মায়ের ‘পায়ে’ খরচ করতে চান পুরস্কারের টাকা, সুপার সিঙ্গার শুভদীপের আছে আরও স্বপ্ন

এখন তিনিই ‘সুপার সিঙ্গার’। রবিবার গানের রিয়ালিটি শো ‘সুপার সিঙ্গার’ সিজন-৪ জেতার পর আবেগে ভেসেছেন বেহালার ছেলে শুভদীপ। এই জয়েরপর হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন গায়ক শুভদীপ।

দীর্ঘ ৫ মাসের লড়াই থামল। সুপার সিঙ্গার ৪-এর সেরার মুকুট, কেমন লাগছে?

শুভদীপ: এই ৫-৬মাসে খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছি। এখনে অনেক নতুন বন্ধু হয়েছে। আমাদের গ্রুমার্স দিদি-দাদারা, প্রতিযোগীরা সকলেই একটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছি। এখনও নিয়মিত সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছি। এখনও মানতে পারছি না যে আমরা ওখানে আর নেই।

‘সুপার সিঙ্গার’ মেন্টরদের কাছ থেকে কতটা সাহায্য পেয়েছেন?

শুভদীপ: সুপার সিঙ্গারের মেন্টর বা গ্রুমার্সরা আমার জন্য ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। প্রতিটা দিন দীপান্বিতা দিদি, সুজয় দাদা, শোভনদা, এঁরা ভীষণ যত্ন করে, ভালোবেসে শিখিয়েছেন। দীপান্বিতা দির কাছে স্নেহ পেয়েছি। উনি আমায় বিশেষ নামে ডাকেন, সেটা অবশ্য বলা যাবে না। আর সুজয়দা ভীষণ এন্টারটেইন করতেন, মোটিভেট করতেন। আর শোভনদা আমায় গানে সৃজনশীলতা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে শিখিয়েছেন, সেগুলি করার অনুমতি দিয়েছেন। আমি ওঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

আপনার বাবার গানের স্কুল আছে, ওঁর মৃত্যুর পর আপনিই দায়িত্ব সামলান? সেই স্কুল নিয়ে কোনও স্বপ্ন রয়েছে?

শুভদীপ: সুরাঙ্গন মিউজিক অ্যাকাডেমি, যেটা আমার বাবার ছিল। বাবা চলে যাওয়ার পর সেটা আমিই দেখি। এখানে প্রায় সাড়ে ৩০০ ছাত্র-ছাত্রী। চেষ্টা করছি, যতটা পারি ওদের গাইড করার। আমি ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিজেকে বড় দাদার মতোই দেখি। ওদের বকাবকিও করি, শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করি। বাবার এই অ্যাকাডেমির স্বপ্নটা আমি সারা জীবন বাঁচিয়ে রাখতে চাই। গোটা পৃথিবীতেই আমাদের ছাত্রছাত্রী আছেন, কাশ্মীর থেকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আমেরিকাতেও রয়েছেন। এটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

<p>'সুপার সিঙ্গার'-৪ শুভদীপ</p>

‘সুপার সিঙ্গার’-৪ শুভদীপ

ছোটবেলা থেকে কীভাবে গান শিখেছে, গান নিয়ে এগিয়েছেন?

শুভদীপ: আমি সৌভাগ্যবান যে ছোট থেকেই বাড়িতে গানবাজনার পরিবেশ পেয়েছি। বাবা-মা দুজনেই গানের দুনিয়ার মানুষ। আমার বাবা ওস্তাদ মুস্তাক হোসেন খান সাহাবের ছাত্র ছিলেন। তাই বাবার থেকে ক্লাসিক্যাল, গজল, ঠুংরি শিখেছি, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের বিষয়ে শিখেছি। এছাড়াও মহম্মদ রফি, কিশোর কুমারের গানও বাবার থেকে শিখেছি। মায়ের থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি শিখেছি। বাবা চলে যাওয়ার পর পণ্ডিত সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের কাছে খেয়াল, ক্লাসিক্যাল শিখেছি, উনি আমার গুরুজি। রাহুল দেশপান্ডের কাছে শিখেছি। শঙ্কর মহাদেবন স্যারও আমায় ভীষণ সাপোর্ট করেছেন। এছাড়াও আরও অনেকে রয়েছেন, যাঁদের থেকে অনেক শিখেছি, সকলের নাম নিয়ে শেষ করতে পারব না।

‘সুপার সিঙ্গার’ জেতার পর কী পরিকল্পনা?

শুভদীপ: ‘সুপার সিঙ্গার’ খেতাব জয়ের পর একটা দায়িত্ববোধ অনুভব করছি। কারণ কেউ কিছু জিতলে তিনি কী করছেন, সেটা আরও বেশি মানুষ খেয়াল করেন। আর তাই কিছু পরিকল্পনা রয়েছেই। আমি যেহেতু মিউজিক কম্পোজার, ডিরেক্টর হিসাবেও কাজ করি, তাই অরিজিনাল কম্পোজিশন নিয়ে কিছু কাজ করছি। পুজোর গান, নিউ ইয়ারের গান আসছে। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্ট আছে, সেটা এখনই বলব না। তবে সেটা বেশ বড় প্রোজেক্ট। আমি নিজেও বেশকিছু গান নিয়ে কাজ করছি। আর যেহেতু আমি অ্যাকাডেমিতে গান শেখাই, সেখানকার শিক্ষার্থীদেরও আমি এগিয়ে দিতে চাই। ওঁরা আমার মতো, কিংবা আমার থেকেও বেশি এগিয়ে যাক, সেটাই চাইব।

যাঁরা কাছাকাছি এসেও জিততে পারলেন না, তাঁদের কী বলবেন?

শুভদীপ: যাঁরা কাছাকাছি এসেও জিততে পারলেন না, তাঁরা সকলেই আমার বন্ধু। তাঁদের সঙ্গে আমি সময় কাটাই, বেড়াতে যাই। যাঁরা টপ ১৫-এ ছিলেন, তাঁরা সকলেই ভীষণ ভালো গান করেন। প্রথমে বুঝতে পারিনি, পরে গান শুনে মনে হয়েছে, এরাঁ তো দারুণ! আর যাঁর টপ-৬-এ উঠে এসেছেন, তাঁরা সত্যিই ভালো গান করেন। মন থেকেই বলছি কথাটা।

জীবনের লক্ষ্য কী?

শুভদীপ: ২-৩টে লক্ষ্য আছে। এক আমি চাই আমার বাবার নাম (ডক্টর শ্যামল দাস চৌধুরী) সবাই জানুন, ওঁকে সকলে জানুন। যে মানুষটা এত প্রতিভাবান ছিলেন, সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। তার সঙ্গে নিয়মিত রেওয়াজ চালিয়ে যেতে চাই। গানবাজনাটা আরও বেশি করে বুঝতে চাই, জানতে চাই। আরও ভালো গান করতে চাই। আমি যেটা শিখেছি সেটা ছড়িয়ে দিতে চাই, শেখাতে চাই। চারপাশের মানুষকে সাহায্য করতেও চাই। ভবিষ্যতে একটা NGO-করারও খুব ইচ্ছে রয়েছে।

এখন ‘সুপার সিঙ্গার’-এর দৌলতে আপনি বেশ পরিচিত মুখ, এই খ্যাতি কেমন লাগছে?

শুভদীপ: আসলে এখন অদ্ভু লাগছে! আগে স্কুটি নিয়ে, পায়ে হেঁটে পাড়ায় ঘুরতাম। এখন বের হলে অনেকেই কথা বলতে আসছেন। একটু অস্বস্তি তো হচ্ছেই। কারণ, আমি আসলে খুব ‘একা’ মানুষ। এখন পাড়াতেও বের হলে অনেকেই অনেক্ষণ কথা বলতে চাইছেন। এগুলো আসলে শিল্পী হিসাবে একদিকে বেশ ভালোও লাগছে, আবার একটু অস্বস্তিও হচ্ছে।

পরিচিত মুখ হিসাবে সমাজকে কী বার্তা দেবেন?

শুভদীপ: ওস্তাদ গুলাম আলি খান সাহাব একবার বলেছিলেন, ঘরে ঘরে সঙ্গীত শেখানো হলে, সমাজে আর কোথাও কোনও সমস্যা থাকবে না। তাঁর সেই কথাই আমি বলতে চাইব।

পুরস্কারের অর্থ দিয়ে কী করতে চান?

শুভদীপ: পুরস্কারের অর্থের কিছুটা আমার গানবাজনার জন্যই ব্যয় করব। সঙ্গীতের দুনিয়ায় আমি যেগুলি করতে চাই, শিখতে চাই, তার কিছু খরচ রয়েছে,সেটাতে কিছুটা টাকা ব্যয় করব। আর মায়ের হাঁটু প্রতিস্থাপন করাতে চাই। আর কিছু টাকা যদি কাউকে সাহায্য করতে পারি ভালো লাগবে। আরও কিছু ইচ্ছে আছে, সেটা আলাদা করে ভাবিনি।

পছন্দের গায়ক, গায়িকা কে?

শুভদীপ: গানের দুনিয়ায় আসলে অনেক ঘরণা, অনেক পৃথক শৈলী। ক্লাসিক্যাল, রক, ফোক, বলিউড-সহ গানের বিভিন্ন ঘরাণা রয়েছে। তাও যদি আমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দিক থেকে বলি, তাহলে বলব, বড়ে গুলাম আলি খান, ওস্তাদ আমির খান সাহাবের কথা। আর বলিউড বললে বলব মহম্মদ রফি, মান্না দে, কিশোর কুমার, আর বর্তমান সময়ের মধ্যে অরিজিৎ সিং আমার ভীষণ প্রিয়। ওঁর গায়কীর তুলনা নেই। আর মহিলা শিল্পীদের মধ্যে লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, শ্রেয়া ঘোষাল রয়েছে।

(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.