ব্যাক্তিগত স্বার্থে #Metoo-র অভিযোগ আনাকে সমর্থন করি না, এটা অন্যায়: সন্দীপ্তা
স্বামীর সঙ্গে সুখেই কাটছিল সংসার, তবে হঠাৎ একটা ঝড় এসে সবকিছু কেমন যেন ওলটপালট করে দিয়ে গেল। দিশেহারা অপর্ণা। কী করবেন স্বামী-সংসার আর তাঁর ‘নষ্টনীড়’ নিয়ে! সেসব নানান টুকিটাকি বিষয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে আড্ডা দিলেন অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেন।
এক্কেবারে অপর্ণার লুকে সেজে এসেছেন তো?
সন্দীপ্তা: হ্যাঁ, (একগাল হাসি) একদম অপর্ণার লুকে।
প্রথমে জিগ্গেস করি, ‘নষ্টনীড়’ রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প আছে, আপনার এই ‘নষ্টনীড়’-এর সঙ্গে ওটার কোনও সম্পর্ক কী আছে?
সন্দীপ্তা: আমার এই ‘নষ্টনীড়’-এর পোস্টারও ২৫ বৈশাখে মুক্তি পেল ঠিকই, তবে এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘নষ্টনীড়’-এর কোনও সম্পর্ক নেই। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা গল্প।
অপর্ণার ও তাঁর ‘নষ্টনীড়’ নিয়ে বিষয়টা ঠিক কেমন?
সন্দীপ্তা: ‘নষ্টনীড়’-এ আমি অপর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়, একদম সাধারণ একজন গৃহবধূ। অপর্ণা পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিল, এমফিল-এ স্কলার ছিলাম, তবে পড়ে পড়াশোনাটা আর চালিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়নি। পরে ঋষভের সঙ্গে আমার দেখা হয়, বিয়ে হয়। পরে একটা বেকারি খুলি, আর যেহেতু আমি সেলাই করতে বেশ ভালোবাসতাম, তাই নিজের একটা বুটিক খুলি। ঋষভ ও ছোট্ট মেয়ে মিঠিকে নিয়ে আমার সুখের সংসার। অপর্ণা সবসময়ই বলে, ও একজন পারফেক্ট স্বামী পেয়েছে, যিনি আবার একজন খুব ভালো বাবাও। ঋষভ সত্য়িই অপর্ণার ভীষণ যত্ন নেয়। সবমিলিয়ে একটা পারফেক্ট সংসার বলতে আমরা যা বুঝি, অপর্ণার সংসারটাও ঠিক তেমন।
অপর্ণা-ঋষভের সুখের সংসার ‘নষ্টনীড়’ হয়ে গেল কীভাবে?
সন্দীপ্তা: ঋষভ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, কলেজে ওঁরই এক ছাত্রী হ্যাশট্যাগ #MeToo র অভিযোগ আনেন। সুখী একটা সংসারে ঝড় ওঠে। অপর্ণার জীবন ঘেঁটে যায়। যদিও ওঁর যে স্বামীর প্রতি বিশ্বাস, সেটা কিন্তু অটুট থাকে। অপর্ণা খুব ভালো করে জানে যে তাঁর স্বামী সত্যিই এমন কিছুই করতে পারে না। তবে তারপরেও আশেপাশে অনেক কিছুর চাপ আসে, যেমন পরিবারের, প্রতিবেশী, কলেজে বিভিন্ন জায়গা থেকে। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ছোট বিষয়ও ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষয়া নিয়ে অপর্ণা আইনজীবীর পরামর্শ নেয়। কিন্তু একটা সাধারণ বাড়ির মেয়ের কাছে আইনজীবীর কাছে যাওয়া, কথা বলা অনেক বড় বিষয়। তবে গল্পটা কীভাবে এগোয়? ঋষভ কি সত্যিই দোষী নাকি নির্দোষ? অপর্ণার সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্ক কী পরিণতি পায়, সবকিছু নিয়েই ‘নষ্টনীড়’।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতেই বারবার #MeToo-র অভিযোগ উঠে এসেছে, এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
সন্দীপ্তা: ফিল্ম ইন্ডাস্টিতে #MeToo-র কথা বেশি উঠে আসে, কারণ এগুলির কথা লোকজন জানতে পারেন বেশি। অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি, এমনকি অনেক পরিবারের মধ্যেও এই সমস্যা রয়েছে। এটা শুধু এখন নয়, বহু যুগ ধরে এই সমস্যা রয়েছে। অনেক সময় এমনও হয়েছে স্ত্রী জানতে পেরেছেন, তবে শুধু মাত্র পরিবার যাতে না ভাঙে, সেটা ক্ষমা করে দিয়ে তাঁরা সংসার টেনে নিয়ে গিয়েছেন। এমনকি সংসারেও শেখানো হয়, সবকিছু মনে রাখতে নেই, কিছু বিষয় এড়িয়ে চলতে হয়, মেয়েদের এত ভাবলে চলে না। এভাবেই চলেছে বহু যুগ। তবে এখন মানুষ বলতে শিখেছেন। সেখান থেকেই এই #MeToo-র কনসেপ্ট। তবে তারপরেও অনেকে বলতে পারেন, অনেকে পারেন না।
#MeToo-র অভিযোগ সব ক্ষেত্রেই কি সঠিক বলে মনে হয়?
সন্দীপ্তা: অনেকসময়ই সময় সত্যিই হয়ত এমন ঘটনা ঘটেছে, আবার এমনও হয়, ছেলে হয়ত নির্দোষ। অনেক সময়ই ব্যবহার করার জন্য বা অন্য কোনও কারণে #MeToo-র অভিযোগ আনা হয়েছে। আসলে সবকিছুই ভালো খারাপ আছে। শুধু #MeToo-র কেন, আমাদের সংবিধানে অনেক ধারা আছে, সেটাও অনেকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে থাকেন। তাই আমার মনে হয় ‘নষ্টনীড়’-এর মতো গল্প বলাটা দরকার। হয়ত কোনও পরিবারের এমন ঘটনা ঘটেছে, তাঁরা হয়ত এই গল্পটা দেখে সেটার মিল খুঁজে পাবেন, অনুভব করবেন।
#MeToo-র ক্ষেত্রে অনেক অভিযোগ সত্য়ি, অনেক সময় আবার মিথ্যা অভিযোগও ঘটে, কী বার্তা দেবে?
সন্দীপ্তা: দেখুন #MeToo-র তো অভিযোগ এখন আসছে। এছাড়াও ৪৯৯ ধারা রয়েছে, সেই ধারাও অনেক সময় অপব্যবহার হয়েছে। আমার বলতেও খারাপ লাগছে, অনেকেই যাদের সত্য়ি সমস্যা হয়, তাঁরা হয়ত ভয় পেয়ে পুলিশের কাছে যাননি। আবার যাদের সমস্যা নেই তাঁরাও অনেকসময় ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে এটা ব্যবহার করেছেন। এটা ঠিক নয়, আমার মনে হয় এর জন্য মানসিকতা বদলাতে হবে। ভীষণই সেনসেটিভ একটা বিষয়। আমার মনে হয়, এটার অপব্যবহার করে কারোর জীবন নষ্ট না করা উচিত। কারোর জন্য রাগ মেটাতে এটা করা উচিত নয়। আমাকে এটা বলতে হচ্ছে, যে অপব্যবহার করবেন না, তার অর্থ এমনটা হয় বলেই বলছি। এটা বলতেও আমার খারাপ লাগছে। এটা সত্যিই উচিত নয়। এটা নিম্ন মানসিকতার।
অপর্ণার চরিত্রটি সন্দীপ্তার কাছে কোথাও কি কোনওভাবে চ্য়ালেঞ্জিং ছিল?
সন্দীপ্তা: আসলে সন্দীপ্তা ও অপর্ণার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। লুক, পোশা, হাঁটা চলা, অভিব্যক্তি সবদিক থেকেই। অপর্ণা একটু কুঁজো হয়ে, ঠিক কুঁজো বলা যায় না অবশ্য, একটু ঝুঁকে বসে, চলে, একদম ঘরোয়া চলাফেরা। তাই অদিতি দি (পরিচালক অদিতি রায়) আমায় বলেছিলেন, তুই যখন বসবি একটি ঝুঁকে বসবি, একটু হেলে। আসলে আমি সন্দীপ্তা সবসময় সোজা হয়ে, শিরদাঁড়া সোজা করে বসি। অপর্ণার সঙ্গে আমার চালচলনের পার্থক্য, চরিত্রের পার্থক্য তো রয়েছেই। আর একটা বিষয় করতে হয়েছে, সেটা হল একটু গোটা গোটা করে কথা বলা অভ্যাস করতে হয়েছে, কারণ অপর্ণা এভাবেই কথা বলে।
আপনার নাকি শ্য়ুটিং সেটে তাড়াতাড়ি খিদে পেয়ে যায়?
সন্দীপ্তা: হ্যাঁ (হাসি)। পরিচালক অদিতি রায়ের সঙ্গে আমি তো ‘বোধন’-এও কাজ করেছি, ওটার শ্য়ুটিংয়ের সময় অদিতি দি অবাক হয়ে গিয়েছিল যে একটা মেয়ে সারাক্ষণ কীভাবে খেতে থাকে! এখন অদিতি দিও বুঝে গিয়েছেন। যেমন ‘নষ্টনীড়’-এর শ্যুটিংয়ে অদিতি দি এসে একদিন বললেন, বাবা খেয়ে নিয়েছিস তো? জানে সন্দীপ্তা খেলে ঠিক থাকবে। যদি আমি রেগে যাই, বুঝতে হবে সন্দীপ্তা খিদে পেয়েছে।
আপনাদের পেশার জন্য ডায়েট তো করতেই হয়, সেক্ষেত্রে এই যে মাঝে মধ্যেই খান, সেটা কী?
সন্দীপ্তা: হ্যাঁ, আমি ফল খেতে থাকি সারাক্ষণ। না হয় ফল খাচ্ছি, নয়ত ডায়েট চিড়ে। আসলে কিছু একটা খেতে থাকি, কারণ গ্যাসটিক আলসার হয়েছিল একবার। ডাক্টার বলেছিলন, আপনি ফুচকা খেলেও খান, কিন্তু খান। পেট যেন খালি না থাকে। আমার মা মাঝে মজা করে বলেন, মনে হয় বাচ্চা এখনও হয়নি, এতবড় হয়ে গিয়েছে, তাও ঘণ্টায় ঘণ্টায় খাবার দিতে হয়। এখন অবশ্য অসুবিধা হয় না, কারণ অ্যাটেনডেন্ট আছেন, আমি তাকালে পেটে হাত দিলেই উনি বুঝে যান আমি খাব।
আপনি নাকি সারাক্ষণ গান গাইতে থাকেন?
সন্দীপ্তা: আমি সারাক্ষণ গান গাইতে থাকি বলে অদিতি দি হেড ফোন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন (হাসি)। বোধনের সময় দেখেছি, অদিতি দি সবসময় হেডফোন কানে দিয়ে থাকেন, তবে আমার গানের ঠেলার উনি উনি সেটা এবার বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ, বিষয়টা অত্যাচারের জায়গায় পৌঁছেছিল। আমি আবার গান না গাইলেও মুশকিল। অদিতি এসে জিগ্গেস করেন, তুই ঠিক আছিস তো? মন ঠিক আছে তো? আমাদের বোধনের ডিওপি-‘নষ্টনীড়’-কাজ করেছেন, তাই সবমিলিয়ে এটার শ্যুটিংয়ের সময় স্বচ্ছন্দ ছিলাম।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ট্রোলিং আজকাল নিত্যদিনের ঘটনা, এটাকে কীভাবে দেখেন?
সন্দীপ্তা: আমি যেতু অভিনেত্রী ছাড়াও একজন সাইকোলজিস্ট, তাই এটা নিয়ে আমি ভেবেছি। সোশ্য়াল মিডিয়া এমন একটা প্ল্য়ার্টফর্ম, যেখানে কেউ জবাবদিহি করতে আসে না। একটা ফেক অ্যাকাউন্ট বানিয়েও কাউকে কিছু বলে দিতে পারেন, লিখে দিতে পারেন। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে কে কী করছেন অনেকেই জানতে পারেন, তাই অনেক ক্ষেত্রে কেউ কিছু না পেয়ে, হতাশা থেকেও অনেক কিছু লিখে দেন, বলে দেন। আজকাল যে যাকে যা পারছেন বলে দিচ্ছেন, আমাদের মূল্যবোধ, নীতিবোধ পড়ে যাচ্ছে, যেটা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো, খারাপ দুই দিকই রয়েছে।
আপনি সাইকোলজিস্ট, অভিনয়ের বাইরে এটা নিয়ে কি চর্চা করেন?
সন্দীপ্তা: হ্যাঁ, আমি সাইকোলজিস্ট হিসাবেও প্র্য়াকটিস করি। আগে ক্লিনিকে বসতাম, এখন অনলাইনে করি। খুব সিরিয়াস রোগীদের ক্ষেত্রে নিজ মুখোমুখি হয়ে কথা বলি।
‘নষ্টনীড়’-এ সময় আপনার স্বামীর চরিত্রে রয়েছেন অভিনেতা সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্যক্তিগত জীবনেও আপনার প্রেমিকের নাম সৌম্য মুখোপাধ্যায়, সেই প্রেম কেমন চলছে?
সন্দীপ্তা: আমি কিন্তু সৌম্য মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ হওয়ার আগেই অভিনেতা সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছিলাম। হ্যাঁ, ব্যক্তিগত জীবনেও সৌম্যর সঙ্গে সম্পর্ক দিব্যি চলছে, ভালোই চলছে।
সিনেমায় আবারও কবে সন্দীপ্তাকে দেখতে পাওয়া যাবে?
সন্দীপ্তা: ‘দ্য একেন’-এ করেছি অন্যরকম একটা চরিত্রে, আরও কথা হচ্ছে, সময় হলে দর্শকরা জানতে পারবেন।
For all the latest entertainment News Click Here