‘যদি শুয়েই থাকে,কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে শুয়েছে? ধর্ষণ করেছে?’, পরীমনির পাশে তসলিমা
মাদক নিয়ন্ত্রক আইনের অধীনে আপাতত পুলিশের জালে বাংলাদেশের চর্চিত অভিনেত্রী পরীমনি। গতকাল পরীমনির গ্রেফতারির পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব নারীবাদী তসলিমা নাসরিন। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বরাবরই গর্জে উঠেন এই বিতর্কিত লেখিকা, কিছুদিন আগেই নুসরত জাহানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, এবার পরীমণির সমর্থনে এগিয়ে এলেন তিনি। টুইটারের দেওয়ালে তাঁর কটাক্ষ,’বাড়িতে মদ থাকার জন্য বাংলাদেশে মেয়েদের গ্রেফতার করা হচ্ছে’। পরীমনির নাম নিলেও কোন প্রসঙ্গে এই টুইট তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না।
এরপর বৃহস্পতিবার দিনভর পরীমনির সমর্থনে একের পর এক পোস্ট করলেন তসলিমা নাসরিন। এদিন আদালতে তোলা হলে চারদিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর হয়েছে। তসমিলা নাসরিন সরাসরি পরীমনির ঘটনার কথা উল্লেখ করে, ফেবসুকের দেওয়ালে লেখেন- ‘র্যাবের ব্রিফিং দেখলাম পরীমণিকে নিয়ে। আমি শুধু শুনতে চাইছিলাম কত ভয়ংকর অপরাধ করেছে পরীমণি। অপরাধের মধ্যে যা বলা হয়েছে, তা হলো, ১ পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে স্মৃতিমণি ওরফে পরীমণি সিনেমায় রাতারাতি চান্স পেয়ে গেছে। ২ তার বাড়িতে বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে। ৩ তার বাড়িতে একখানা মিনি বার আছে। ৪ পরীমণি মদ্যপান করে, এখন সে মদে আসক্ত। ৫ নজরুল ইসলাম নামের এক প্রযোজক, যে তাকে সাহায্য করেছিল সিনেমায় নামতে, মাঝে মধ্যে পরীমণির বাড়িতে আসে, মদ্যপান করে। ৬ ডিজে পার্টি হতো পরীমণির বাড়িতে। ৭ আইস সহ মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে ( এগুলোর চেহারা অবশ্য দেখানো হয়নি)। ৮ মদ খাওয়ার বা সংগ্রহ করার লাইসেন্স আছে পরীমণির, তবে তার মেয়াদ পার হয়ে গেছে, এখনও রিনিউ করেনি সে। তারপর আরো কিছু খবর দেখলাম, পরীমণি পর্নো ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিল। না এটিরও প্রমাণ কিছু দেখানো হয়নি’।
ফেসবুক পোস্টে তসলিমার যুক্তি, ‘মদ খাওয়া, মদ রাখা, ঘরে মিনিবার থাকা কোনওটিই অপরাধ নয়। বাড়িতে বন্ধু বান্ধব আসা, এক সঙ্গে মদ্যপান করা অপরাধ নয়। বাড়িতে ডিজে পার্টি করা অপরাধ নয়। কারও সাহায্য নিয়ে সিনেমায় নামা অপরাধ নয়। কারো সাহায্যে মডেলিং এ চান্স পাওয়া অপরাধ নয়। কোনও উত্তেজক বড়ি যদি সে নিজে খায় অপরাধ নয়। ন্যাংটো হয়ে ছবি তোলাও অপরাধ নয়। লাইসেন্স রিনিউ-এ দেরি হওয়া গুরুতর কোনও অপরাধ নয়’।
তসমিলার দাবি শুধুমাত্র মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই বোধহয় পুরুষশাসিত সমাজের চোখে অপরাধ, সেই অপরাধের সাজাই বোধহয় পেতে হচ্ছে পরীমনিকে।
লেখিকার প্রশ্ন, ‘অপরাধ তবে কোথায়? যে অপরাধের জন্য দামি গ্লেন ফিডিশ মল্ট হুইস্কিগুলো বাজেয়াপ্ত করা হলো, মেয়েটাকে গ্রেফতার করা হলো! যে কটা মদ ভর্তি বোতল দেখা গেল পরীমণির বাড়িতে, মদের লাইসেন্স যাদের আছে, তাদের বেসমেন্টের সেলারে এর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। একটা দুটো পার্টিতেই সব সাবাড় হয়ে যায়। পরীমণি আবার মদ শেষ হয়ে গেলে খালি বোতল জমিয়ে রাখে। বোতলগুলো দেখতে ভালো বলেই হয়তো। কী জানি, এও আবার অপরাধের তালিকার মধ্যে পড়ে কিনা।
সত্যিকার অপরাধ খুঁজছি। কাউকে কি জোর করে মাদক গিলিয়েছে, মদ গিলিয়েছে, প্রতারণা করেছে মেয়েটি, কাউকে খুন করেছে? অনেকে বলছিল খুব গরিব ঘর থেকে উঠে এসে ধনী হয়েছে পরীমণি। গরিব থেকে ধনী হওয়া পুরুষগুলোকে মানুষ সাধারণত খুব প্রশংসা করে, কিন্তু মেয়ে যদি গরিব থেকে ধনী হয়, তাহলেই চোখ কপালে ওঠে মানুষের। কী করে হলো, নিশ্চয়ই শুয়েছে। যদি শুয়েই থাকে, তাহলে কি জোর করে কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে শুয়েছে? ধর্ষণ করেছে কাউকে, পুরুষেরা যেমন দিন রাত ধর্ষণ করে মেয়েদের, সেরকম কোনও ধর্ষণ? অপরাধ খুঁজছি। নাকি মেয়ে হওয়াটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ?’
বুধবার পরীমনির বাড়িতে অভিযান চালায় ব়্যাব, শুরুতে তাঁকে আটক করে বাড়িতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে গ্রেফতার হন পরীমনি, তাঁর বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমানে মদ ও মাদক বাজেয়াপ্ত করেছে। আপতত পুলিশ হেফাজতে নায়িকা।
For all the latest entertainment News Click Here