‘বিন্দাস মুডে খেল…’, পন্তের পেপটকেই IPL-এ বাজিমাত, রহস্য ফাঁস স্বয়ং পোড়েলের
গত বছরের একেবারে শেষে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মাঠের বাইরে রয়েছেন ঋষভ পন্ত। চিকিৎসকরা তখনই জানিয়ে দেন পন্তের মাঠের ফিরতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। ফলে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি এবং আইপিএল থেকে ছিটকে যান তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই চাপে পড়ে যান দিল্লি ক্যাপিটালস। অধিনায়ক ছিটকে যাওয়ায় রাতের ঘুম উড়ে যায় দিল্লি ক্যাপিটালস ফ্র্যাঞ্চাইজির।
পন্তের বিকল্প খুঁজতে আসরে নেমে পড়েন তারা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট করার পরই প্রাক মরশুম প্রস্তুতিতে বাংলার তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটার অভিষেক পোড়েলকে দেখা যায়। তখনই আশঙ্কা করা হয়েছিল এবার আইপিএলের বাংলার এই ক্রিকেটারকে দেখা যেতে চলেছে। তেমনটাই হয়। মরশুম শুরু হওয়ার মুহূর্তে অভিষেককে দলে নেয় দিল্লি। পন্তের বিকল্প খুঁজে পায় তারা।
তবে বাংলার এই তরুণ ব্যাটার প্রথম ম্যাচেই বেশ কিছুটা রান করলেও তাঁকে আর সেই ভাবে দেখা যায়নি। ফলে একটা সময় দলের বাইরে থাকতে হয়েছে। যদিও এবারের আইপিএল থেকে এই বঙ্গ সন্তান অনেক কিছুই শিখেছেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয় তিনি সামনে এনেছেন। আইপিএল সম্পর্কে বলতে গিয়ে অভিষেক বলেন, ‘দিল্লি ক্যাপিটালস দলে থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। বিশেষ করে সেখানে বড় মাপের অনেক কোচ ছিল। তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। পাশাপাশি আমার ব্যাটিং এবং কিপিংয়ের কোথায় ভুল হচ্ছে তা বলে দিয়েছে। এখানে থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সবচেয়ে বড় কথা হল, বিশ্বের বড় বড় ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেষ করেছি এবং নেটে অনুশীলন করেছি। সেখানে আমি অনেক মজা করেছি। দিল্লি ক্যাপিটালস পরিবারের মতো। আমি অনেক আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করেছি।’
চোটের জন্য খেলতে পারেননি পন্ত। তবে দিল্লির প্রথম হোম ম্যাচেই মাঠে উপস্থিত থাকেন তিনি। ম্যাচ শেষে দেখা করেন ক্রিকেটারদের সঙ্গেও। তখন দেখা যায় পোড়েলকে কিছু টিপস দিচ্ছেন পন্ত। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তরুণ এই ক্রিকেটার বলেন, ‘সে আমার কাছে যাখন আসে, তখন আমি অনেক কিছু জানতে চাই, কারণ আমার থেকে অনেক সিনিয়র পন্ত ভাই। অনেক অভিজ্ঞতাও রয়েছে। ফলে ওর টিপস আমার খেলায় উন্নতি করবে। সেই জন্যই অনেক কিছু জানতে চাই। তখন আমাকে সে বলে, চাপ নেওয়ার কিছু নেই। বিন্দাস ভাবে খেলে যাও এবং খুলে খেলো। সে তাঁর প্রথম আইপিএলের অভিজ্ঞতার কথা বলে। প্রথম বলের পর সব ঠিক হয়ে যায়। কোনও চাপ হয় না।’
পন্তের ছিটকে যাওয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিলে পোড়েল বলেন, ‘অবশ্যই, পন্তকে দিল্লি মিস করেছে। ও একজন স্টার ক্রিকেটার। ম্যাচ উইনারও বলা হয়। ওর না থাকা একটা বড় ক্ষতি দলের জন্য। তবে পন্ত ভাই ধীরে ধীরে আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ হয়েছে। আমার আশা দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। ভারতীয় দলের স্টার ক্রিকেটার। জাতীয় দলও তাঁকে দ্রুত দেখতে চায়। আমার আশা খুব দ্রুত তাঁকে ফের মাঠে দেখা যাবে।’
দিল্লি দলের দুই কোচিং স্টাফ রিকি পন্টিং এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জুটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সৌরভ স্যার এবং রিকি স্যারের খেলা দেখেছি। আমি কখনওই ভাবিনি তাদের কোচিংয়ে খেলব। এটা আমার কাছে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট ছাড়া আর কিছু নয়। এই দুই কিংবদন্তির থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। তোমার যদি কোনও বিষয় নিয়ে সমস্যা হয়, তাহলে তারা সব সময় ক্রিকেটারদের পাশে থেকে তা সমাধান করে দেয়। তারা দু’জনেই খুব ভালো এবং তাদের থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। আমিও তাদের থেকে অনেক কিছু শিখেছি।’
এই টুর্নামেন্টে বেশ কিছু দুর্দান্ত ক্যাচ ধরতে দেখা যায় পোড়েলকে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোহিত শর্মার ক্যাচ। সেই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। আমি বোলারের বলে দিকে মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি। যা আমাকে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ধরতে সাহায্য করে। তবে এটা ঠিক ফিটনেস খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই ম্যাচেও তাই করি। তবে ম্যাচ শেষে রোহিত ভাই আমাকে এসে বলে, খুব ভালো ক্যাচ ধরেছ। আরও ভালো খেলতে হবে তোমকে।’
২০২২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে ছিলেন পোড়েল এবং যশ ধুল। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আমার কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। সেই বিশ্বকাপের পরই অনেক দরজা খুলে গিয়েছে। আমি রঞ্জি ট্রফি খেলেছি এবং অনেক ঘরোয়া টুর্নামেন্টে সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটা টুর্নামেন্টেই আমি নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে দেখা যায় অভিষেক পোড়েলকে। টিপসও পান তিনি। সেই প্রসঙ্গে বঙ্গ সন্তান বলেন, ‘আমার আইডল মাহি ভাই। আমি তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ লক্ষ্য করি। শুধু মাহি ভাই নয়, অ্যাডাম গিলক্রিস্টকেও আমি লক্ষ্য করি। তবে যখন মাহি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করি তখন অনেক টিপস আমি পাই। বিশেষ করে উইকেটকিপিংয়ে ভুল হচ্ছে তা ধরিয়ে দেন। যা আমার জীবনে অন্যতম সেরা মুহূর্ত হয়ে থাকবে।’
For all the latest Sports News Click Here