বিশ্ব নৃত্য দিবসে অন্য ভূমিকায় পৌষালী-সৌমিলি-অর্ণব, ‘নাচেই সব’ কেন বললেন তাঁরা
বয়স তখন সবে মাত্র দুই বছর তিন মাস। স্কুলের সঙ্গে নাচের ক্লাসেও ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল বাড়ি থেকে। প্রতি শুক্রবার করে স্কুলের পর ক্লাসে যেতাম। অর্ধেক দিন গিয়েই ক্লান্তিতে ঢুলতাম বলে আজও আন্টি মজা করেন। কিন্তু সেই যে ক্লাসে একবার ভর্তি হয়েছিলাম আজ দেখতে দেখতে দুই কুড়ির বেশ খানিকটা বেশি বছর পেরিয়ে গেলেও যোগাযোগটা থেকে গিয়েছে। ক্রমে আত্মীয়তায় পরিণত হয়েছে। নাচ শব্দটাই যেন আত্মার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। ভালোবাসায় পরিণত এই এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি। ভরতনাট্যম, ওড়িশি সহ বিভিন্ন ধরনের ফর্ম শেখার সৌভাগ্য হয়েছে। সৌভাগ্য হয়েছে বহু নামী, গুণী শিল্পীদের থেকে নাচ শেখার, তাঁদের সান্নিধ্য পাওয়ার। তাই এমন বিশেষ দিনে যখন আমায় বলা হল ‘তুমি তো নাচ জানো আজকের দিন নিয়ে কিছু লিখবে নাকি?’ সুযোগটা হাতছাড়া করতে ইচ্ছে করল না। তাই যাঁরা এই নাচের দুনিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আরও কিছুটা শেখার, জানার চেষ্টা করলাম।
আজ বিশ্ব নৃত্য দিবস। নাচ কেবল একটা শিল্প নয়, এটা একটা যাপন। এটা একটা উৎসব। আর সেই কথাই যেন উঠে এল অভিনেত্রী সৌমিলি বিশ্বাসের কথায়। উনি এই আজকের দিনে প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, ‘এটা একটা ফেস্টিভ্যাল। ঠিক যেমন দুর্গাপুজো, ক্রিসমাস, তেমনই এটাও একটা উৎসব। এবার আমার শো নেই ঠিকই কিন্তু এই দিনটায় আরও গর্ববোধ হয় এটা ভেবে যে আমি নাচের দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত।’ প্রায় একই কথা বললেন বিখ্যাত ওড়িশি নৃত্যশিল্পী অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘আমার কাছে তো প্রতিটা দিন ড্যান্স ডে। তবে যাঁরা নাচের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁদের সচেতন করার জন্য, তাঁদের কাছে নাচের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই দিনটা ভীষণই জরুরি।’
আজকের দিনটা সৌমিলি জানালেন তাঁর কোনও শো নেই, অর্ণব কী করছেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি এখন সিডনিতে আছি, ওয়ার্কশপ চলছে এখানে। এবার আমি আমার শহর, কলকাতার মঞ্চগুলোকে মিস করছি। দেশে থাকলে ঠিক শো থাকত। তবে এবারও তার থেকে কিছু কম অবশ্য পাচ্ছি না। এবার আমি ভিনদেশে এসে আমাদের দেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে, আমার যা ফর্ম সেই ওড়িশিকে এই দেশের শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারছি। এটাও তো কম গর্বের, কম আনন্দের নয়। নাচ আমায় সেই জায়গা দিয়েছে।’
ওড়িশি গুরু পৌষালী মুখোপাধ্যায় ওয়ার্ল্ড ড্যান্স ডে নিয়ে বলার আগেই বললেন কেন নাচ করা জরুরি। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘এখন ঘরে ঘরে বাতের ব্যথা। আর সবাই জিমে যায়। কিন্তু কেন যাব? আমি যদি নাচ করি আমার তো সব কিছুই চর্চা হয়ে যাচ্ছে। ব্রিদিং এক্সারসাইজ থেকে হাতের মুভমেন্ট সহ সবটাই। জিমের তো দরকার নেই। নাচ আমাদের ফিট রাখবে।’ শিক্ষাগুরুর কথায় ‘নাচেই কেমিস্ট্রি, বায়োলজি সব মিশে আছে। এটা আমাদের আনন্দ দেয়, রিল্যাক্স করে। আজ সারা কলকাতায় কত শো হচ্ছে। চারদিকে কত ক্রিয়েটিভ জিনিস হচ্ছে। কত ভাবনা বলো তো?’
ঠিকই তো, নাচ করা মানে কেবল তো একটা আর্ট ফর্মের চর্চা নয়, ব্যায়াম, নিজেকে ভালো রাখা মনকে ভালো রাখা সব কিছুই। কিন্তু আজকাল অনেককেই দেখা যায় ক্লাসিক্যাল ফর্ম শিখতে চান না। কী শিখে চটজলদি রিয়েলিটি শোতে যাওয়া যাবে সেটার চেষ্টা। সেই বিষয়ে সৌমিলি বিশ্বাসের কী মত? অভিনেত্রীর কথায়, ‘পড়াশোনা শেখার জন্য যেমন এবিসিডি শিখতে হয়, গান গাইতে গেলে যেমন সরগম শিখতে হয় তেমনই নাচের বেস তৈরি করতে গেলে ক্লাসিক্যাল নাচ শেখা জরুরি। কেউ যদি ভালো ড্যান্সার হতে চান কেবল টিভির পর্দায় আসার জন্য নয়, নাচটা নিজের ভিতরে আত্মস্থ করতে চান তাহলে ক্লাসিক্যাল ড্যান্স শেখা উচিত।’
এই বিষয়ে একই মত পোষণ করলেন পৌষালী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘রিয়েলিটি শোতে যাক ছেলেমেয়েরা, কত ধরনের ক্রিয়েটিভিটি দেখা যায় সেখানে। সবার কত ফ্লেক্সিবিলিটি। কিন্তু ভিত যেন শক্ত হয়।’
অন্যদিকে অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘রিয়েলিটি শো তো ভালো। কিন্তু সেটা নিয়ে যে মাতামাতি হয়, অনেকেই ওটাকে লক্ষ্য বানিয়ে ফেলেন নাচ শেখাকে নয় সেটা ঠিক নয়। জিততে হবে, না জিতলে নাচ বন্ধ করে দেওয়া, আবার জিতলে আমিই সব থেকে বেশি জানি এগুলো ঠিক নয়।’
For all the latest entertainment News Click Here