মিনি ডার্বিতে জয় অধরা, তবু কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রোশনাইয়ে রঙিন মহমেডান
কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। অপেক্ষা ছিল মিনি ডার্বি জিতে সেলিব্রেশনের। মহমেডান চেয়েছিল, ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে শেষটা আরও মধুর করতে। কিন্তু সে গুড়ে জল ঢেলে দিল লাল-হলুদ ব্রিগেড। গোটা কলকাতা লিগে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর মহমেডান ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। যদিও জিতে শেষ রক্ষা করতে পারল না তারা। ১-১ ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হল লাল-হলুদকে। তবে মহমেডানও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মঞ্চে হারের লজ্জার হাত থেকে বাঁচল।
খেতাব যেহেতু আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, তাই উৎসবের মঞ্চ, হুডখোলা বাস- সবটা তৈরি ছিল। লাল-হলুদের কাছে হারলে এক গামলা দুধে এক ফোঁটা চোনা পড়ে যেত। কারণ প্রথমার্ধেই ১-০ এগিয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে মহমেডানের মুখ রক্ষা করে নায়ক হয়ে যান ফজলু রহমান মেথুকায়িল। মঙ্গলবার কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে মিনি ডার্বি ১-১ ড্র হয়ে যায়। আর মহমেডান মাঠে ছাড়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে। এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডানের দুই গোলদাতা যথাক্রমে বিবেক সিং এবং ফজলু রহমান মেথুকায়িল।
আরও পড়ুন: I-League এও ফিরল হোম-অ্যাওয়ে ফর্ম্যাট, প্রথম ম্যাচেই গোকুলমের মুখোমুখি মহমেডান
কলকাতা লিগের সুপার সিক্সের প্রথম তিন ম্যাচে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল মহমেডান। কিন্তু মিনি ডার্বিতে সেই রেকর্ড অক্ষত থাকল না। ঘরোয়া লিগের মূল পর্বে প্রথম গোল হজম করল সাদা কালো ব্রিগেড। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে লাল হলুদের হয়ে গোল করেন বিবেক সিং। এ দিন আগাগোড়াই মহমেডানকে টেক্কা দিয়ে যায় লাল হলুদ ব্রিগেড। বিশেষ করে লিগের শেষ ম্যাচে সম্ভবত সবচেয়ে ভালো এবং লড়াকু ফুটবল খেলল বিনো জর্জের দল।
প্রথমার্ধের শেষে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল। অবশ্য গোল করার সুযোগ পেয়েছিল মহমেডানও। কিন্তু একাধিক সুযোগ নষ্ট করেন ডিমেলো, ফৈয়াজরা। প্রথমার্ধে সাদা কালোর মাঝমাঠে সেই বাঁধুনিটাই ছিল না। তার মধ্যেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে এগিয়ে যেতে পারত মহমেডান। কিন্তু সেটা হয়নি। উল্টে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন বিবেক সিং। জেসিনের পাস থেকে ১-০ করেন জর্জ থেকে লাল হলুদে আসা ফুটবলার।
আরও পড়ুন: মোহনবাগানের সামনে থেকে সরবে ATK? শুরু ভাবনাচিন্তা, গঠন করা হল ৫ সদস্যের কমিটি
বিরতির পর কিন লুইস এবং ফজলু রহমান নামতেই ম্যাচের রং বদলাতে শুরু করে। আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ে মহমেডানের। ৬৬ মিনিটে কেন লুইসের শট ক্রসপিসে না লাগলে তখনই সমতা ফিরত। কিন্তু সেই ম্যাজিক গোলের জন্য নব্বই মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়নদের। আর এই ম্যাচে সাদা-কালোর নায়ক নিঃসন্দেহে ‘সুপারসাব’ ফজলু। ম্যাচের ৯০ মিনিটে হেড করে বল নামিয়ে দেন ওসমানে। ডান পায়ের ছোট্ট টোকায় বল জালে জড়ান ফজলু। ব্যাস, বাকিটা ইতিহাস। অতিরিক্ত সময় আজহারের শট পোস্টে না লাগলে জিতেই মাঠ ছাড়ত মহমেডান।
তবে ম্যাচ ড্র হতেই লাগামছাড়া উচ্ছ্বাসে ভেসে যায় সাদা-কালো শিবির। পরপর দু’বার কলকাতা লিগ জিতে আরও একবার ইতিহাসের পাতায় মহমেডান। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ১৯৪০ এবং ১৯৪১ সালে পরপর ঘরোয়া লিগ জিতেছিল কলকাতার তৃতীয় প্রধান। তার পর আর সেই যুগ ফেরেনি। ৪০ বছরের খরা কাটিয়ে গত বছর কলকাতা লিগ সাদা-কালো তাঁবুতে ঢুকেছিল। সেই ধারা বজায় থাকল এই মরশুমেও।
এ দিন খেলা দেখতে কিশোর ভারতীতে হাজির ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল টিমের কোচ স্টিফেন কনস্ট্যান্টাইনও।তিনি সম্ভবত এ দিন জুনিয়রদের খেলা দেখে সন্তুষ্টই হয়েছেন। তবে এ দিন পুরো ফোকাস ছিল সাদা-কালোর উপরেই। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতেই বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে মাতে মহমেডান ফুটবলাররা। কোচ আন্দ্রে চের্নিশভকে চুলে নিয়ে শূন্যে ছোড়া হয়। চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বিজয়ী দলের পুরস্কার মূল্য ১৫ লক্ষ টাকা। ম্যাচের সেরা ফজলু রহমান। ইমার্জিং প্লেয়ার ইস্টবেঙ্গলের বিবেক সিং। মহমেডানের লিগ জয়ের সেলিব্রেশনের মাঝেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আইএফএকে ৫০ লক্ষ টাকা অনুদানের ঘোষণা করেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
For all the latest Sports News Click Here