মরশুমের শেষ ডার্বিতে চলবে শেয়ানে শেয়ানে লড়াই,কী বলছেন ATKMB আর EBFC-র ফুটবলাররা?
ডার্বির উত্তেজনার আঁচও এখন একেবারে তুঙ্গে। আর কিছু সময়ের অপেক্ষা। তার পরেই শুরু হয়ে যাবে বহু প্রীতক্ষিত ডার্বি। ডার্বিতে নামার আগের ম্যাচে দুই দলই দুর্দান্ত জয় পেয়েছে। ইস্টবেঙ্গল এফসি হারিয়েছে লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি-কে এবং এটিকে মোহনবাগান হারিয়েছে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-কে। ফলে দুই দলই এখন তেতে রয়েছে। এবং ফিরতি ডার্বিতে একে অপরের বিরুদ্ধে জয় পাওয়ার জন্য মরিয়া।
টানা সাতটি মুখোমুখিতে মোহনবাগানের কাছে হেরেছে ইস্টবেঙ্গল। তাদের কাছে এই ডার্বি মর্যাদা ফেরানোর লড়াই। এটিকে মোহনবাগানের ক্ষেত্রে শুধু চিরপ্রতিদ্বন্দীদের ওপর আধিপত্য বজায় রাখার লড়াই-ই নয়, তিন নম্বরে থেকে প্লে অফের প্রথম ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলার চ্যালেঞ্জও। এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেলে তবেই তা সম্ভব হবে। তাই এই এই ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
ডার্বিতে নামার আগে উত্তেজনা ফুটছেন দুই দলের ফুটবলাররা। তাঁরা কী বলছেন, দেখে নিন:
জেক জার্ভিস: এটাই সম্ভবত আমার ফুটবল জীবনের সবচেয়ে বড় ডার্বি হতে চলেছে। এখানে সই করার আগে থেকেই এই ডার্বি সম্পর্কে শুনে আসছি। প্রচুর সমর্থক আসে এই ম্যাচ দেখতে। উত্তেজনাও তুঙ্গে থাকে। এখানে আসার আগে কলকাতা ডার্বির কিছু ভিডিয়ো দেখেছি। এই ম্যাচ নিয়ে মানুষের উত্তেজনা, আবেগ দেখেছি। এখানে এসে উপভোগ করছি। আমি যে ক্লাবের খেলায় প্রভাব ফেলতে পেরেছি, ক্লাবকে ভালো ফল এনে দিতে পেরেছি, সে জন্য ভাল লাগছে। আরও যত খেলব, তত নিজেকে প্রমাণ করতে পারব। চাইব, ডার্বিতে সমর্থকেরা গ্যালারি ভরিয়ে তুলুন। যত আওয়াজ হবে, তত আমরা তেতে উঠব এবং নিজেদের সেরাটা দিতে পারব। আমাদের যে রকম পারফরম্যান্স, তাতে ভালো ফল না হওয়ার কিছু নেই। অনেক দিন ধরে দলের সবাই পরিশ্রম করছে। শেষটা ইতিবাচক হলে ভালই লাগবে। এই ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে শেষ করে আমরা সুপার কাপে আবার ফিরে আসব।
আরও পড়ুন: ডার্বি সবচেয়ে কঠিন ম্য়াচ- তবু ATKMB-কে হারিয়েই বাকি ব্যর্থতা ভোলাতে চান EBFC কোচ
স্লাভকো দামিয়ানোভিচ: ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ বেশ শক্তিশালী। ওদের ক্লেটন সিলভা দারুন স্ট্রাইকার, সুযোগসন্ধানী। ১২টা গোল করেছে এ বার। ও যখন অন্য ক্লাবে খেলত, তখন আমি ওর বিরুদ্ধে অন্য ক্লাবের হয়ে দু’বার খেলেছি। একবারও আমাকে হারাতে পারেনি। ওর খেলার ধরনটা আমি জানি। এ বারও আমার সঙ্গে ও পেরে উঠবে না। ওকে গোল করতে দেব না, এই শপথ নিয়েই মাঠে নামব। ব্রেন্ডানের জায়গায় হয়তো আমিই খেলব। সম্প্রতি কয়েকটি ম্যাচে খেলেছি। দলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। শুরু থেকে নামলে নিজের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করব। সার্বিয়ান ডার্বিতে আমি নিয়মিত খেলতাম। তবে কলকাতা ডার্বিতে এই প্রথম, এটা ভেবেই রোমাঞ্চিত হচ্ছি। গ্যালারি ভর্তি সমর্থকদের সামনে খেলব, এটা আরও বড় মোটিভেশন আমার কাছে। ডার্বির ভিডিয়ো দেখেছি। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের আবেগ দেখেছি। প্রথম বার কলকাতায় ডার্বি খেলতে নামব বলে কোনও চাপ নেই। তবে চাপ না থাকলে আবার খেলার মজাটাই পাওয়া যায় না। সেটা উপভোগ করতে চাই ও গোল না খেয়ে ম্যাচটা জিততে চাই।
দিমিত্রি পেত্রাতোস: ডার্বি সব সময়ই মর্যাদার লড়াই। অস্ট্রেলিয়ায় একাধিক ডার্বি খেলেছি। ওখানে যে মানসিকতা নিয়ে খেলতে নেমেছি এখানেই সেই মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামব। ইস্টবেঙ্গল প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে গেলেও এই ম্যাচে যথেষ্ট মোটিভেশন পাবে। আমাদের কাছেও এটা সন্মানের লড়াই। প্লে অফে নামার আগে লিগের শেষ ম্যাচ, তিন নম্বরে টিকে থাকারও লড়াই আমাদের। তাই জিততেই হবে। গ্যালারি ভর্তি সমর্থকেরা থাকবেন। তাদের খুশি করা আমাদের দায়িত্ব। ইস্টবেঙ্গল শক্তিশালী। বিশেষ করে ওদের আক্রমণ ও উইং প্লে বেশ ভালো। লিগ চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে। ফলে ওদের খাটো করে দেখার প্রশ্নই ওঠে না। তবে নিজেদের খেলা নিয়েই বেশি ভাবছি। আমি গোল করব কি না, সেটা বড় কথা নয়, ম্যাচ জেতাটাই শেষ কথা। আমরা আইএসএলের সব দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখি। শুধু নিজেদের খেলাটা ঠিকমতো খেলতে হবে।
আরও পড়ুন: ম্যাকহিউ, হ্যামিল নেই, বৌমাস অনিশ্চিত, তবু ডার্বি জয় ছাড়া ভাবছে না ATKMB কোচ
প্রীতম কোটাল: ইস্টবেঙ্গল এই মরশুমে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাগ্যের সাহায্য পায়নি। পেলে এই জায়গায় ওদের থাকার কথা নয়। তাই ডার্বিতে ওদের হাল্কা করে নেওয়া যাবে না। ওদের রক্ষণ সঙ্ঘবদ্ধ, তেমনই কাউন্টার অ্যাটাকেও ওরা বেশ ভালো। ক্লেটন, মহেশ যে জায়গাগুলো ব্যবহার করে আক্রমণে ওঠে, সেগুলো আমাদের দেখে রাখতে হবে। ডার্বিতে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে, এটা কোনও ব্যাপার নয়। এমন আগেও হয়েছে, যাদের এগিয়ে রাখা হয়েছে, তারা হেরে গিয়েছে। এই ম্যাচে যাদের মানসিক শক্তি বেশি, যারা আক্রমণাত্মক ভাবে শুরু করতে পারবে, তারাই সফল হবে। এই মরশুমে আমরা প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করেছি। সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে আমরা আরও ভালো জায়গায় থাকতাম। এই ম্যাচে আমাদের ক্লিন শিট রাখতে হবে, আমরা আছি সেই জন্য। যারা স্ট্রাইকার আছে, তাদেরও দায়িত্ব গোল করার।
চ্যারিস কিরিয়াকু: আমাদের এই ম্যাচটা জেতার ক্ষমতা রয়েছে এবং আমরা তা আগের ম্যাচেই প্রমাণ করেছি। এই মরশুমে আমাদের ধারাবাহিকতার অভাব ছিল বলেই আমরা তেমন কিছু করতে পারিনি। কিন্তু কিছু ম্যাচে আমরা প্রমাণ করেছি যে, আমাদের যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে। এই ম্যাচটা নিয়ে আমি খুব উত্তেজিত হয়ে আছি। আমার পরিবারের সদস্যরা এই ম্যাচ দেখতে এসেছে। আমার মা এসেছেন। তাঁর সামনে শনিবার ম্যাচটা জিততে চাই। তা হলে তাঁদের সঙ্গে আনন্দটা ভাগ করে নিতে পারব।
শুভাশিস বোস: আজ পর্যন্ত কোনও ডার্বিতে আমি হারিনি। সেই রেকর্ড অক্ষত রাখতে চাই। আমাদের জিততেই হবে। কারণ, আমাদের তিন নম্বরে থেকে নিজেদের মাঠে খেলার সুবিধা আদায় করে নিতে হবে। প্লে অফ থেকে ছিটকে গেলেও, ইস্টবেঙ্গল ভালো খেলছে। শেষ ম্যাচে তো ওরা লিগ চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েছে। ওদের আর হারানোর কিছু নেই। তাই ওরা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবে। আমাদের কোনও চোপ নেই। বহু দিন ডার্বি খেলছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই ম্যাচে কোনও ফেভারিট হয় না। অনেক সময় সেরাটা খেলেও হেরে যেতে হয়। আমাদের খেলোয়াড়রা এই ম্যাচে প্রত্যেকে একশো শতাংশ দেওয়ার জন্য তৈরি। জেতার জন্য মরিয়া। আমাদের বেশির ভাগেরই ডার্বির অভিজ্ঞতা আছে এবং জিতে ফেরার অভ্যাসও আছে।
For all the latest Sports News Click Here