‘ভারতীয় সংগীতের বেঞ্চমার্ক নয় বলিউড, প্রমাণ করল নাটু নাটুর অস্কার জয়’, মত ইমনের
২০১৭ সালে অনুপম রায়ের সুরে ‘প্রাক্তন’ সিনেমায় প্রথমবার প্লেব্যাক গেয়েছিলেন শিল্পী ইমন চক্রবর্তী। প্রথম গানেই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। অসমের শিলচর শহরের প্রতি তাঁর বিশেষ টান রয়েছে, কারণ এটা প্রয়াত কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের শহর। বাঙাল ঘরের মেয়ে ইমন একদিকে যেমন শুটকি খেতে ভালোবাসেন, অন্যদিকে সিলেটি গানের প্রতি তাঁর রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। শুক্রবার শিলচরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি)’র ‘ঐকতান’ অনুষ্ঠানে এসে মঞ্চ মাতিয়েছেন তিনি। ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তুলে ধরেন বহু বিষয়ে তাঁর অভিমত।
‘শিলচর কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের শহর, এখানের সংস্কৃতি গান এবং মানুষ আমার কাছে খুব প্রিয়। কালিকাদা’কে নিয়ে অজস্র স্মৃতি রয়েছে। বাংলা লোকসংগীত এবং বাংলা সংগীতে তিনি এক স্তম্ভ ছিলেন, রয়েছেন এবং থাকবেন। আমরা দেখেছি বহু শিল্পী গান করেন। তবে তাঁদের ভেতরটা ফাঁকা। কালিকাপ্রসাদ ছিলেন জ্ঞানের ভাণ্ডার, একজন আদ্যোপান্ত জ্ঞানী ব্যক্তি। অকালে তাঁর চলে যাওয়া এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি শুনেছি তাঁর গোটা পরিবার সংগীতময় এবং ইচ্ছা আছে যে একদিন তাঁর বাড়ি যাব’, এমনটাই বলেন ইমন।
অসমের বরাক উপত্যকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংস্কৃতি এবং গানের দিক দিয়ে এটা বৃহত্তর সিলেটের অংশ। সিলেটের গান বহুভাবে জাতীয় স্তরের সিনেমায় এবং স্টেজে তুলে ধরেছিলেন বহু গুণী ব্যক্তি। আমরা সেইসব গান শুনেছি এবং বারবার গাই। বহু স্টেজে সিলেটের গান গেয়েছি এবং এই মাটির গানের আলাদা গুণ রয়েছে।’
আরও পড়ুন: Arijit-Iman: ‘আমি যে এখনও বেঁচে আছি, সেটাই অনেক…’, অরিজিৎ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে সেলফি ইমনের
বলা হয়, বরাক উপত্যকার মানুষের উচ্চারণ বহু ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে তাঁদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে সংগীত এবং সিনেমার ক্ষেত্রে। ইমন বলেন, ‘আমরা কালিকাদা’কে তাঁর নিজের মাটির ভাষায় কথা বলতে শুনেছি, তবে সেটা কখনও গানের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। প্রতিভা থাকলে এসব উচ্চারণ বা অন্যান্য ছোটখাটো জিনিস কখনওই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। ভিতরে আগুন থাকলে সেটা ছাই দিয়ে ঢাকা দেওয়া যায় না।’
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে একটি পোস্টের জন্য ট্রোল করা হয়েছিল এবং তিনি ট্রোলের বিরুদ্ধে বেশ সুন্দর উত্তর দিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে ইমন বলেন, ‘এদের ডিল করতে শিখে গিয়েছি। সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক রয়েছে, ২০১১ সালে একটা ইউটিউব চ্যানেল বানিয়েছিলাম, সেখানে নিজের কিছু গান আপলোড করেছিলাম। সেটা দেখে একসময় অনুপম রায় আমায় তার সিনেমায় গান গাইতে বলেছিলেন, বাকিটা ইতিহাস। ফলে সোশ্যাল মিডিয়াকে শুধুমাত্র নেগেটিভ চোখে দেখলে হবে না। যাঁরা ট্রোল করেন, তাঁদের প্রতি করুণা হয়। কারণ তাঁরা পিছন থেকে কাঠি করতে জানেন এবং আমরা কাজ করে এগিয়ে যেতে জানি।’
জাতীয় পুরস্কার নিয়ে ইমন
শ্রেয়া ঘোষালের পর ইমন দ্বিতীয় বাঙালি গায়িকা যে প্রথম গানে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এই প্রসঙ্গ উঠতেই ইমন বলেন, ‘কোনওভাবেই শ্রেয়া ঘোষালের সঙ্গে আমার তুলনা চলে না অথবা তাঁর সঙ্গে আমায় এক জায়গায় বসানোও যাবে না। উনি সারা দেশের সংগীত জগতে বাংলার নামকে যেখানে নিয়ে গিয়েছেন, সেটা তুলনার বাইরে, উনি আমার কাছে নমস্য। বয়সে আমাদের দু’জনের খুব একটা তফাৎ না হলেও গুণের দিক দিয়ে তিনি এতটাই উপরে তাঁকে শুধু আইডিয়ালাইজ করা যায়।’
জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর শিল্পীদের নাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে, আসতে থাকে বহু অফার। ২০১৭ সালে তিনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। তবে তাঁর বলিউডে যাওয়ার জন্য আলাদা কোনও স্বপ্ন নেই, এমন জানান ইমন। তিনি বলেন, ‘বাংলার মধ্যে এতটাই রসদ রয়েছে, সেটা শেষ করা যায় না। আমি নিজের ভাষায় অনেক বেশি সাবলীল। অন্য কোথাও গিয়ে গান গাইছি না বলে আক্ষেপ নেই। আমি এবং আমার স্বামী এআর রহমানের নহি সামনে গানটি গেয়ে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেছিলাম। এআর রহমান তাঁর ডকুমেন্ট্রিতে আমাদের গাওয়া অংশটি কাজে লাগিয়েছেন। এটা কম বড় প্রাপ্তি নয়। এখন আর রিজিওনাল বলে কিছু হয় না, ভালো কাজের দাম সারাবিশ্বে রয়েছে। আরআরআর বলিউডের সিনেমা নয়, তবু সেটা অস্কার পেয়েছে এবং সারা পৃথিবীতে তার চর্চা হচ্ছে।
স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের ছাত্রী‘
ইমন কিংবদন্তি স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের ছাত্রী। স্বাগতলক্ষ্মী একসময় শিলচরে এসেছেন এবং ২০১৭ সালে তার ছাত্রীর জাতীয় পুরস্কার বিজয়ের পর উচ্ছসিত হয়েছিলেন তিনি। ইমন বলেন, ‘স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের মতো গুরু পাওয়া সৌভাগ্যের। তিনি ম্যাজিক, তাঁর গান দেখলেও শেখা যায়। আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান তিনি আমার গুরু।’ রবীন্দ্রনাথের গান বিভিন্নভাবে গাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেও সময়ের আগে ছিলেন। তিনি কখনওই একটা বদ্ধমূল ধারণায় আটকে ছিলেন না। অতিরিক্ত যন্ত্রসংগীত ব্যবহার করা ঠিক নয়। তবে একটু আলাদা করে যদি সুরে কেউ গান গায়, সেটা ভুল নয়।’
শুটকি মাছ নিয়ে যাওয়ার আবদার ইমনের বাবা
বরাক উপত্যকায় এসেছেন শুনে তাঁর বাবা বারবার বলে দিয়েছেন শুটকি নিয়ে যেতে, এমনটাই জানালেন ইমন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবার বাড়ি বাঙাল। তবে শ্বশুরবাড়ি ঘটি। বাবার বাড়িতে আমরা শুটকি সিদল খাই, আমার ভীষণ প্রিয় এগুলি। আমার স্বামী লইটা মাছ খায়, তবে শুটকি খায় না। আমিও ফুডি। তবে এখন স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিয়েছি। প্রতি ১৫ দিনে একটি নিয়ম ভেঙে ফেলি।’
ম্যাজিকাল ইমন
শুক্রবার সন্ধ্যায় এনআইটিতে এক মনোরম অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেছেন ইমন। ছাত্রছাত্রীরা মুগ্ধ হয়ে তাঁর গান শুনেছে। তিনি বলেছেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে গান গাওয়ার মজাটাই আলাদা। মনে হয় যেন নিজের ছাত্রজীবনে ফিরে গিয়েছি। তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা যে এনার্জি নিয়ে আসে, তাতে গায়ক নায়িকাদের উৎসাহ বেড়ে যায়। শিলচর এনআইটিতে এসে একটা দারুণ উপলব্ধি নিয়ে ফিরছি।’
আরও পড়ুন: Iman Chakraborty: ২ বছরে পা রাখল, নিজের মেয়ের সঙ্গে সকলকে পরিচয় করালেন গায়িকা ইমন চক্রবর্তী
তিনি বলেন, ‘আজকের যুগে গান গাওয়ার সঙ্গে গান দেখানোটাও। ধরুন মাইকেল জ্যাকসনের শুধু গান তো শোনা যায় না, দর্শকরা তাঁকে সমানভাবে দেখতেও চান। লেডি গাগা বা টেলর সুইফটের মত শিল্পী যখন স্টেজে ওঠে নিজেদের তুলে ধরেন, আমরা বাহবা দিই। অথচ আমরা আশা করি শ্রীকান্ত আচার্যের মতো শিল্পী শুধু হারমোনিয়াম নিয়েই গান গাইবেন। এই ধারণাটা ভুল। একজন শিল্পী যদি গলায় সুর এবং লুক, দুটো নিয়ে নিজেকে স্টেজে তুলে ধরতে পারেন, যদি তার সেই ক্ষমতা থাকে, সেটা আমাদের গ্রহণ করা উচিত। আজকাল দর্শক অনেক উন্নত এবং তারা এটা পারেন। আর দিনের শেষে দর্শকরাই আমাদের মাই বাপ।’
(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)
For all the latest entertainment News Click Here