‘যেন মুসলমান মাত্রই আতঙ্কবাদী’, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখে আক্ষেপ তসলিমার
পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। সোমবার এই খবর চাউর হতেই প্রতিবাদের সুর চড়ান তসলিমা নাসরিন। ‘শিল্প সাহিত্য ঘৃণা ছড়ায় না’ জোর গলায় এমনটাই ফেসবুকের দেওয়ালে লিখেছিলেন তিনি, সঙ্গে জানিয়েছিলেন আগামিকালই ‘ভাঙা পা’ নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হলেও সিনেমাটা দেখতে যাবেন তিনি। কথামতোই মঙ্গলবার পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখে ফেলেছেন বিতর্কিত লেখিকা। এই ছবি দেখে তাঁর কী অনুভূতি? ফেসবুকের দেওয়ালে শেয়ার করে নিয়েছেন ‘লজ্জা’র স্রষ্টা।
আদা শর্মা, যোগিতা বিহানিদের ছবি দেখে মোটেই মন ভরেনি লেখিকার। বরং ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখার সময় যেরকম অনুভূতি হয়েছিল, একইরকম ভাবনা ফিরে ফিরে এসেছে এই ছবি দেখবার সময়ও। তসলিমা লেখেন, ‘যেন মুসলমান মাত্রই বদের হাড্ডি, মুসলমান মাত্রই আতঙ্কবাদী। পৃথিবীর প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মুসলমান যদি জঙ্গি হতো, তাহলে পৃথিবীর কী হাল হতো, তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারি। মুসলমানদের মধ্যে বেনামাজি, বেরোজদার বহুত, মুসলমানদের মধ্যে ধর্ম না জানা, ধর্ম না মানা লোকের সংখ্যাই, আমার বিশ্বাস বেশি। মেয়েদের সমানাধিকারে আর মানবাধিকারে বিশ্বাস করা, শিক্ষিত সভ্য লোকও এই সম্প্রদায়ে প্রচুর।’
ফিচার ফিল্ম হিসাবে মোটেই ‘উন্নতমানের’ নয় এই ছবি এমনটা জানিয়ে তসলিমার সংযোজন, ‘এতে আছে কিছু সত্য তথ্য, তথ্যের অঢেল অতিরঞ্জন। কোরান হাদিসের মানবতাবিরোধী আর নারীবিরোধী শ্লোকগুলো বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে এত বেশি গুঁজে দেওয়া হয়েছে, যে কারও সংলাপকে স্বাভাবিক এবং স্বতস্ফূর্ত মনে হয়নি। আইসিসদের বর্বরতা আর বীভৎসতা নিয়ে এ পর্যন্ত বেশ কিছু সিনেমা বানানো হয়েছে, সিনেমাগুলো দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে কিন্তু বেটার।’
তাঁর চোখে কেরালা কেমন? সেই প্রসঙ্গে লেখিকা জানান, ‘কেরালা লিটফেস্টে অংশ নিতে রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা কোঝিকড় বা কালিকটে বেশ কয়েকবার গিয়েছি আমি। কালিকটে আমি অবাক হয়েছি, অনেক মুসলমান নারী-পুরুষ আমার স্পিচ শুনতে এসেছে, এমনকী আমার অটোগ্রাফ নিয়ে গেছে। আমার নাম ঘোষণা করা সত্ত্বেও মুসলমানরা তসলিমা বিরোধী মিছিল করেনি, মিছিল বরং সেক্যুলার কলকাতায় করেছিল কট্টর মুসলমানেরা। কেরালার ৩২০০০ মেয়ে আইসিসে যোগ দিয়েছে, এই তথ্য সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ। পাকিস্তান আর বাংলাদেশ থেকে বরং মুসলমানেরা বেশি যোগ দিয়েছে আইসিসে। এই দুটো দেশে আইসিসের আক্রমণও নেহাত কম হয়নি। দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে জরুরি ‘দ্য পাকিস্তান স্টোরি’ বা ‘দ্য বাংলাদেশ স্টোরি’ বানানো।’
ব্যক্তিগতভাবে এই ছবি পছন্দ না হলেও কোনওভাবেই এই ছবির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হোক এমনটা চান না তসলিমা নাসরিন। তিনি লেখেন, ‘এই সিনেমা হয়তো কিছু মানুষকে মুসলিমবিরোধী হতে উদ্বুদ্ধ করবে। অনেক শিল্প সাহিত্যই কোনও দর্শনের বিপক্ষে, কোনও জাতি বা সম্প্রদায় বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, তাই বলে সেইসব শিল্প সাহিত্যকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে হবে কেন।’ সব শেষে নাম না করেই মমতা সরকারে তাঁর পরামর্শ, ‘দ্য কেরালা স্টোরি যারা নিষিদ্ধ করতে চাইছে, তারা নিজেদের ক্ষোভের বারুদ আগুনে নিক্ষেপ না করে বরং ‘দ্য ইউপি স্টোরি’ নামে সিনেমা বানান ! কেউ তো বাধা দেয়নি।’
For all the latest entertainment News Click Here