‘ভাত ছড়ালে শুধু কাক নয়, সব প্রাণীই আসে, এমনকি মানুষও’, স্মৃতিতে ডুব দিলেন চঞ্চল
এপার এবং ওপার, দুই বাংলার মানুষের কাজেই এখন বেশ পরিচিত মুখ অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ‘হাওয়া’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর দু’বাংলার মানুষের কাছেই বারবার আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি। তবে ‘হাওয়া’ মুক্তির কিছু পরই অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবনে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। গত বছর ডিসেম্বরে বাবা রাধাগোবিন্দ চৌধুরীকে হারান চঞ্চল। বাবার মৃত্যু শোক যে এখনও তিনি সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠতে পারেননি। আর তা সাম্প্রতিক সময়ে বারবার অভিনেতার ফেসবুক পোস্টে ফুটে উঠেছে। ফেসবুকের দেওয়ালে নানান কিছু নিয়েই লিখতে দেখা যায় চঞ্চল চৌধুরীকে। সেসব লেখায় প্রায়ই মিলেমিশে যায় বাবার কথা। সোমবারও ঠিক তেমনটাই ঘটল।
সোমবার ফেসবুকে তাঁর ছোটবেলার জীবন, গ্রামে বেড়ে ওঠা, গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত পাখি কাক,শালিক,টুনটুনি,কবুতর, ঘুঘু, টিয়া, চড়ুই, ফিঙে, বুলবুলি, ময়না, বক এদের নিয়ে কথা বলেছেন চঞ্চল চৌধুরী। তবে তাঁর লেখায় কাক ও শালিকের কথা-ই বেশি উঠে এসেছে। লিখেছেন জোড়া শালিক ও কাক নিয়ে থাকা বাঙালির নানান সংস্কারের কথা, উঠে এসেছে ৪৩-এর দূর্ভিক্ষের কথাও। আবার বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে পড়াশোনা করার কথা, বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে আসা কাকেদের কথা, তবে সেসব কথার মাঝেও ঢুকে পড়েছে বাবার স্মৃতি।
আরও পড়ুন-‘ওর মেজাজ বুঝে কথা বলি’, সলমনকে নিয়ে বললেন সুশান্ত সিং রাজপুতের ছবির পরিচালক
আরও পড়ুন-কেউ কেউ সগর্বে বলেন, ‘আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না’, শুনলে হাসি পায়: চঞ্চল
চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, ‘ছোট বেলা থেকেই গ্রামে থাকার সুবাদে দেশীয় অনেক পাখির সাথে পরিচয় হয়েছিল,সখ্যতা হয়েছিল। তাদের মধ্যে কাক,শালিক,টুনটুনি,কবুতর,ঘুঘু,টিয়া,চড়ুই,ফিঙে,বুলবুলি,ময়না,বক….ইত্যাদি। ওদের সাথে হাটে,ঘাটে,মাঠে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হতো। ওদেরও মনে হতো একই গ্রামের বাসিন্দা। তবে পরিবারের সদস্য মনে হতো কাক আর শালিককে। প্রতিদিনই বাড়ির বাঁশ ঝাঁড়,গাছ আর উঠোনে ছিল ওদের চঞ্চল ছুটাছুটি। জোড়া শালিক দেখলে যেমন যাত্রা শুভ হয়, ঠিক তেমনি সনাতন ধর্ম মতে বাবা মায়ের মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান পর্যন্ত প্রতিদিন প্রথমে কাকের মুখে খাবার তুলে তারপর নিজেদের খাবার খাওয়ার ধর্মীয় রীতি প্রচলিত আছে। সে কারনেই অন্য পাখিদের চেয়ে কাক কে একটু অন্যভাবে চিনেছিলাম।দুপুর বেলা গাছের ডালে কাকেরা কা কা কা কা করতো,আর আমাদের মা ভাত ছিটিয়ে দিতেন প্রতিদিন। এভাবেই আমাদের মতই মায়ের হাতের ভাত কাক সহ অনেক পাখিই খেতো।’
অভিনেতা লিখেছেন, ‘কাকের কন্ঠটা কর্কষ,কিন্তু রং টা কুচকুচে কালো। কালো রং আমার খুব পছন্দের….ভাত ছেটালে কাক আসে এই কথাটি বলে শুধু কাকদেরকে অপমান করা হয়েছে। ভাত ছেটালে সকল প্রাণীই আসে,মানুষও বাদ যায় না। ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ের পাতায় আঁকা কিছু কাকের ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ছবিগুলো এঁকেছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন,সেই ৪৩ এর দূর্ভিক্ষের সময়। মানুষ,কাক আর কুকুর ডাস্টবিন থেকে খাবার খাচ্ছে,যেন সবাই এক….শত্রুও একটাই…ক্ষুধা। কোন যোগসুত্র ছিল কিনা মনে নেই, পরবর্তীতে আমি কিন্তু জয়নুল আবেদীনের আর্ট কলেজ অর্থাৎ চারুকলায় লেখাপড়া করেছি। আর পুরো চারুকলা জুড়ে দেখেছি সেই জয়নুল আবেদীনের কাকের দেশ। চারুকলায় কাকদের সাথে অনেক গুলো বছর পার করেছি একই গাছের ওপর নীচে। এখনও চারুকলায় গেলে ওদের সংগে কথা হয়।অনেক কাকেরই বাবা মা অনেক আগেই মারা গেছে।যেমন কিছুদিন আগে চলে গেছে আমার বাবা।পৃথিবীর সকল কাক ভালো থাক….সকল প্রানী ভালো থাক॥’
খুব শীঘ্রই সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে মৃণাল সেনের ভূমিকায় দেখা যাবে চঞ্চল চৌধুরীকে। সে ছবির শ্যুটিংয়ের কাজ ইতিমধ্যেই প্রায় শেষ। বাকি শুধু ডাবিং।
For all the latest entertainment News Click Here