‘লোকে গালিগালাজ করলে আমার ভালো লাগে…’, হঠাৎ কেন একথা বললেন ‘পর্ণার জা’ মানসী?

এই মুহূর্তে বাংলা টেলিভিশনের জাঁদরেল খলনায়িকা বললেই যাঁদের নাম মাথায় আসে তাঁদের মধ্যে অন্যতম মানসী সেনগুপ্ত। একের পর এক নেতিবাচক চরিত্রে নজরকাড়া অভিনেত্রী। বর্তমানে ‘নিম ফুলের মধু’র ধারাবাহিকে মৌমিতার চরিত্রে অভিনয় করছেন মানসী। কেরিয়ার থেকে ট্রোলিং, সঙ্গে আবসাদের শিকার হয়ে পড়া- আমাদের প্রতিনিধি প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্ত আড্ডায় ধরা দিলেন পর্ণার জা!

টিভির পর্দায় আবার একটা নেগেটিভ চরিত্র, মানসীর চোখে মৌমিতা বাকি খলনায়িকাদের চেয়ে কতটা আলাদা?

মানসী: আমি কোনও চরিত্রকেই ঠিক নেগেটিভ বলতে রাজি নই, বরং গ্রে শেডের চরিত্র বলি। আমি ব্যক্তিগতভাবে গ্রে শেডের চরিত্র করতে ভালোবাসি। এর আগেই জি বাংলা-তে আমি বিন্দির (পিলু) চরিত্রে কাজ করেছি। সেখানে বিন্দি খুনও করেছে, বড় বড় ক্রাইম করেছে। সেই অর্থে মৌমিতা কিন্তু ভিলেন নয়। আমরা আমাদের ঘরে মৌমিতাকে দেখতে পায়, আমাদের চারপাশে আমরা মৌমিতাদের দেখতে পাই। সেইজন্যই কিন্তু আমি এই চরিত্রে অভিনয়ে রাজি হয়েছি। মৌমিতা পড়াশোনা না জানা একটা মেয়ে, এই বনেদি বাড়িটা নিজের কব্জায় করতে যায়। সে চায় নিজের স্বামী-সন্তানকে নিয়ে ভালো থাকতে। সে শুধু নিজের ভালোটাই চায়। হয়ত আমাদের আশেপাশের সব মানুষ মৌমিতা নয়, তবে অনেকেই কিন্তু মৌমিতা।

পরপর নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়, সোশ্যালে হামেশাই নেটিজেনদের রোষের মুখেও পড়তে হয়, খারাপ লাগা আছে?

মানসী: হামেশাই চলতে থাকে। এটা আমার অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছে। হয়ত আমি নর্ম্যাল ছবি পোস্ট করলাম, তার নীচে এসেও মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য করে। আমি টানা পাঁচ বছর গ্রে শেডের চরিত্র করছি। তাই গা-সওয়া হয়ে গেছে। আমার ঘরের লোকজনদেরও শুনতে হয়। আমার এইগুলো বেশ মজাই লাগে। আমাকে নিয়ে মজার ট্রোল করলে, সেগুলো আমি নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করি, কারণ আমার মনে হয় সেটা আমার পাওয়া।

২০২১ সালে জি বাংলা সোনার সংসারে সেরা ভিলেনের পুরস্কার পেয়েছি। গত বছর আমি মুম্বইয়ে কাজ করেছি, সেই অর্থে বাংলায় কোনও কাজ ছিল না। শেষের দিকে এসে কাজ করেও ২০২৩-এর সোনার সংসারে সেরা ভিলেন ক্যাটেগরিতে আমি দুটো মনোনয়ন পেয়েছি। আমি কিন্তু নিজেই নিজের কম্পিটিশন।

প্রচুর ট্রোলিং-এর মুখে তো পড়েন,পর্দার এই নেগেটিভ ইমেজের জন্য বাস্তবে কোনওদিন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন?

মানসী: ওরে বাবা! একদম। আমরা তো অনেক গ্রামে-মফঃস্বলে শো করতে চাই। সেখানে মানুষ কিন্তু মানসীকে নয় মৌমিতাকেই চেনে। কলকাতায় লোকজন দেখলে এসে সেলফি তোলে, বলে নিম ফুলের মধু দেখছি- আপনার অভিনয় ভালো লাগছে। কিন্তু গ্রামে পরিস্থিতি উলটো। সেখানে লোকে আমাকে চেনে না। মৌমিতাকে দেখলে তাঁরা মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়, গালিগালাজ করে।

<p>নিম ফুলের মধুর একটি দৃশ্য (ছবি- জি ফাইভ)</p>

নিম ফুলের মধুর একটি দৃশ্য (ছবি- জি ফাইভ)

আমি একটু ভিতর দিকের একটা বিয়েবাড়িতে গিয়েছিলাম। আমার নিজের পিসির ছেলের বিয়ে। ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আরও গ্রামের দিককার। অনেকে এসে সেলফি তুলছে, আবার অনেক কাকিমা-জেঠিমারা বলছে- ‘বাবা এর সঙ্গে কী ছবি তুলব, মুখটা দেখছো না…. যা বদমাইশি করে বেড়ায়’। সেগুলো আমি শুনছি আর মনে মনে হাসছি। এগুলো নিয়ে সত্যি গায়ে মাখি না। লোকে যত্ত গালিগালাজ করে আমার তত্ত ভালো লাগে। বাচ্চারা দেখে আমাকে ‘দুষ্টু আন্টি’ বলে। লোকে বলে, ‘এ সংসার নষ্ট করে দেয়’। এটা বাংলা সিরিয়ালের ফ্য়াক্ট- যে হিরোইনকে মানুষ যত ভালোবাসে, তাঁর যে ক্ষতি করে তাকে মানুষ দেখতে পারে না। এটা শহর, শহরতলি না হলেও গ্রামের দিকে হয়। গ্রামের মানুষজন সত্যিভাবে মৌমিতা পর্ণার ক্ষতি করছে।

আচ্ছা, ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার যাত্রা শুরু কীভাবে?

মানসী: প্রথমে আমি একটি চ্য়ানেলে অ্যাঙ্কারিং করতাম, ভিজে হিসাবে করেছি। তারপর ভাবলাম এবার কী? আমার অনেক বন্ধুরা টেলিভিশনে কাজ করছিল। আমার এক বান্ধবীকে বলেছিলাম, আমিও সিরিয়াল করতে চাই, দেখ না যদি কোনও চরিত্র থাকে। এরপর একটা অডিশনে যাই। সেটা ক্লিয়ার করার পর ‘মেম বউ’ থেকে ডাক আসে। কিছুদিনের চরিত্র ছিল ‘মেম বউ’, ছয় মাসের। এরপর স্টার জলসায় ‘কুঞ্জছায়া’ করেছি। তারপর গত ছয় বছর টানা জি বাংলায় কাজ করছি।

মাঝে মুম্বইয়ে গিয়ে কাজ করলে, ‘মোসে ছল কিয়ে যায়ে’ আর ‘বন্নি চাও হোম ডেলিভারি’– কেমন অভিজ্ঞতা?

মানসী: প্রথমে ভয়ে ছিলাম, আমি এতো বেশি হোম সিক। আসলে বাঙালি হিসাবে আমরা হিন্দি বলি ঠিকই, কিন্তু পর্দায় হিন্দি বলার জন্য কিন্তু ভাষাটা শিখতে হয়। আমি সেই সময় এখানে যে প্রোডাকশনে (শশী-সুমিত) কাজ করছিলাম, তারাই আমাকে হিন্দি সিরিয়ালে সুযোগ দেয়। আমি জানিয়েছিলাম, আমি সত্যি খুশি কিন্তু এই ব্যাপারটা নিয়ে কী করা যায়? তারাই আমার একটা ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করে দেয়। গিয়ে দেখলাম দুর্দান্ত পরিবেশ, আমার কখনও মনে হয়নি আমি অন্য একটা রাজ্য থেকে এসেছি বা আমার ভাষাটা আলাদা। সবাই আপন করে নিয়েছিল। বাজেট ছাড়া বাংলা আর হিন্দি সিরিয়ালে কিন্তু বিশেষ কোনও ফারাক নেই। বাকি সবটাই এক।

মায়ানগরী ছেড়ে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত কেন?

ওই যে বললাম, আমি খুব হোম সিক। আমি খুব ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম, এতটাই ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম যে রীতিমতো কাউন্সিলিং করাতে হচ্ছিল। আর পারছিলাম না, বাড়ির লোকেদের মিস করছিলাম, কলকাতাকে মিস করছিলাম। তাই সোনির মেগাটা আমি শেষ করি, আর ‘বন্নি চাও হোম ডেলিভারি’ আমি ছেড়ে দিয়ে চলে আসি।

এখন কেমন আছেন?

এখন পুরো বিন্দাস। এখানে ফিরে এসে সব ঠিক, খুব ভালো আসি। আমি আসবার আগেই আমার পরিচিত মহলে জানিয়েছিলাম আমি ফিরছি। আর সত্যি আমি এতটাই আর্শীবাদধন্য যে কলকাতায় ফেরার এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন কাজের ডাক পাই। ‘পিলু’ ধারাবাহিকে বিন্দির চরিত্রটা।

<p>রিয়েল-রিল! মানসী আর মৌমিতা </p>

রিয়েল-রিল! মানসী আর মৌমিতা 

পর্ণার সঙ্গে অফ স্ক্রিন বন্ডিং কেমন?

‘আমি কে আপন কে পর’ ধারাবাহিকেও পল্লবীর সঙ্গে মানে জবার সঙ্গে কাজ করেছি। কিছুদিনের একটা চরিত্র করেছিলাম, সেটাও নেগেটিভ চরিত্র। ওর বরের (পরম) প্রথম স্ত্রী’র ভূমিকায়। সেখানেও ওকে জ্বালাতেই গিয়েছিলাম। পল্লবী খুব ভালো মেয়ে, আমার তুলনায় অনেক কম কথা বলে। অনস্ক্রিনের মতো একদম নয়, খুব মজা করে কাজটা করি।

পাঁচ বছর পর মানসী নিজেকে অভিনেত্রী হিসাবে কোথায় দেখছে?

গত বছর ‘কাটাকুটি’ বলে একটা সিরিজ করেছিলাম। তারপর ‘নিম ফুলের মধু’ নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। এখন মৌমিতা চরিত্রটাকে অনেকটা বুঝে উঠতে পেরেছি, কাজের চাপও খানিকটা কমেছে। তাই এবার ধীরে ধীরে কিছু ওয়েব সিরিজে কাজ করতে চাই, ছবি করতে চাই। তবে আমি যাই করি না কেন, আমি টেলিভিশন ছাড়ব না। ১০ বছর পরেও আমি যেখানে থাকি আমি টেলিভিশন ছাড়ব না,ওটা আমাকে করতেই হবে। এটা আমার ভালোবাসার জায়গা। এটা ছাড়া আমি বাঁচব না।

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.