‘বাবা চাননি’, শেষইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে আড়ম্বর ছাড়াই পঞ্চভূতে লীন সমরেশ মজুমদার
সোমবার বিকালেই কালপুরুষের দেশে মিলিয়ে গিয়েছেন ‘কালবেলা’র স্রষ্টা। বাংলা সাহিত্যের জগতে বিরাট শূন্যতা তৈরি করে না-ফেরার দেশে পা়ড়ি দিয়েছেন সমরেশ মজুমদার। মঙ্গলবার একদম আড়ম্বরহীনভাবেই সম্পন্ন হল তাঁর শেষকৃত্য। এদিন কলকাতার নিমতলা মহাশ্মশানে সাহিত্যিকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
এদিন সকালেই হাসপাতল থেকে তাঁর মরদেহ পৌঁছায় শ্যামপুকুর স্ট্রিটের বাড়িতে। সেখান থেকে তাঁকে শেষ সম্মান জানান কাছের মানুষজন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি শেষবারের মতো পছন্দের লেখকের দর্শন পেতে সেখানে উপচে পড়ছিল আম জনতার ভিড়। নন্দন বা রবীন্দ্র সদন চত্বরে তাঁর দেহ শায়িত রাখা হবে না, সোমবারই জানিয়ে দিয়েছিলেন কন্যা। ‘বাবা এইসব আচার-অনুষ্ঠানে বিশ্বাসী ছিলেন না। বাবা চাইতেন না বলেই এই সিদ্ধান্ত’, বলেন শোকস্তব্ধ দোয়েল।
বিনম্র অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে এদিন সকালে সমরেশ মজুমদারের বাড়িতে পৌঁছান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ও হাজির ছিলেন। শুধু এপার বাংলাই নয়, ওপার বাংলাও বরাবর মুগ্ধ থেকেছে সমরেশ মজুমদারের লেখনিতে। দুই বাংলাকে এক সূত্রে গেঁথেছেন তিনি, এদিন বাংলাদেশে হাইকমিশনে প্রতিনিধিরাও তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে হাজির ছিলেন শ্যামপুকুর স্ট্রিটের বাড়িতে।
বেলা এগারোটা নাগাদ তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিমতলা মহাশ্মশানে। সেখানেই পঞ্চভূতে লীন হলেন সমরেশ মজুমদার। সাহিত্য অকাডেমি পুরস্কার জয়ী সাহিত্যিক গত ২৫শে এপ্রিল থেকে ভর্তি ছিলেন অ্যাপেলো হাসপাতালে। এরপর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বাড়তে থাকে, দীর্ঘদিন ধরেই সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ)-র সমস্যা ছিল তাঁর। তা সত্ত্বেও ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছিলেন বর্ষীয়ান সাহিত্যিক। তবে সোমবার বিকালে আচমকা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। সেই ধাক্কা সামালে উঠতে পারেননি।
৯৪২ সালে উত্তরবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম প্রয়াত কথা সাহিত্যিকের। প্রাথমিক শিক্ষা জলপাইগুড়ি জিলা স্কুলে। তাই তো আজীবন উত্তরবঙ্গের প্রতি আলাদাই টান ছিল সমরেশবাবুর। ষাটের দশকের গোড়ায় কলকাতায় এসে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন, বাংলায় স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন।
চা বাগানের মদেসিয়া সমাজ থেকে কলকাতার নিম্নবিত্ত মানুষেররা তাঁর কলমে উঠে এসেছে। গোয়েন্দা চরিত্র অর্জুন তাঁর সৃষ্টি। ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্য জগতের অনন্য সম্পদ। এর বাইরেও ‘উত্তরাধিকার’, ‘সাতকাহন’, ‘তেরো পার্বণ’, ‘স্বপ্নের বাজার’-এর মতো উপন্যাস তাঁর অনন্যা সৃষ্টি। তাঁর মৃত্যু নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যজগত ও সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে এক অপূরণনীয় ক্ষতি। বাংলা ছবির জগতেও ছুঁয়েছেন তিনি। তাঁর লেখনি ‘কালেবেলা’, ‘বুনো হাঁস’ উঠে এসেছে সিনেমার পর্দায়। ‘তেরো পার্বন’ নিয়ে তৈরি হয়েছে জনপ্রিয় ধারাবাহিক।
For all the latest entertainment News Click Here