লতা আন্টি বাবাকে বললেন, ‘আর গাইতে পারব না’: স্মৃতিচারণ সলিল-পুত্র সঞ্জয় চৌধুরীর
‘জন্ম থেকেই ওঁকে দেখি, কিন্তু তখন তো বুঝতেই পারতাম না, উনি কত বড় শিল্পী।’
লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তাঁর বাবা একের পর এক কালজয়ী গান সৃষ্টি করে গিয়েছেন। কেমন ছিল সে সব দিনগুলি? প্রশ্ন শুনে প্রথমেই এই বাক্যটি বললেন সঞ্জয় চৌধুরী। সলিল-পুত্র।
তার পরে আরও একটু হেসে বললেন, ‘আর একজন ভদ্রমহিলার গানের সঙ্গেও মঞ্চে অনেক বার বাজনা বাজিয়েছি। জানতাম না তিনিও কত বড় মাপের শিল্পী। তিনি ঘটনাচক্রে আমার মা। শিল্পী হিসাবে মা’কেই যদি ছোটবেলায় না চিনে থাকি, লতা আন্টিকেই বা কী করে চিনব!’
প্রথম বার যখন লতা মঙ্গেশকরের বাড়িতে যান, তখন বয়স ছিল ৯ বছর। ‘শুনতাম ওঁর গান। বাবার কাছেও বার বার শুনেছি, লতা আন্টির মতো শিল্পী হন না।’
সে সময়ে পুজোর গান নিয়ে উদ্যাপন ছিল পুজোর উৎসবের মতোই। ‘বাবা আর লতা আন্টি। পুজোর গানের হিট জুটি। অত হিট জুটি কখনও কেউ দেখেননি। বাবা বলতেন, লতা থাকলে আমার পুজোর গান হবে, না-হলে হবে না।’ পুরনো কথা মনে পড়ে সঞ্জয় চৌধুরীর।
‘আমি বাবার সুরে মুগ্ধ ছিলাম। সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি আমায় আচ্ছন্ন করে রাখত লতা আন্টির গলা। এভাবেই বাড়ছিল আমার বয়স।’ কিন্তু সেই মন্ত্রমুগ্ধতায় একদিন যতি পড়ল। সে কথাও বলছেন তিনি।
‘একদিন লতা আন্টি বাবাকে বললেন, দাদা, আর গাইতে পারব না। ওটা আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন’, টেলিফোনে পুরনো কথা বলতে থাকেন সলিল-পুত্র। কিন্তু কেন লতা মঙ্গেশকর গাইবেন না বলেছিলেন?
‘একটা নোট লতা আন্টির গলায় উঠছিল না। তাই তিনি বলে দেন, গাইবেন না। বাবা বলেন, বদলে দিচ্ছেন। তাতে লতা আন্টি বলেন, উনি বাবার গান নষ্ট করবেন না। তাই গাইবেন না। বাবাও বললেন, ঠিক আছে, তাহলে আর কখনও পুজোর গান রেকর্ড করবেন না। এতটাই পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ছিল।’ বলছেন তিনি।
কেন লতা মঙ্গেশকর অন্য শিল্পীদের থেকে এত এগিয়ে?
‘কারণ উনি কখনও শেখা থামাননি। সকলের চেয়ে অনেক এগিয়ে গিয়েও থেমে যাননি। প্রতিটি মুহূর্তে শিখতে চেয়েছেন। বাবা বলতেন, কত কিছু অসম্পূর্ণ পড়ে আছে। শিখতে হবে। আরও শিখতে হবে। লতা আন্টিরও তাই। শেখা থামাননি।’ বলছেন সঞ্জয় চৌধুরী।
‘শেখা থামাননি বলেই, তিনি শুধু শিল্পী বা গায়িকা নন, তিনি এক জাদুর জগতে অধিষ্ঠাত্রী। তাঁর গান সে জাদুর জগতে ঢোকার পথ।’ কথা শেষ করতে করতে বললেন সঞ্জয় চৌধুরী।
For all the latest entertainment News Click Here