যার জন্য কেরিয়ারে ধাক্কা লেগেছিল, সেই গ্রেগকে শিক্ষক দিবসে শুভেচ্ছা জানালেন সৌরভ
গ্রেগ চ্যাপেলের সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পর্কের সমীকরণের কথা কারও অজানা নয়। ভারতীয় ক্রিকেটে সৌরভ-গ্রেগ এখনও বিতর্কিত একটি অধ্যায়। গ্রেগের জন্য যে সৌরভের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অধ্যায় আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে, অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিলেন সৌরভ। সে কথা স্বীকার করতে দ্বিধা করেন না বর্তমান বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট নিজেও। এখনও সৌরভ বনাম গ্রেগের কথার লড়াই চলতেই থাকে। গ্রেগ এখনও সমালোচনা করেন সৌরভের। যার যোগ্য জবাব দেন বাংলার মহারাজও। যাইহোক সেই গ্রেগ চ্যাপেলকেই নাকি শিক্ষক দিবসের দিন শুভেচ্ছা জানালেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়!
আরও পড়ুন: বড় পর্দায় অভিষেক হচ্ছে BCCI প্রেসিডেন্টের? একটি পোস্টার ঘিরে আলোড়ন
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট টুইটারে একটি ভিডিয়ো আপলোড করেছেন। যেখানে সৌরভ বলেছেন, ‘আমার জীবনের সমস্ত কোচ। দেবু মিত্র থেকে জন রাইট, গ্রেগ চ্যাপেল, গ্যারি কার্স্টেন- প্রত্যেককে শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা। বহু দিন থেকেই ভাবছিলাম, এই ভিডিয়ো বানানোর কথা। আজ আমি সবচেয়ে পছন্দের শিক্ষকের বিষয়ে জানাতে চাই।’ এর সঙ্গেই সৌরভ যোগ করলেন, ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় শিক্ষক ব্যর্থতা। আমার কাহিনি শুরু হচ্ছে ১৯৯২ থেকে। তখন সবে ১৯ বছর। ক্রিকেট তখন স্বপ্ন। কপিল দেব, সঞ্জয় মঞ্জরেকর, আজহার, সচিনদের সঙ্গে এক দলে। আমার সঙ্গে এমন ঘটছে, ভেবেই অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল।’
১৯৯২ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেস ওয়ার্ল্ড সিরিজ খেলতে গিয়েছিল ভারত। কপিল দেব, সঞ্জয় মঞ্জরেকর, সচিন তেন্ডুলকর, মহম্মদ আজহারউদ্দিনদের সঙ্গে ভারতীয় দলে ছিলেন সৌরভ। আজহারের অধিনায়কত্বে ব্রিসবেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে অভিষেক হয় সৌরভের। সেই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৬ উইকেটে হারে ভারতীয় দল। সচিন করেছিলেন ৭৭, সৌরভ ছয়ে নেমে ১৩ বলে ৩ রান করে অ্যান্ডারসন কামিন্সের বলে লেগ বিফোর হয়েছিলেন। এর পর ছিটকে যান ভারতীয় দল থেকে। তবে এই ব্যর্থতাই সৌরভকে চালিত করেছিল কামব্যাকের প্রক্রিয়ার পথে।
তিনি বলেছেন, ‘এর পর অনুশীলনের মাত্রা বাড়িয়ে দিই। কিছুতেই যখন জাতীয় দল ফিরতে পারছিলাম না, তখনই নিজেকে তৈরি করি সচিন তেন্ডুলকরের মতো ভারতীয় দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব বলে।’ এর পর ১৯৯৬ সালে লর্ডসে অভিষেক। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে ১৮৩ রান পরিচিতি বাড়ায়, স্পনসরশিপ মেলে, এনডোর্সমেন্ট আসে।
আরও পড়ুন: কী গুণ থাকলে ভালো নেতা হওয়া যায়? সৌরভের দাবি, কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ
সৌরভ আর বলেছেন, ‘২০০০ সালে ভারতীয় অধিনায়ক হওয়ার পর ঠিক করি, আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা যেন তরুণ ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে না হয়।’ ২০০৩ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে পরাজয়ের হতাশা আজও রয়েছে। তবে ওই ব্যর্থতাও পরবর্তীকালে সাফল্য লাভের জেদ বাড়িয়ে দেয়। সৌরভ বলেন, টসব দেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেও হেরে যাওয়ার পর মনে হয়েছিল, যদি আরও বেশি অনুশীলন করতাম, যদি অন্য কৌশল অবলম্বন করে ম্যাচ খেলা যেত!’ কিন্তু এর পরই অস্ট্রেলিয়াকে তাদের দেশে গিয়ে হারানোর জেদ চেপে বসে সৌরভের। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সচেতন হন। পরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও সাফল্য আসে।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করানোর লক্ষ্যে প্রস্তুতির জন্য গ্রেগ চ্যাপেলকে কোচ করে আনা হয়েছিল। যদিও এর পর সৌরভকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দল থেকে বাদও দেওয়া হয়। তবু সৌরভ সেই অনুশীলনের মাত্রা বাড়িয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে সফল হয়ে ফের কামব্যাক করেন। তবে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত মুখ থুবড়ে পড়ে।
সহজে হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না সৌরভ। ফিরে এসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩৯ রান করা থেকে একটি টেস্ট সিরিজে সাড়ে পাঁচশো রান, কিংবা এক বছরে ৯ টেস্টে ১২০০-র উপর রান করেছিলেন সৌরভ। আর সেই উদাহরণগুলি তুলে ধরেই তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেকের জীবনেই ব্যর্থতা আসে। সেই ব্যর্থতাই সবচেয়ে বড় শিক্ষক। আমাদের জীবনে এমন সময় আসে যখন বুঝে উঠতে পারি না কী করা দরকার। কিন্তু ব্যর্থতা কিছু না কিছু শিখিয়েই যায়। হাল বা আশা ছাড়ব না।’
For all the latest Sports News Click Here