বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার থেকে একাদশ বাছল ICC, এই টিম টেক্কা দেবে যে কোনও বড় দলকে
হারারেতে রবিবার শ্রীলঙ্কা এবং নেদারল্যান্ডসের মধ্যে ফাইনালের পরে, আইসিসি পুরুষ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ কোয়ালিফায়ারের টিমগুলো থেকে শক্তিশালী একাদশ বেছে নিয়েছে। শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস এবং জিম্বাবোয়ের তিন জন করে খেলোয়াড় পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। স্কটল্যান্ডের দু’জন খেলোয়াড়ও জায়গা করে নিয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের ক্যাপ্টেন স্কট এডওয়ার্ডসকে এই দলের অধিনায়ক করা হয়েছে।
১. পাথুম নিসঙ্কা – শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কার ওপেনার পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুরন্ত ছন্দে ছিলেন। শুরু থেকেই লড়াকু মেজাজ দেখিয়েছেন তিনি। আট ম্যাচে নিসঙ্কা ৬৯ গড়ে ৪১৭ রান করেছেন। দু’টি হাফসেঞ্চুরি এবং দু’টি সেঞ্চুরি করেছেন। তাঁর দু’টি সেঞ্চুরি জিম্বাবোয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এসেছিল, যা বছরের শেষে শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপের জন্য ভারতের টিকিট বুক করতে সাহায্য করেছিল।
২. বিক্রমজিৎ সিং – নেদারল্যান্ডস
তরুণ বিক্রমজিৎ সিং নেদারল্যান্ডসের হয়ে ব্যাট হাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। পাশাপাশি কিছু উইকেটও নিয়েছেন তিনি। আট ম্যাচে বিক্রমজিৎ ৪০.৭৫ গড়ে ৩২৬ রান করেছেন। একটি সেঞ্চুরি এবং একটি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর। ওমানের বিপক্ষে তাঁর সেঞ্চুরিটি স্পেশ্যাল ছিল। কারণ আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে এটি তাঁর প্রথম শতরান ছিল। তিনি ছয় উইকেটও নিয়েছেন।
৩. ব্র্যেন্ডন ম্যাকমুলেন – স্কটল্যান্ড
২৩ বছরের এই তরুণ অলরাউন্ডার পুরো টুর্নামেন্টে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক পারফর্মারদের একজন ছিলেন। ব্যাট হাতে তাঁর স্ট্রোকের পরিসর এবং বল সঠিক লাইন এবং লেন্থ স্কটিশদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হয়ে উঠেছিল। সাতটি ম্যাচে ম্যাকমুলেন ১৭.৫৩ গড়ে ১৩টি উইকেট নিয়েছেন, যার মধ্যে একটি পাঁচ উইকেটও রয়েছে। ব্যাট হাতে, তিনি আরও বেশি চিত্তাকর্ষক ছিলেন। ৫২ গড়ে দু’টি সেঞ্চুরি এবং একটি অর্ধশতরানের সাহায্যে ৩৬৪ রান করেন।
আরও পড়ুন: হারত বলে ভারত আগেও আমাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেনি- আজব দাবি পাক প্রাক্তনীর
৪. সিন উইলিয়ামস – জিম্বাবোয়ে
অভিজ্ঞ জিম্বাবোয়ের তারকা তর্কাতীত ভাবে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক খেলোয়াড় ছিলেন। ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুরি ছোটানোর পাশাপাশি বল হাতেও দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছেন। উইলিয়ামস টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তিনটি সেঞ্চুরি এবং দু’টি অর্ধশতরান সহ ১০০ গড়ে সাতটি ম্যাচে ৬০০ রান করেন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তাঁর ১৭৪ রানের ইনিংস ছিল দেখার মতো। উইলিয়ামসও মধ্য ওভারে বল হাতে একটি ভালো বিকল্প হয়ে উঠেছিলেন। তিনটি উইকেট নিয়েছেন তিনি।
৫. ব্যাস ডি’লিড – নেদারল্যান্ডস
ব্যাস ডি’লিড পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে নেদারল্যান্ডসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পারফর্মার ছিলেন। তবে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের বড় জয় পাওয়াটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এই ম্যাচে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে স্কটিশ ব্যাটারদের চাপে ফেলেন। পাশাপাশি সেঞ্চুরি করে নেদারল্যান্ডসকে ভালো জায়গায় নিয়ে যান। ডি’লিড সাত ম্যাচে একটি সেঞ্চুরির হাত ধরে ২৮৫ রান করেছেন এবং ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেটও নিয়েছেন।
৬. সিকান্দার রাজা- জিম্বাবোয়ে
জিম্বাবোয়ের এই অলরাউন্ডার আবারও টুর্নামেন্টে তাঁর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। ব্যাট এবং বল- দু’ ক্ষেত্রেই অবদান রেখেছেন। ব্যাট হাতে সিকান্দার রাজা জিম্বাবোয়ের একজন খেলোয়াড়ের দ্রুততম ওডিআই সেঞ্চুরি সহ সাতটি খেলায় ৩২৫ রান করেন। একটি সেঞ্চুরি ও একটি হাফ সেঞ্চুরি সহ তাঁর রান এসেছে ৬৫ গড়ে। এ ছাড়াও তিনি ৪/৫৫-এর সেরা পরিসংখ্যান সহ ন’টি উইকেট নিয়েছিলেন।
৭. স্কট এডওয়ার্ডস (অধিনায়ক এবং উইকেটকিপার)- নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক পুরো টুর্নামেন্টে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্টাম্পের পিছনে এবং ব্যাট হাতে তিনি দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছেন। তিনি কৌশলগত ভাবে বুদ্ধিমানও ছিলেন, নেদারল্যান্ডসকে কিছু কঠিন পরিস্থিতিতে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই ডাচেরা বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এডওয়ার্ডস আট ম্যাচে ১২টি ডিসমিসাল এবং চারটি হাফ সেঞ্চুরি সহ ৩১৪ রান করেছেন।
আরও পড়ুন: ৭৫ করে দলকে জেতালেন ব্রুক, সঙ্গে গড়ে ফেললেন দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ড
৮. ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গা- শ্রীলঙ্কা
টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়েছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। টুর্নামেন্ট চলাকালীন সবচেয়ে বেশি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে স্পেল করেছেন তিনি। তাঁর বৈচিত্র্যের মিশ্রণ ব্যাটারদের পক্ষে লড়াই করা খুব কঠিন হয়ে উঠেছিল। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে তাঁর আধিপত্য এমন ছিল যে, তিনি পরপর তিনটি ম্যাচে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনিসের নজির স্পর্শ করেন। হাসরাঙ্গা সাত ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে। সেরা পরিসংখ্যান ৬/২৪।
৯. মহেশ থিকশানা- শ্রীলঙ্কা
হাসারাঙ্গার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার স্পিন জুটি পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। থিকশান তাঁর স্পিন বোলিং সঙ্গী হিসেবে সমান ভাবে চিত্তাকর্ষক ছিলেন। টুর্নামেন্টের শেষ পর্যায়ে, বিশেষ করে সুপার সিক্স পর্বে তিনি বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন। থিকশানা ১২.২৩-এর অত্যাশ্চর্য গড় এবং ৪.০২-এর ইকোনমিরেটে আটটি খেলায় ২১টি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন।
১০. ক্রিস সোল- স্কটল্যান্ড
স্কটল্যান্ডের ক্রিস সোল ছিলেন টুর্নামেন্টের অন্যতম দ্রুততম বোলার। প্রায়শই তিনি প্রতি ঘণ্টায় ১৪৫ কিমির বেশি গতিতে বল করতেন। এবং তাঁর গতির কাছে পরাস্ত হতেন ব্যাটাররা। পেসারের পাশাপাশি সোলেরও দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ ছিল। কারণ তিনি পুরো টুর্নামেন্টে কৃপণ বোলিং করে গিয়েছেন। সাতটি ম্যাচে সোলে ২৫ গড়ে এবং ৪.৬৭ ইকোনমি রেটে ১১টি উইকেট নিয়েছেন। যদিও স্কটল্যান্ড অল্পের জন্য ক্রিকেটের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়ে। তবে সোলে তাদের দলের আসল সম্পদ।
১১. রিচার্ড নাগারভা- জিম্বাবোয়ে
বাঁ-হাতি জোরে বোলার নাগারভা জিম্বাবোয়ের জন্য অপরিহার্য ছিল। যখন তাঁর দলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়, তখন প্রায়শই তিনি উইকেট তুলে নিতে সক্ষম ছিলেন। নতুন বলেই হোক বা মধ্য ওভার অথবা ডেথ ওভার- জিম্বাবোয়ের হয়ে বারবার দুরন্ত ডেলিভারি করেছেন নাগারভা। এই পেসার টুর্নামেন্ট চলাকালীন জিম্বাবোয়ের শীর্ষস্থানীয় উইকেট শিকারী হন। তিনি সাত ম্যাচে ১৯.২৮ গড়ে ১৪ উইকেট নিয়েছেন।
For all the latest Sports News Click Here