রোনাল্ডোর মঞ্চে রামোস-ঝড়, CR7-এর যুগ কি শেষের পথে? উত্তরসূরী পেয়ে গেল পর্তুগাল?
বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে বাদ দিয়ে প্রথম একাদশ নামনোর বুকের পাটা দেখান পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস। রোনাল্ডোর বদলে যাঁকে স্যান্টোস নামালেন, সেই রামোস এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই অনবদ্য হ্যাটট্রিক রামোসের। এ বারের বিশ্বকাপের এটিই প্রথম হ্যাটট্রিক। শুরু থেকেই তাঁর দাপটে কাঁপছিল সুইজারল্যান্ডের ডিফেন্স। আর শেষ পর্যন্ত ১-৬ গোলে খড়কুটোর মতোই উড়ে গেল তারা। এর মধ্যে তিন গোলই ২১ বছরের রামোসের। ১৯৬২ সালে ফ্লোরিয়ান আলবার্টের পর কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের নজির গড়লেন রামোস।
রামোস ছাড়াও বাকি তিন গোল করেছেন পেপে, রাফায়েল গুয়েরেরো এবং রাফায়েল লিয়াওর। এ দিন পর্তুগালের ছয় গোল হলেও, রোনাল্ডোর ঝুলি শূন্য। প্রসঙ্গত, কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর মুখোমুখি হবে পর্তুগাল।
রামোসের এমন দাপট দেখানোর পর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, রোনাল্ডোর যুগ কি তবে শেষের পথে? সিআরসেভেনের উত্তরসূরী পেয়ে গেল পর্তুগাল? উঠবে নাই বা কেন! বিশ্বমঞ্চে নক আউট পর্বে ৫০০ মিনিটের বেশি খেলে একটাও গোল নেই রোনাল্ডোর। সেখানে মাত্র ৭৩ মিনিটেই তিন গোল রামোসের। বিশ্বকাপে স্বপ্নের অভিষেক বেনফিকার ২১ বছরের স্ট্রাইকারের। ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার সব রকম রসদ রয়েছে রামোসের। যে দাপটের সঙ্গে খেললেন, চলতি বিশ্বকাপে প্রথম একাদশে পর্তুগিজ সুপারস্টারের জায়গা পাওয়া নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। একেই বলে বোধহয়, ‘কারও পৌষমাস তো, কারও সর্বনাশ।’
আরও পড়ুন: টাইব্রেকারে স্পেনকে রুখে নায়ক বুনো- অঘটন ঘটিয়ে শেষ আটে মরক্কো
এ দিন রোনাল্ডোকে ছাড়াই চনমনে ছিল পর্তুগাল টিম। আক্রমণের ঝড় তুলে একের পর এক গোল করতে থাকে। কোথাও এতটুকু রোনাল্ডোর অভাব বোধ হয়নি। ৭৩ মিনিটে রামোসের পরিবর্তে রোনাল্ডো যখন নেমেছেন, তখন ম্যাচ জয়ের পথে পর্তুগাল। ৫-১ এগিয়ে ছিল তারা। রোনাল্ডো নামার পরে অবশ্য এক গোল হল। আর সেই গোলটিও সিআরসেভেনের নয়, রাফায়েল লিয়াওর। বিশ্বকাপে প্রথম বার বসতে হল রোনাল্ডোকে। তাতে আখেরে লাভ হয়েছে পর্তুগাল সহ ফুটবল বিশ্বের। নতুন তারকার জন্ম হয়েছে। যাঁকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করতেই পারেন ফুটবলপ্রেমীরা।
ম্যাচের ১৭ মিনিটে পর্তুগালকে এগিয়ে দেন রামোস। সরু অ্যাঙ্গেল থেকে কোনাকুনি শটে নিখুঁত প্লেসিং। অসাধারণ গোল। বিশ্বকাপ অভিষেকেই প্রথম গোলে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। তবে এর পরেও চমক ছিল। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে ২-০ করেন পেপে। ব্রুনো ফার্নান্ডেজের কর্নার থেকে হেডে গোল করেন পেপে। পর্তুগালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী (৩৯) ফুটবলার হিসেবে গোল করার নজির গড়লেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে রজার মিলার পর দ্বিতীয় স্থানে পর্তুগিজ ডিফেন্ডার।
আরও পড়ুন: কোয়ার্টারে মুখোমুখি হবে পর্তুগাল-মরক্কো, বাকি ম্যাচের সূচি কী?জেনে নিন বিস্তারিত
বিরতিতে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল পর্তুগাল। দ্বিতীয়ার্ধে ঝড়ের গতিতে সুইৎজারল্যান্ডকে উড়িয়ে দেয় স্যান্টোসের দল। ম্যাচের ৫১ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় এবং দলের তৃতীয় গোল রামোসের। ডানদিক থেকে ক্রস করেন ডালোট। রামোসের ডান পায়ের শট গোলে ঢুকে যায়। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে স্কোরশিটে নাম তোলেন রাফায়েল গুয়েরেরোও। অটাভিও, রামোস হয়ে বল পান পর্তুগিজ লেফট ব্যাক। টপ নেট ফিনিশ করেন। খেলার ৫৮ মিনিটে ব্যবধান কমান ম্যানুয়েল আকাঞ্জি। কিন্তু টগবগ করে ফুটতে থাকা জোয়াও ফেলিক্স, ব্রুনো ফার্নান্ডেজ এবং সর্বোপরি গনসালো রামোসকে আটকায় কার সাধ্যি!
ম্যাচের ৬৭ মিনিটে হ্যাটট্রিক করেন রামোস। জোয়াও ফেলিক্সের পাস থেকে আগুয়ান সুইস কিপারকে টপকে বল গোলে রাখেন ম্যাচের নায়ক। ম্যাচের অন্তিমলগ্নে সুইৎজারল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেক পোঁতেন রাফায়েল লিয়াও।
পর্তুগালের নামের পাশে এ দিন ছ’টা গোল। কিন্তু তার মধ্যে একটাও রোনাল্ডোর গোল নেই- শেষ কবে এ রকম হয়েছে, মনে করা কঠিন। অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞই বলতে শুরু করেছে, পর্তুগালের রাজা খুব শীঘ্রই নিজের রাজপাঠ হারাতে চলেছেন। আর সেই অশনিসঙ্কেত পাওয়াও গিয়েছে কাতার বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের পর্তুগাল বনাম সুইৎজারল্যান্ড ম্যাচেই।
For all the latest Sports News Click Here