লিগ টেবলে সেরা দুইয়ে থাকব- নর্থইস্টের বিরুদ্ধে নামার আগে আত্মবিশ্বাসী ATK MB কোচ
চোট-আঘাত, কার্ড সমস্যা থাকা সত্ত্বেও গত চার ম্যাচ ধরে দল অপরাজিত থাকায় খুশি এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো। তাঁর মতে, তাঁর দলের ছেলেদের চারিত্রিক দৃঢ়তা রয়েছে এবং সেই জন্যই দলের ফুটবলারদের ওপর তাঁর যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। জানুয়ারিতে একাধিক দেশী এবং বিদেশি ফুটবলার যোগ দেবেন শিবিরে এবং তাঁদের নিয়ে লিগ শেষে সেরা দুইয়ে থাকতে পারবেন বলে আত্মবিশ্বাসী কোচ।
শনিবার ক্রিসমাসের আগের দিন নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে ফিরতি লিগের ম্যাচে নামার আগে সাংবাদিকদের কী বললেন ফেরান্দো, জেনে নিন বিস্তারিত।
প্রশ্ন: লিগ টেবলের যা অবস্থা এবং আপনারা তাতে যেখানে রয়েছেন, সেই অনুযায়ী নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে আপনাদের মানসিকতা কী রকম থাকবে?
ফেরান্দো: অবশ্যই এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ওদের অবস্থা কী, তা আমি খুব ভালো করেই জানি। আমাদের পক্ষে সোজা ম্যাচ হবে না। কারণ, এটা অ্যাওয়ে ম্যাচ। নর্থইস্ট দু’সপ্তাহ আগেই ওদের কোচ বদলেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ওদের ভাবনা-চিন্তা, মোটিভেশন অন্য রকম হবে। আমাদের পুরোপুরি তৈরি হয়েই মাঠে নামতে হবে। কারণ, আমাদের তিন পয়েন্ট চাই। সব দলের কাছেই শেষ দশটি ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতি মুহূর্তে মনসংযোগ বজায় রাখতে হবে। ওঠানামা (ট্রানজিশন) ঠিকমতো করতে হবে। বিপক্ষ শেষ কয়েকটা ম্যাচে কী করেছে, তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রেখে ভালো খেলতে হবে।
আরও পড়ুন: পোগবার পরিবর্ত খুঁজে নিল ATK Mohun Bagan, নতুন বছরে যোগ দিচ্ছেন সার্বিয়ান তারকা
প্রশ্ন: নর্থইস্টের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে আপনার দল যে জায়গায় ছিল, এখন কি তার চেয়ে ভালো জায়গায় আছে, না একই জায়গায় আছে?
ফেরান্দো: কোনও ম্যাচই এক রকমের হয় না। বরাবরের মতো আমাদের লক্ষ্য তিন পয়েন্ট। বরং আমাদের পরিস্থিতি কিছুটা হলেও কঠিন। চোট-আঘাত, কার্ড সমস্যায় আমরা আগের চেয়ে বেশি জর্জরিত। মাঝে মাঝে দল বাছা কঠিন হয়ে যাচ্ছে, অনুশীলনেও সবাইকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রস্তুতির ব্যাঘাত ঘটছে। তবে এগুলো অজুহাত নয়। আমাদের মানসিকতা সব সময়ই তিন পয়েন্ট জেতার মতোই থাকে। হায়দরাবাদ, ওড়িশা, মুম্বই একই ভাবে এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। ওদের সঙ্গে আমাদের পাল্লা দিতে হবে। আশা করি, যারা চোট পেয়েছে, তারা সুস্থ হয়ে উঠবে।
প্রশ্ন: প্রথম দশ ম্যাচের পর আপনার দল যে জায়গায় থাকবে বলে ভেবেছিলেন, সেই জায়গায় কি আছে?
ফেরান্দো: একেবারেই নয়। কখনওই সেটা হয়নি। আমাদের লক্ষ্য সব সময়েই এক নম্বরে থাকা। সে দিক থেকে দেখতে গেলে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। চার-পাঁচে থাকা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। নর্থইস্ট ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পাওয়াই এখন লক্ষ্য। তার পরে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রস্তুতি নেব। এটাই সবচেয়ে বড় ভাবনা। গত তিন-চার সপ্তাহ ধরে দলের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। এখন দলের ছেলেদের তাদের চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রমাণ দিতে হবে। ছেলেরা সেটাই চায়, যেটা আমাদের পক্ষে ভালো।
প্রশ্ন: নর্থইস্ট এখনও পর্যন্ত একটিও ম্যাচ জিততে পারেনি। এ রকম এক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলা কি গোলপার্থক্যে উন্নতি ঘটানোর সেরা সুযোগ নয়? তা ছাড়া সেরা দুইয়ে থেকে লিগ শেষ করার ব্যাপারে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?
ফেরান্দো: সেরা দুইয়ে থাকার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। এই দলের প্রতি আমার যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। আমাদের মানসিকতা এ রকমই। আর নর্থইস্ট গত আট ম্যাচে কোনও পয়েন্ট পায়নি, এই তথ্য নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যথা নেই। ওরা সম্প্রতি কোচ বদলেছে। দ্বিতীয় লেগে হয়তো ওরা আরও উজ্জীবিত হয়ে খেলবে, ওদের চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রমাণের চেষ্টা করবে। এই লিগে কোনও ম্যাচই সোজা নয়। চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখে হয়তো সে কথা বলবেন না। কিন্তু আমি আপনাদের সঙ্গে একমত হতে পারব না। প্রতিপক্ষ নর্থইস্ট হলেও ফোকাস, প্রস্তুতি একশো শতাংশ থাকতে হবে। ম্যাচে ফোকাস না করে যদি ভাবতে থাকি, এটা সোজা ম্যাচ, তা হলে অবনতি ছাড়া কিছু হবে না। মনে রাখতে হবে ওরা নিজেদের ঘরের মাঠে খেলবে
প্রশ্ন: দুই বিদেশিকে বাদ দিয়ে খেলাটা কতটা কঠিন?
ফেরান্দো: খুবই কঠিন। কারণ, অন্য দলগুলো ছয় বিদেশি নিয়ে খেলছে। শুধু বেঙ্গালুরুর পাঁচ জন বিদেশি রয়েছে। অথচ আমাদের তিন জনকে নিয়ে মাঠে নামতে হচ্ছে। গত ম্যাচে হুগোর কাঁধে চোট ছিল। তার আগে ব্রেন্ডনের কার্ড সমস্যা ছিল। তবু পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে আমাদের ছেলেরা। এই কারণেই আমার বিশ্বাস, প্রথম দুইয়ে থাকব আমরা। দুঃসময়েও ছেলেরা একসঙ্গে পরিশ্রম করছে, নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই আমি খুশি। ওরা একই রকম ভালো খেলার চেষ্টা করছে। প্রতিপক্ষ হয়তো বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করছে, ওরা হয়তো আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলছে। কিন্তু এ সবই ফুটবলের অঙ্গ। আমাদের সমস্যার সমাধানের কথা মাথায় রেখে কাজ করে যেতে হবে।
প্রশ্ন: এই ম্যাচে আপনারা সবচেয়ে দুর্বল দলের বিরুদ্ধে খেলবেন। সেক্ষেত্রে আপনারা আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামবেন নিশ্চয়ই?
ফেরান্দো: প্রতি ম্যাচেই আমরা একই রকম প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। কারণ, মুম্বইকে যতটা শ্রদ্ধা করি, নর্থইস্টকেও ততটাই শ্রদ্ধা করি। জায়গা তৈরি করে নিয়ে আক্রমণে ওঠাই আমাদের প্রতি ম্যাচের কৌশল। গত ম্যাচে চোট-আঘাতের জন্য আমরা কার্যত আট জন খেলোয়াড় মাঠে রাখতে পেরেছিলাম। ফারদিন, হুগো চোট নিয়েই খেলে। অনুশীলনও ঠিক মতো করতে পারিনি। এই পরিস্থিতিতে ভালো খেলা বেশ কঠিন। তবে এটা অজুহাত নয়। এ সব ফুটবলেরই অঙ্গ। আক্রমণাত্মক খেলারই মানসিকতা নিয়ে নামি আমরা। কিন্তু কোনও খেলোয়াড়ের যদি চোট থাকে, তা হলে তাকে বেশি জোর করা যায় না। টানা ৯০ মিনিট ধরে তাকে একই রকম ফুটবল খেলতে বলা যায় না। তবে প্রতি ম্যাচেই একই পরিকল্পনা থাকে। নতুন খেলোয়াড়রা এলে দলের অবস্থা অনেক ভালো হবে বলে মনে করি।
আরও পড়ুন: ওদের সীমাহীন বাজেট, ২ দলের মানই তফাৎ গড়ে দিল- MCFC ম্যাচ হেরে কাঁদুনি EB কোচের
প্রশ্ন: নতুন সেন্টার ব্যাক স্লাভকো দামজানোভিচ কবে দলে যোগ দিচ্ছেন?
ফেরান্দো: ওর সব কাগজপত্র সইসাবুদ হয়ে গেলেই দলে যোগ দেবে। আরও একজনের সঙ্গে কথা বলছি আমরা। তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে জানিয়ে দেব আমরা। সেও একজন ভালো ফুটবলার।
প্রশ্ন: পোগবার পরিবর্তের নাম ঘোষণা করেছেন আপনারা, কাউকোর পরিবর্ত কে হতে চলেছেন?
ফেরান্দো: কয়েক দিনের মধ্যেই ওর সই হয়ে যাবে। কাগজপত্র তৈরি হয়ে গেলে ও এসেও যাবে।
প্রশ্ন: আর কোনও ফুটবলার কি আনতে চান জানুয়ারির দল বদলে?
ফেরান্দো: আরও একজনকে পেলে ভাল হত। কিন্তু এই সময়ে ভাল খেলোয়াড় পাওয়া কঠিন। তা ছাড়া, সব ক্লাব সব সময়ে যে কোনও খেলোয়াড়কে ছাড়তে বা নিতে চায় না। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সবাই যদি একমত হয়, তা হলেই তা সম্ভব হয়। বিদেশিদের ক্ষেত্রে, সবার ভিসা ঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। তাই তারা ঠিক সময়ে যোগ দিতে পারে না।
প্রশ্ন: কোনও ভারতীয় ফুটবলারকে নেওয়ার কথা ভাবছেন?
ফেরান্দো: হ্যাঁ, দু’জনকে নেওয়ার ইচ্ছে আছে। তবে এখানে স্থানীয় খেলোয়াড়দের নিতে গেলে প্রচুর লোককে রাজি করাতে হয়।
প্রশ্ন: পরের ম্যাচের আগে আপনাদের চোট-সমস্যা কী অবস্থায়?
ফেরান্দো: কাউকো, পোগবার সঙ্গে মনবীর, ইঙ্গসনও আপাতত মাঠের বাইরে। হুগোর ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
প্রশ্ন: কাউকোর পরিবর্তে যিনি আসবেন, তাঁর সঙ্গে কি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা হবে?
ফেরান্দো: কাউকোর সেরে উঠতে প্রায় সাত মাস লেগে যাবে। তিরি সেরে উঠছে। হয়তো দলের সঙ্গে যোগ দেবে। কিন্তু তার পরেও ওকে মাঠে নেমে খেলার অবস্থায় আনতে আরও অন্তত মাস খানেক লেগে যাবে। ফেব্রয়ারিতে হয়তো তিনটে ম্যাচে ওকে আমরা পেতে পারি। তিরির জন্য অপেক্ষা করে আছি। ও অনেকটা কাউকোর মতো, ড্রেসিংরুমকে তাতিয়ে রাখতে পারে। তবে গত মরশুমের মতো পারফরম্যান্স ও করতে পারবে বলে মনে হয় না।
প্রশ্ন: ১৪ জানুয়ারির ম্যাচে নতুন খেলোয়াড়দের পাবেন?
ফেরান্দো: ওরা মরশুমের মাঝখানে আসছে। দলে যোগ দেওয়ার পরে ওদের সময় দিতে হবে। আমাদের কৌশল সম্পর্কে ওদের বিস্তারিত জানতে হবে। ওরা মাঝপথে এসে শারীরিক ভাবে কতটা ফিট থাকবে, দলকে কতটা এবং কী ভাবে সাহায্য করতে পারবে, সেটাও বুঝতে হবে।
For all the latest Sports News Click Here