মাঝে সাঝে ঢুকে পড়া ইংরেজিকে সামলে, বাংলাদেশের সত্ত্বায় জেগে থাকে বাংলা: মিথিলা

রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, অভিনেত্রী, লেখিকা, সঙ্গীতশিল্পী

২১ ফেব্রুয়ারি আমার কাছে অনেকটা। কারণ, ২১ ফেব্রুয়ারি আমার নিজের ভাষার দিন, বাংলা ভাষার দিন। বাংলা ভাষার জন্য বাংলাদেশের ভাষা শহিদরা যে আত্মত্যাগ করেছেন, জীবন দিয়েছেন, সেই দিনটির গুরুত্ব আমার কাছে সবথেকে বেশি। বাংলা শুধু আমার ভাষা নয়, বাংলা আমার পরিচয়। আমি বাংলাদেশের মেয়ে, বাংলা আমার পুরো সত্ত্বা জুড়ে আছে। একটা ভাষার নাম দিয়েই একটা দেশ তৈরি হয়েছে, আমার জাতিগত পরিচয় পুরোটাই এই বাংলাভাষাকে ঘিরে। আর যাঁরা এই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কোনও শেষ থাকতে পারে না। সেকারণেই ২১ ফেব্রুয়ারি আমার আবেগের সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারি’, এই গানটা আমি যখনই শুনি, যতবারই শুনি, ততবারই আমার চোখে জলে ভরে যায়।

১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনের কথা আমরা ছোটবেলায় বই-এ পড়েছি। খুব ছোট থেকেই পড়ার বই-এ বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের ২১ ফেব্রুয়ারি নিয়ে, ভাষা আন্দোলন নিয়ে পড়তেই হয়। তাই খুব ছোট্ট থেকেই ২১ ফেব্রুয়ারির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জেনেই আমরা বড় হয়েছি। এই দিনটি আমাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায়। শুধু ঢাকা-তে নয়, বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় শহিদ মিনার আছে। ছোট থেকই  এই দিনে খুব ভোরে উঠে শহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দেওয়া আমাদের অভ্যাস। ২১ ফেব্রুয়ারি, এই দিনটির উদযাপন সরকারিভাবে, বিভিন্ন সংস্থার তরফে তো হয়-ই। এছাড়াও লক্ষ লক্ষ মানুষ এই দিনটিতে সকালে উঠে খালি পায়ে হেঁটে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। সেখানে বয়সের কোনও ভেদাভেদ নেই। ছোট, বড় সকলেই যান। এটাই দীর্ঘদিন, বহু বছর ধরে হয়ে আসছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শহিদ মিনার আছে, সেখানে ছোট থেকেই এই দিনে বাবা আমায় নিয়ে যেতেন। ছোট ছিলাম, ভিড়ে দেখতে পেতাম না, বাবা কোলে তুলে, উপরে তুলে সেই শহিদ মিনারে মানুষজনের শ্রদ্ধা নিবেদন দেখাতেন। এরপর লাইন দিয়ে গিয়ে সেখানে ফুল দিতাম। পরে যখন বড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, তখন তো নিজেরাই এই দিনটির উদযাপন করেছি। ২১ ফেব্রুয়ারি শোকের দিন, কারণ দিনটি বহু ভাষা শহিদের রক্তে ভেজা, তবে একই সঙ্গে এই দিনটি আমাদের গর্বের, এই দিনে আমাদের উৎসব হয়। এই দিনেই তো আমরা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছি, তবে বাংলাদেশ বহু আগে থেকে থাকলেও বাংলা ভাষা আন্দোলের পরই আসলে বাংলাদেশ আসল স্বীকৃতি পায়।

এখনকার প্রজন্মের কথা যদি বলি, তাহলে বলব বাংলাদেশে অন্তত এইদিনটিতে এখনকার প্রজন্মও একই ভাবে পালন করে থাকেন। ছোটবেলায় এই দিনটি যেভাবে পালন হত, এখনও সেটাই দেখছি। তবে হ্যাঁ, শিশুরা, তরুণ-তরুণীরা যাঁরা ইংরাজি মাধ্যমে পড়ছেন, তাঁরা হয়তবা ভাষা আন্দোলনের কথা বইয়ে পড়ে হয়ত বড় হচ্ছে না। তবে বাবা-মায়ের মুখে শুনে বড় হচ্ছে। তাঁরা কতটা এই আবেগের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পারবে, তা সত্যিই বলতে পারব না। পৃথিবী বদলে গেছে…, বাংলাদেশও বদলে গেছে। তবে আমি আমার মেয়ে বাংলা ভাষা, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের কথা তো বলি। আমার মনে হয় বাংলাদেশের অন্যান্য বাবা-মায়েরাও বলেন, কারণ বাংলাদেশের কাছে, বাংলাভাষাটা সবথেকে বড় জাতিগত পরিচয়।

<p>রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, অভিনেত্রী, সমাজকর্মী, লেখিকা, বাংলাদেশ</p>

রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, অভিনেত্রী, সমাজকর্মী, লেখিকা, বাংলাদেশ

আজকাল কথা বলতে গেলে ইংরাজি মিশে যায়। সেটাও শিক্ষা ব্যবস্থার কারণেই হয়েছে। কারণ অনেকেই ইংরাজি মাধ্যমে পড়েন। যেকারণে ছোটরা অনেকেই ইংরাজিটা স্বচ্ছন্দেই বলে। এই বিশ্বায়নের সময়ে ছোট থেকেই বাংলাদেশের শিশুরা ইংরাজিতে কথা বলছে, ছবি দেখছে, গান শুনছে। শুধু ইংরাজি কেন, অন্যভাষার সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছে। এখন অনেকের কাছেই ভীষণ পরিচিত কোরিয়ান ব্যান্ডস, কোরিয়ান ড্রামা ভীষণ পরিচিত, এছাড়াও জাপানিস, ফ্রেঞ্জ, অ্যারাবিক, আর হিন্দি তো আছেই। ইংরাজিটা পৃথিবীর যেকোনও জায়গায় ব্যবহার করা যায়, তাই এটা এখন শেখানো হয়। আমার আসলে মনে হয়, এক ভাষার সঙ্গে অন্য ভাষার কোনও দ্বন্দ্ব নেই। তবে নিজের মাতৃভাষাটা সঠিকভাবে জানতে হবে, বলতে হবে, পড়তে হবে, শিখতে হবে, শ্রদ্ধাটাও থাকতে হবে।

আমিও শিল্পী হিসাবে এখন একটা ছোট্ট উদ্যোগ নিয়েছি। শিশুদের জন্য বাংলায় গল্পের বই লিখতে শুরু করেছি। সেটা ৪ থেকে ৮ বছরের শিশুদের জন্য। আমি শিশুদের নিয়েই কাজ করি। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে আমার ৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। আর সেটা বাংলায়। কারণ, বাংলায় শিশুদের জন্য এখন আগের মতো ভালো বই পাওয়া যায় না। তাই বাংলাতেই লিখব ঠিক করি। একটা সিরিজ শুরু করেছি, ‘আইরা ও আর মায়ের অভিযান’ নামে। যেটা দুটো সিরিজ বের হয়েছে। আমি এটা লিখেছি, কারণ আমার মেয়ে আইরা আর আমি একসঙ্গে প্রচুর ভ্রমণ করেছি। আমার কাজের জন্যই আফ্রিকায় যেতে হয়, বিভিন্ন দেশে যেতে হয়, সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই লিখছি, এছাড়াও আমি বাংলা নিয়েই থাকি, দুই বাংলাতেই অভিনয় করছি, বাংলায় গান লিখেছি, গেয়েছি, বাংলা আমার কাছে সবথেকে আগে। শিল্পী হিসাবে এবং মানুষ হিসাবেও নিজের বাংলা ভাষার জন্য এইটুকুই করার চেষ্টা করছি…

মিথিলার সাক্ষাৎকারের অনুলিখন

For all the latest entertainment News Click Here 

Read original article here

Denial of responsibility! TechAI is an automatic aggregator around the global media. All the content are available free on Internet. We have just arranged it in one platform for educational purpose only. In each content, the hyperlink to the primary source is specified. All trademarks belong to their rightful owners, all materials to their authors. If you are the owner of the content and do not want us to publish your materials on our website, please contact us by email – [email protected]. The content will be deleted within 24 hours.