রূপান্তরকামী প্রতিযোগী হওয়ার কারণেই এত্ত আলোচনা? কী মত ‘সুপার সিঙ্গার’ অন্বেষার
গত ৫ মাস ধরে বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে স্টার জলসার ‘সুপার সিঙ্গার-৪’। এই শোয়ের সঙ্গে যিনি বারবার আলোচনায় এসেছেন তিনি হলেন রূপান্তরকামী প্রতিযোগী অন্বেষা। নাহ নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক কারণেই আলোচনায় এসেছেন তিনি। গানের জন্য প্রশংসিতও হয়েছেন। রবিবার এই গানের রিয়ালিটি শোয়ের ফল ঘোষণা হয়। যদিও সেই ফলে বিজয়ী কিংবা রানার্স আপ হতে পারেননি রূপান্তরকামী প্রতিযোগী অন্বেষা। তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। ‘সুপার সিঙ্গার ২০২৩’-এর ফল ঘোষণার পর হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে ফোনে ধরা দিলেন অন্বেষা।
‘সুপার সিঙ্গার’-এর যাত্রাটা ঠিক কেমন?
অন্বেষা: অভূতপূর্ব! এখানে এসে আমি অনেককিছু শিখেছি। গানের বিষয়ে তো বটেই, পাশাপাশি কীভাবে স্টেজে গান করতে হয়, ক্যামেরার সামনে গান করতে হয় এমন বেশকিছু টেকনিক্যাল বিষয় রয়েছে, যেগুলো জানা ছিল না, ওগুলো এখানে এসে জেনেছি, শিখেছি।
বিজেতার মুকুট পাননি, তবে প্রথম তিনজনের মধ্যে রয়েছেন কী বলবেন?
অন্বেষা: আমি একেবারেই আশা করি নি যে প্রথম তিনজনের মধ্যে থাকব। তবে তৃতীয় হতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। বাকি সবকিছু ভুলে সকলে যে আমার গানটাকে ভালোবেসেছেন, সেটা ভেবে এবং জেনে খুব আনন্দ পেয়েছি।
রিয়েলিটি শোয়ে প্রথম রূপান্তরকামী প্রতিযোগী হিসাবে আলোচনায় এসেছেন, এই আলোচনার সত্যিই কি প্রয়োজন আছে?
অন্বেষা: কখনও কখনও মনে হয় এই আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। আমার মতো এমন অনেকেই হয়ত চান গান বা অন্যকিছু নিয়ে উঠে আসতে, কিন্তু রূপান্তরকামী বা এমন কিছু হওয়ার কারণে ‘আমাকে হয়ত নেবে না’, এমন ধারনা থেকে অনেকেই পিছিয়ে যান। সেটা যাতে না হয়, সেজন্য এই আলোচনার প্রয়োজন বৈকি। আমি চাই আমার মতো যাঁরা, যাঁদের গান, নাচ, বা শৈল্পিক বিষয়ে যোগ্যতা রয়েছে, তাঁরাও উঠে আসুক। আমার মতো অনেকে আছেন, যাঁরা আবার ভালো নাচেন, অথচ রিয়েলিটি শোয়ে আসতে চান না। আমি চাই এই বিষয়টা যাতে না হয়।
আবার যদি ভাবি, এটা নিয়ে হয়ত আলোচনা করারও কিছু নেই, আর পাঁচজন অন্যান্য প্রতিযোগীর মতো আমরাও থাকব, সেটাই তো উচিত। তবে আলোচনা হলে যদি মানুষের ভাবনা বদলানো যায়, তাহলে সেটা তো ভালোই। অন্তত আমাকে দেখে আমার মতো অনেকে তো ভাববেন আমিও পারি এবং আমারও তাহলে সুযোগ রয়েছে। আমি যে পারি, এটা প্রমাণ করার জন্য একটা জায়গার দরকার ছিল। রাস্তায় বের হলে যেভাবে আমাদের কটূক্তির মুখে পড়তে হয়, এখানে সেধরনের কিছুই পাইনি। আমার কী লিঙ্গ, কী পরিচয় সেসব না ভেবে আমার গানকে ভালোবেসেছেন। সেজন্য খুব খুশি, আনন্দ পেয়েছি।
রূপান্তরকামী হওয়ার কারণে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
অন্বেষা: প্রথমদিকটা এখানে এসে একটু সমস্যা মনে হয়েছিল, তবে দীর্ঘ ৬ মাসে আমি সকলের সঙ্গে মিশে গিয়েছি। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে। সকলের কাছে ভালোবাসা পেয়েছি।
আরো পড়ুন-Exclusive Super Singer Subhadeep: মায়ের ‘পায়ে’ খরচ করতে চান পুরস্কারের টাকা, সুপার সিঙ্গার শুভদীপের আছে আরও স্বপ্ন
গানের দুনিয়ায় আসার জন্য পরিবারকে কতটা পাশে পেয়েছেন?
অন্বেষা: আমার পরিবারই আমাকে ছোট থেকে গান-বাজানার বিভিন্ন দিকে ভর্তি করেন। হাওয়াইয়ান গিটার শিখতাম, সেখান থেকেই গানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। পরে বাউল গান, দেহতত্ত্বের গানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। বিভিন্ন বাউল গানের আখড়ায় গিয়েছি। পরিবার কখনও আমায় গানবাজনায় বাধা দেয়নি। হয়ত সবক্ষেত্রে ওঁরা আমার সঙ্গে সবজায়গায় যেতে পারেননি, কিন্তু কেউ বাধাও দেননি।
গান কীভাবে শিখেছেন?
অন্বেষা: শিখেছি বললে ভুল হবে, এখনও শিখছি। হাওয়াইয়ান গিটার শিখতাম একজন শিক্ষকের কাছে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখি রূপক ভট্টাচার্যের কাছে। এছাড়াও বিভিন্ন বাউল, সাধু, বৈষ্ণবের আখড়ায় গিয়ে নিজেকে গড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি এখনও।
পুরুলিয়া, কলাকাতা অনেক দূরত্ব, ওখানে থেকে গানের জন্যই এতদূর উঠে আসা, সেটা কীভাবে?
অন্বেষা: আসলে আমার বাবার দেশের বাড়ি ছিল সুন্দরবনের দিকে একটা গ্রামে। বাবা চাকরি সূত্রে পুরুলিয়া থাকতেন। সুন্দরবনে আসতে গেলে কলকাতা দিয়ে আসতেই হয়। এছাড়াও কলকাতার সোনারপুর, গড়িয়া এই এলাকায় আমাদের আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। তাই কলাকায় আসা যাওয়াই ছিল। এছাড়া একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় কলকাতায় ভিডিয়ো এডিটিং শেখা শুরু করি। কলকাতার কলেজেই আমার পড়াশোনা।
সুপার সিঙ্গারে মেন্টারদের কতটা পাশে পেয়েছেন?
অন্বেষা: মেন্টারদের ভীষণভাবেই পাশে পেয়েছি। সুজয়দা (সুজয় ভৌমিক), দীপান্বিতা দি (দীপান্বিতা চৌধুরী, তীর্থ দা সকলেই ভীষণ সাহায্য করেছেন। বিশেষ করে তীর্থদা (তীর্থ ভট্টাচার্য)র কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি এই দীর্ঘ যাত্রায়। এছাড়াও শোভনদা (শোভন গঙ্গোপাধ্যায়) অনেককিছু শিখিয়েছেন। এঁরা না থাকলে হয়ত এই যাত্রাটা হয়ত কঠিন হয়ে যেত। আমি কৃতজ্ঞ।
এই যে ‘ফেম’ পেলে কীভাবে দেখছেন?
অন্বেষা: ‘ফেম’ পেতে তো ভালো লাগে, তবে সেটা যেন ধরে রাখতে পারি। মানুষের এই ভালো লাগাটা যেন বাঁচিয়ে রাখতে পারি। ইশ্বরের কাছেও এই প্রার্থনাই করব।
এবার লক্ষ্য কী?
অন্বেষা: প্লে-ব্যাক করতে চাই। বিভিন্ন লোকগান, লোকসংস্কৃতির বিষয়ে শিখতে চাই। লোকসংস্কৃতি, লোকগানের বিভিন্ন ধারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেগুলো একত্রিত করে মানুষের কাছে তুলে ধরতে চাই। নতুন নতুন কাজ মানুষকে উপহার দিতে চাই।
কীভাবে জীবন কাটাতে চান?
অন্বেষা: গোটা জীবনটা গানবাজনা করতে করতে, পাশে থাকা মানুষদের সঙ্গে আনন্দ করেই কাটিয়ে দিতে চাই।
For all the latest entertainment News Click Here