বিশ্বকাপের আগে সংস্কারের জন্য স্টেডিয়ামগুলি পাবে ৫০ কোটি, ইডেনে কী করা হবে?
মুম্বইতে নতুন ফ্লাডলাইট এবং কর্পোরেট বক্স, লখনউতে একটি রিলেড পিচ, কলকাতায় ড্রেসিং রুমের উন্নতি, ধর্মশালায় আমদানি করা ঘাস দিয়ে নতুন আউটফিল্ড বানানো, পুনেতে একটি নতুন অস্থায়ী ছাদ নির্মাণ, আর দিল্লিতে একটি উন্নতমানের টিকিট বিক্রির ব্যবস্থার পাশাপাশি উন্নত মানের টয়লেট বানানো- অক্টোবর-নভেম্বরে আইসিসি ৫০-ওভারের বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন ভেন্যুতে।
বিশ্বকাপের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে আমদাবাদ, চেন্নাই, মুম্বই, ধর্মশালা, দিল্লি, পুনে, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, লখনউ এবং কলকাতায়। গুয়াহাটি এবং তিরুবনন্তপুরম হবে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ।
বিভিন্ন স্টেডিয়ামের বিভিন্ন চাহিদা রয়েছে। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে চারটি লিগ গেম এবং একটি সেমিফাইনাল ম্যাচ হবে। এর জন্য আউটফিল্ড রিলেড করা হবে, নতুন এলইডি লাইটের আপগ্রেড করার পাশাপাশি কর্পোরেট বক্স এবং টয়লেটগুলির সংস্কার করা হবে৷
চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে নতুন এলইডি লাইট বসানো হচ্ছে এবং দু’টি লাল মাটির পিচ বসানোর জন্য চত্বরটি খনন করা হয়েছে। লখনউ আবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের খেলার আয়োজন করতে চলেছে। তারা পিচগুলিকে রিলে করবে, যে পিচগুলি আইপিএলের সময়ে প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়েছিল। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম তাদের বসার জায়গা এবং টয়লেটগুলি সংস্কার করবে।
ধর্মশালার এইচপিসিএ স্টেডিয়ামে ইতিমধ্যেই ব্যাপক কাজ করা হয়েছে। সংস্কার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ভেন্যুটি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বরাদ্দ করা টেস্ট আয়োজন করতে পারেনি। কিন্তু এখন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতেরপাঁচটি ম্যাচ সহ বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত বলে দাবি করছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচকদের ফোন করে জানতে চাই না, কেন বাদ পড়লাম- সরফরাজ নিয়ে চর্চার মাঝেই ক্ষোভ উগরালেন আর এক তারকা ক্রিকেটার
একটি নতুন নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ছয় হাজার মিটার জায়গা জুড়ে পাইপগুলিকে ইনস্টল করা হয়েছে। একটি বায়ু-নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা দ্রুত সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টির জল বের করে দেবে। রাইগ্রাস ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে জানা গিয়েছে, এবং নদীর বালি ও নুড়ি একটি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে আউটফিল্ডে ব্যবহার করার জন্য। হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শীতকালে ৩ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রায় রাইগ্রাস প্রথম বীজ বপন করা হয়েছিল এবং ছায়া-প্রতিরোধী পাসপালাম ঘাসের সঙ্গে মিশ্রিত করা হয়েছিল।
এইচপিসিএ সদস্য অরুণ ধুমাল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘আমরা স্টেডিয়ামের পুরো মাঠে কাজ করেছি। এবং আমরা ভিভিআইপি এবং গেস্ট বক্সগুলিরও একটি মেকওভার করেছি। রিলেইং প্রক্রিয়ার জন্য সেরা বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করেছি। আমরা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম যে, আমাদের ড্রেনেজ সিস্টেমকে সবচেয়ে ভালো করতে। এবং বিদেশ থেকে ঘাস আনা হয়েছে। আমরা কয়েকটি আসন পরিবর্তন করেছি, স্ট্যান্ডগুলি রঙ করেছি।আমরা আসলে বৃষ্টির পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেলা শুরু করা যায়, সেই ব্যবস্থাটা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম।’
প্রতিটি বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজক স্টেডিয়ামগুলিই পরিকাঠামোর উন্নতি করার জন্য বিসিসিআই-এর তরফে ৫০ কোটি করে অনুদান পাবে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ১০টি বিশ্বকাপ ভেন্যুর জন্য ৫০০কোটি টাকারও বেশি বাজেট ধরেছে।
মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অমল কালে আশ্বস্ত করেছেন যে, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, যেখানে ২০১১ সালের ফাইনাল আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে এবার বিশ্বমানের পরিকাঠামো এবং সেরা আতিথেয়তা প্রদান করা হবে।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপে বুমরাহের ফেরা নিয়ে চর্চার মাঝেই, বিশ্বকাপে তারকা পেসারের খেলা নিয়ে বোমা অশ্বিনের
কালে বলেছেন, ‘একটি নতুন আউটফিল্ড, নতুন এলইডি লাইট আপগ্রেড করা, কর্পোরেট বক্সগুলির সংস্কার এবং নতুন টয়লেটগুলির সংস্কার সহ পরিকাঠামোগত উন্নতির প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।’
মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রোহিত পাওয়ার ব্যাখ্যা করেছেন যে, চলতি মহারাষ্ট্র প্রিমিয়ার লিগ (এমপিএল) তাদের পুনে স্টেডিয়ামের উন্নতির ক্ষেত্রে একটি ন্যায্য ধারণা দিয়েছে। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘স্টেডিয়ামের তিন-চতুর্থাংশের ছাদ নেই। তাই আমাদের দেখতে হবে, কতগুলি স্ট্যান্ড আছে, যেগুলি কভার করা যায়। আমরা পরিষ্কার টয়লেট, ভালো রাস্তা এবং পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের মতো মৌলিক সুবিধা দিতে চাই। কোনও আসন খারাপ হলে, আমরা সেগুলো প্রতিস্থাপন করব। আমরা দেখব মেটাল ফেন্সিং ঠিক আছে কি না, টিকিট রিডাররা কাজ করছে কি না। আমাদের নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক আছে, ফ্লাডলাইটগুলিও ঠিক আছে।’ এ ছাড়া দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে, টিকিট সফ্টওয়্যার আপগ্রেড করা ছাড়াও দর্শকদের বলার জায়গা এবং টয়লেটগুলিকে সংস্কার করা হচ্ছে।
ইডেনে ইতিমধ্যেই মিডিয়া বক্স নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে আগেই আধুনিক ফ্লাডলাইট লাগানো হয়েছিল। এখন ইডেনে যে ধরনের লাইট লাগানো রয়েছে, তা ম্যাচের মাঝে কোনও ভাবে বন্ধ হয়ে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে জ্বালিয়ে দেওয়া সম্ভব। বাংলার ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ইডেনে যেটুকু সংস্কারের কাজ বাকি রয়েছে, তা বিশ্বকাপের আগেই হয়ে যাবে। বোর্ড সচিব জয় শাহের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। সেই সময় ইডেনে কী কী করা হচ্ছে তা দেখিয়েছিলাম। জয় শাহ খুবই খুশি হয় ইডেনের কাজ দেখে।’
For all the latest Sports News Click Here