রাম-রাবণের অতি আধুনিকীকরণ যুদ্ধ যেন বানর ভার্সেস থ্যানোস! কেমন হল ‘আদিপুরুষ’

হলিউডের একটা থ্যানোস আছে, আমাদের শত শত থ্যানোস আছে! কী কেমন দিলাম? ধুর! কী লিখতে বসে কী লিখছি। যাক গে, আজই মুক্তি পেল বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘আদিপুরুষ’। রাম রাবণের যুদ্ধ, সীতা উদ্ধারের কাহিনি বড় পর্দায় দেখার জন্য ভীষণ রকম মুখিয়ে ছিলাম। কেমন লাগল অবশেষে ওম রাউতের স্টোরি টেলিং? জানাচ্ছে HT বাংলা।

রঘু বন্দনের সঙ্গে প্রাক-কথনে উঠে এল রামায়ণের প্রাথমিক গল্প। তারপরই এন্ট্রি হল তাঁর, উহু রাম নয়, রাবণের। মরুদেশে বরফের মধ্যে বসে ব্রহ্মার নাম জপছে সইফ। ব্রহ্মা আবির্ভূত হন এবং তাঁর অমরত্বের বর না দিলেও এমন বর দেন যাতে তিনি এক প্রকার নিজেকে অমর বলেই ধরে নেন। এরপরই আসে প্রথম চমক। বর পেয়েই রাবণের যে পরিবর্তন ওম রাউত পর্দায় দেখিয়েছেন সেটা দেখে তারিফ না করে পারলাম না। বড় পর্দায় সিনটা আলাদা মাত্রা যোগ করেছিল। এরপরই দেখা যায় বনবাসে দিন কাটাচ্ছেন রাম, সীতা এবং লক্ষণ। তখনই প্রথম সিনে একটা ছোট খাটো যুদ্ধ দেখানো হয়। যেখানে ভিএফএক্সের কামাল দেখানো হয় প্রাথমিক ভাবে। তারপরই একে একে শুরু সুর্পনখার নাক কাটা, থেকে মারিচ বধ, সীতা হরণ থেকে যুদ্ধ সবই একে একে ফুটে ওঠে পর্দায়। যদিও ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি এই প্রথম যুদ্ধের প্রয়োজন ছিল না।

এবার আসি মূল পর্বে, অভিনয় নিয়েই কথা বলা যাক আগে? আচ্ছা, রামের ভূমিকায় থাকা প্রভাস যে একজন সুদক্ষ অভিনেতা তার প্রমাণ তিনি আবার দিলেন। ধুন্ধুমার অ্যাকশন দৃশ্য থেকে সীতার সঙ্গে রোম্যান্টিক দৃশ্য সবেতেই তিনি সাবলীল। সীতা হিসেবে কৃতির যতটুকু অংশ ছিল বেশ ভালো। এক্সপ্রেশন থেকে ভঙ্গি সবটা মিলিয়েই নায়িকাকে ভালো লেগেছে। কিন্তু আমার চোখে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে রাবণ ওরফে সইফ। দুর্দান্ত অভিনয়ের নিদর্শন তুলে ধরলেন তিনি এখানে। বজরং হিসেবে দেবদত্ত নাগে পারফেক্ট। তাঁর দুষ্টু মিষ্টি লুকস, মুচকি হাসি থেকে রুদ্ররূপ ধারণ ভালো লেগেছে। সানি সিং আহামরি নাহলেও চরিত্র অনুযায়ী ঠিক আছে। এতদিন পর বড় পর্দায় ইন্দ্রজিতের চরিত্রে বৎসল শেঠ আলাদা করে নজর কাড়বেন। গুড লুকসের এই নায়ককে নেতিবাচক চরিত্রে দেখা আলাদা থ্রিল হবে।

এবার বলি গানের কথা। লঙ্কায় পৌঁছানোর পর রাম সীতার যে গান দেখানো হয়েছে সেটা বড়ই অপ্রয়োজনীয় মনে হল। বাকি দুটি গান, বিশেষ করে ‘রাম সিয়া রাম’ আপনিও হল থেকে বেরোতে বেরোতে গুনগুন করবেন বইকি। গানের দৃশ্যায়ন বেশ সুন্দর।

এই বিগ বাজেট ছবির যেটা মূল বিষয় ছিল ভিএফএক্স সেটা শুধু ছক্কা মারেনি বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে যে কোথায় ফেলেছে সেটা বলা মুশকিল! রাবণের প্রথম শট থেকে রামের প্রথম যুদ্ধ, রাম সীতার ভেলায় ভেসে বেড়ানো কিংবা মূল যুদ্ধ কোনটা ছেড়ে কোনটার প্রশংসা করি। ফাটাফাটি এক কথায়। তবে যে সিনের কথা আলাদা করে প্রশংসা করতেই হবে সেটা হল সীতা অপহরণের সময় জটায়ুর চেজিং সিন। এতটাই রুদ্ধশ্বাস ছিল যে ওই ক’মিনিট আর কিছুই চোখে পড়েনি। এছাড়া মূল যুদ্ধের কিছু শট ভালো লাগবে। ইন্দ্রজিৎকে হত্যার পর লক্ষ্মণের উঠে আসা সত্য বা ধর্ম হিসেবে আর ইন্দ্রজিতের জলে তলিয়ে যাওয়া মিথ্যে বা অধর্ম হিসেবে বড় সুন্দর কনট্রাস্টে দেখানো হয়েছে। কেবল মাত্র ভিএফএক্স দেখার জন্যই এই ছবি হলে দেখতে যাওয়া উচিত।

তবে কি খারাপ কিছুই নেই ছবিতে? উহু, আছে। একাধিক ভুলভ্রান্তি চোখে পড়েছে। প্রথমত রামায়ণের সঙ্গে একাধিক জায়গায় মিল পাবেন না। ফলে রামায়ণে দৃশ্যায়ন দেখবেন বলে যে যদি হলে যান তাহলে নিরাশ হবেন। শুধু বিনোদন পেতে, সিনেমাকে সিনেমা হিসেবে দেখবেন বলে হলে যেতে চাইলে এই ছবি ভালো লাগবেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে অশোকবনের কথা। কথিত আছে অশোকবন নাকি বড় সুন্দর ছিল। কিন্তু এখানে কটা ফুল ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না। রাবণের স্বর্ণ লঙ্কা বা সোনার লঙ্কা ছিল। এখানে পুরোটাই কালো দৈত্যপুরী।

তবে সব থেকে খারাপ বলব না ঠিক, মজার লেগেছে সেটা হল আধুনিকীকরণ করতে গিয়ে আর ভিএফেক্সের দাপট দেখাতে গিয়ে কিছুটা গন্ডগোল পেকেছেই। রাবণকূলের একটা রাক্ষসকে রাক্ষস মনে হয়নি গল্পের বইয়ে পড়ার মতো। সবাইকে কেমন যেন থ্যানোসের ছোট ভাই লাগল। ফারাক হলিউডের একটা থ্যানোস আছে আমাদের অনেক! ব্যাস।

আরও যা টুকটাক খারাপ লেগেছে সেটা হল মারিচের মৃত্যুর আগে তাঁর হাসির শটটা। সইফের হাঁটার ধরণ থেকে শুরু করে সুর্পনখার নাক কাটার আগে রাম রাবণের এক অদ্ভুত দৌড় এবং রামায়ণে কেসি নাগের অঙ্ক ঢুকে পড়া কেমন যেন একটু লাগল।

তবে আপনি যদি যুক্তি, তক্ক এবং অবশেষে রামায়ণের খুঁটিনাটি বিষয় মনে না রেখে স্রেফ বিনোদন পেতে এই ছবি দেখতে চান তাহলে মন ভালো করেই হল থেকে বেরোবেন। মোটের উপর বলতে লেগে ভালোই লেগেছে ওম রাউতের এই ছবি। ‘বিজয় কা ভাগওয়া ধ্বজ’ নয়, বিনোদন কা সুনেহরা ধ্বজ অবশ্যই দর্শকদের মনে পুঁতবে এই ছবি।

ছবি: আদিপুরুষ

পরিচালক: ওম রাউত

অভিনয়: প্রভাস, কৃতি শ্যানন, সইফ আলি খান, সানি সিং, দেবদত্ত নাগে

রেটিং: ৪/৫

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.