজ করতে হবে। আর বাংলার OTT-তে বাজেট বড় বাধা। দেবালয়দা যখন ইন্দুবালার গান নিয়ে প্রযোজনা সংস্থাকে প্রস্তাব পাঠায়, ওঁরা বলেই দিয়েছিল এসব গান চলবে না। তবে আমরা অনড় ছিলাম। শুধু গান বের হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। জানতাম গানগুলো বের হলে এর জবাব দেওয়া হবে।

আলাদা করে লোকগান বানানো কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

অমিত: সাধারণত এধরনের ক্ষেত্রে ট্রাডিশনাল লোকগান ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে আলাদা করে লোকগান বানানো চ্যালেঞ্জিং তো বটেই। দেবালয়দার লেখা অসাধারণ। যেমন, ‘ধিকি ধিকি’ গানে শেষে ‘সাজায় দেব এক থালি জুঁই’, এখানে আসলে ভাতকে বোঝানো হয়েছে, সঙ্গে সাজাই আমার ললাট, অর্থাৎ জুুঁইফুল মাথাতেও পরতে পারি। এই লাইন গুলো কিন্তু দ্ব্যর্থ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি দেবালয়দার কথায় সুর বসিয়েছি। সুর করলেই তো হয় না, সেটা গ্রহণ করাটাও বিষয়, দেবালয়দা (দেবালয় ভট্টাচার্য) সেটা করেছেন। কারণ উনি এসব বেশ ভালো বোঝেন।

<p>সঙ্গীত পরিচালক অমিত চট্টোপাধ্যায়</p>

সঙ্গীত পরিচালক অমিত চট্টোপাধ্যায়

আমি একা চিনি গানটি কি অরিজিনাল গান?

অমিত: একেবারেই। অনেকেই এটাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত ভেবে কিংবা রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদ ভেবে ভুল করেছেন। কারণ, সুরের আঙ্গিকটা ওই ধরনের। চরিত্র, গল্পের প্রয়োজনে ওভাবেই ওটাকে বানানো হয়েছে। অন্য কোনও পরিচালক হলে হয়ত রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদের গান ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে নিতেন। তবে আমি এবং দেবালয়দা (দেবালয় ভট্টাচার্য) দুজনেই অরিজিনাল গানের পক্ষে। বাঙালি তো আজকাল অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত শোনেনই না, কেউ বানালে বলেন নকল করেছে। তাও ভালো যে কোন গানের নকল সেটা খুঁজতে গিয়েও হয়, দু-একটা গান শুনে ফেলবেন। (হাসি)

‘পাখিদের স্মৃতি’র গানের কিছু অংশের লাইন অতুলপ্রসাদের?

অমিত: হ্য়াঁ, ন মেঘে ঢাকা সুহাসিনী রাকা ওই পার্টটা অতুলপ্রসাদ সেনের।

এধরনের গান যে বাছার সিদ্ধান্ত কার?

অমিত: দেবালয়দার (দেবালয় ভট্টাচার্য)। গল্প আসলে মিউজিকের ছন্দেই এগোয়। এই ওয়েব সিরিজে ‘ইন্দুবালা’র স্মৃতিই যেহেতু বিষয়, তাই গানগুলিও সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে। মিউজিক, বাদ্যযন্ত্র সবই ওই সময়ের প্রেক্ষিতে তৈরি করা হয়েছে। অনেকসময় একটা গানে একাধিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। এখানে কিন্তু সেটা হয়নি। একটা গোটা এপিসোডের চলন-ই হয়ত একটা রাগের উপর। যেমন প্রথম এপিসোডে রাগ তিলক কামোদের উপর। আবার বৃষ্টির জায়গাটা, মিঞা-মল্লার রাগের উপর। সেভাবেই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর তৈরি করেছি। বাংলায় সঙ্গীতের ইতিহাস অনেক বড়, এটা একটা সম্পদ। সেটা ঘাঁটলে অনেককিছু পাওয়া যায়।

পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলাপ কীভাবে?

অমিত: দেবালয়দার সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ‘বউ কেন সাইকো’-বলে একটা সিরিজে। এরপরই ‘চরিত্রহীন-২’ সিরিজের ২টি গান বানিয়েছিলাম। তখন অবশ্য আমার সঙ্গে দেবালয়দার বিশেষ জমেনি। ভেবেছিলাম, দেবালয় ভট্টাচার্য আর কখনও আমায় ডাকবেন না। তারপর ফের ‘মন্টু পাইলট’-এর প্রস্তাব এল। আমি ২ দিনের মধ্যে ‘ব্যাথার শহর’, ‘বেড়াজাল’ গান দুটি বানিয়েছিলাম, যেগুলি বেশ জনপ্রিয়ও হয়। তারপর ‘ড্রাকুলা স্যার’ থেকে আরও অনেক কাজই করেছি দেবালয় দার সঙ্গে।

<p>পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে সঙ্গীত পরিচালক অমিত চট্টোপাধ্যায়</p>

পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে সঙ্গীত পরিচালক অমিত চট্টোপাধ্যায়

এখন দেবালয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন?

অমিত: ভীষণ ভালো। কাজের বাইরে ব্যক্তিগত বন্ধুত্বও রয়েছে। একসঙ্গে আড্ডা দি। আমাদের একটা সুন্দর টিউনিং আছে। গান বানানোর সময় ‘পাখিদের স্মৃতি’ বাদে সবকটা গানের সুরই প্রথমে ওঁর পছন্দ হয়েছে। ‘পাখিদের স্মৃতি’র দুটো সুর করি, যার একটা ব্যবহার হয়েছে। দেবালয় অন্যান্য পরিচালকদের মতো নন। গান বানাতে দিয়ে দিলাম, শেষ হলে দেখলাম, এমন নয়। প্রথম থেকে থাকেন। পার্ট বাই পার্ট সুর করি। কোনও কথা বদলের প্রয়োজন হলে বলি। শুধু জানি দেবালয়দা লিখলে ভালো সুর হয়।

জেলা থেকে উঠে এসেছেন, সেটা কোথায়, কীভাবে শুরু?

অমিত: আমার জন্ম তো সোনারপুরে। দেড়বছর বয়সে বাবা মারা যান, এরপর মা-ই একা হাতে বড় করেছেন, আর সেটা খুব কষ্ট করেই। ২০০৬-৭ আমি যখন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ব ভেবেছিলাম। সেসময় ওই এলাকায় এসব পড়ার কথা কেউ ভাবত না। আমি তখন পলি টেকনিক, জয়েন্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার মা-কে রাজি করাতে হয় খুব কষ্ট করে। আসলে পরিবারে একটা আর্থিক কষ্ট তো ছিলই। এমনও দিন গেছে, যে খেতেও পাইনি। আমি ১-দেড় বছর সময় চেয়ে নিয়েছিলাম। পরে পরীক্ষা দিয়ে SRFTI-তে সুযোগ পাই পড়ার। যদিও পড়তে পড়তেই স্টুডিওতে কাজ পাই। দেবুদা (দেবজ্যোতি মিশ্র), তন্ময়দার (তন্ময় ঘোষ) সঙ্গে কাজ করি। লতা মঙ্গেশকর স্টুডিওতে কাজ করি। মুম্বইতে প্রীতমদার সঙ্গেও কাজ করি। যেমন ‘রং দে তু মোহে গেরুয়া’ আমার রেকর্ড করা। ABCD-2 এর একটা গানও আমার রেকর্ড করা। কলকাতায় ফিরে এসেছিলাম এখান মা একা বলে।

এখানে শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

অমিত: প্রথমদিকে ‘রসগোল্লা’র ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর করেছিলাম, সেই শুরু। পরে ‘বাচ্চা শ্বশুর’- সিনেমায় গান বানিয়েছিলাম, সেখান থেকে জিৎ-দার পছন্দ হলে ‘প্যান্থার’-এর জন্য সুর করি, সেটা ছিল আইটেম নম্বর। এরপরে রাজদার (রাজ চক্রবর্তী) ‘শেষ থেকে শুরু’-তে কাজ করি। তারপর SVF-এর সঙ্গে লম্বা জার্নি শুরু হয়।

সকলে জানে সিনেমার গান হিট হয়, এখন OTT-র গানও জনপ্রিয়, কী বলবেন?

অমিত: আমার কেরিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে OTT। আমি OTT-তে প্রচুর কাজ করেছি, করছিও। বড় সঙ্গীতপরিচালকরা OTTতে কাজ করেন না, বাজেটের জন্য। আমি করেছি। ‘মন্টু পাইলট’-এর গান হিট হয়। আমি এই মাধ্যমে অনেক কাজ করেছি, যেগুলির নামও হয়ত জানেন না। OTT-তে গান বানানোর ঢং-টা একটু আলাদা। যদিও সিনেমা বা OTT-টা আমা কাছে এটা কোনও বিষয় নয়। গানটার ভালোবেসে করি, মানুষ যেন সেই গানটা শোনেন, না শুনলে সেই গানের অর্থ নেই।

বলিউডে আর কাজ করবেন না?

অমিত: করছি তো। (হাসি) আমাজন প্রাইমের ‘পিআই নীনা’-তে কাজ করছি। সেটার মিউজিক ডিরেক্টর হিসাবে আমি হিন্দিতে ডেবিউ করছি। আরও একটি হিন্দি ছবি ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরও করছি। মুম্বইয়ের বিজ্ঞাপনেও কাজ করি, করবও, তবে বাংলাতে থেকেই।

 

 

 

 

 

 

 

 

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.