বাড়িওয়ালির জন্য আমার ডাবিং ফেলে দিয়ে বেণুকে দিয়ে ডাবিং করায় ঋতু: চিরঞ্জিৎ
২০১৩-র ৩০ মে আচামকাই এসেছিল সেই খবর, আচমকাই চলে গিয়েছিলেন পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় ১০টা বছর। ২০০০ সালে মুক্তি পেয়েছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি ‘বাড়িওয়ালি’। যেটি ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত অন্যতম আলোচিত ছবি ছিল। কিরণ খের, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায় সহ বহু অভিনেতাই ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষের সেই ছবিতে।
৩০ মে, ২০২৩, আজ মঙ্গলবার ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মৃতির পাতা থেকে আনন্দবাজারকে বেশকিছু কথা ভাগ করে নিয়েছেন অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। তিনি জানান, তাঁর ‘ভয়’ ছবিটি দেখে বেশ ভালো লেগেছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের। আর তারপরই চিরঞ্জিতকে ফোন করেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, ‘ভয়’ ছবিতে তাঁর অভিনয় ভালো লেগেছে। চিরঞ্জিত জানান, তাঁর ‘দীপু’ বলে ডাকতেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। প্রসঙ্গত চিরঞ্জিতের আসল নাম দীপক চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তী সময়ে একে অপরের জন্মদিনে দেখা হয়েছে। ‘বাড়িওয়ালি’তে চিরঞ্জিতকে কাস্ট করেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। অভিনেতা জানান, আরও দু’তিনটি ছবির গল্প শুনিয়েছিলেন যদিও কোনও কারণে, পরে সেই ছবিগুলেতে চিরঞ্জিতের সঙ্গে কাজ করেননি পরিচালক।
‘বাড়িওয়ালি’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময় কিছু ঘটনার কথার বলেছেন চিরঞ্জিত। বলেন, বাড়িওয়ালির শ্যুটিং হয়েছিল বর্ধমানের দশঘড়ায়। তখন চিরঞ্জিতের জনপ্রিয়তা তখন প্রবল, তাঁদের দেখতে দশঘড়ার সেই রাজবাড়িতে রোজই ভিড় জমাচ্ছিলেন বহু মানুষ। কেউ পাঁচিলে উঠে, কিংবা কেউ গাছে চড়ে দেখার চেষ্টা করতেন কী চলছে। তাতে শ্যুটিংয়ে সমস্যা হত। অগত্যা ঋতুপর্ণ ঘোষ চিরঞ্জিতকে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে বলেন, শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে চিরঞ্জিত রাজবাড়ির ছাদে উঠে জনতার উদ্দেশ্যে রোজ একবার করে হাত নাড়তেন, আর তাতেই নাকি সমস্যার সমাধান হয়েছিল অনেকটাই।
চিরঞ্জিত জানান, ছবির জন্য কিরণ খেরকে মুখে আঁচল দিয়ে কথা বলার স্টাইলটা ঋতুপর্ণ ঘোষই শিখিয়েছিলেন। ছবিতে কিরণ খেরের হয়ে ডাবিং করেছিলেন রীতা কয়রাল, অর্থাৎ সিনেমায় রীতার লিপে কথা বলেছিলেন কিরণ খের। যদিও জাতীয় পুরস্কারে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছিল কিরণই ডাব করেছেন। প্রসঙ্গত পরবর্তী সময়ে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। চিরঞ্জিত জানান, ছবিতে তাঁর জন্য ডাবিং করেছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। চিরঞ্জিত চক্রবর্তী জানান, তাঁর ডাব ফেলে দিয়ে বেণুকে (সব্যসাচী) দিয়ে গলা দেওয়ানোর জন্য চিরঞ্জিতের থেকে NOC-চেয়ে নিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। যদিও সেসময় অনেকেই অভিনেতাকে সেটা দিতে বারণ করেছিলেন, এমনকি সব্যসাচী চক্রবর্তী নিজেও। তবে অভিনেতার কথায়, ছবির স্বার্থে তিনি ঋতুর প্রস্তাবে রাজি হন। নাহলে হয়ত তাঁরও জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ থাকত।
চিরঞ্জিতের কথায়, আজ একথা বললেও তাঁর যদিও ঋতুপর্ণ ঘোষকে নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। ছবির স্বার্থেই তিনি সেটা করেছিলেন। তবে চিরঞ্জিত এটাও জানিয়েছেন, ‘বাড়িওয়ালি’র পর থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও বন্ধুত্ব আর সেভাবে ছিল না। চিরঞ্জিত অবশ্য স্পষ্ট জানান, তিনি আজও ঋতুপর্ণের সমালোচনা করছেন না, তবে যেটা ঘটেছিল, সেটাই বলছেন। তাঁর কথায়, তিনি ঋতুপর্ণ ঘোষের গুণমুগ্ধ ছিলেন। ঋতুপর্ণা বাংলা ছবিতে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। চিরঞ্জিতের কথায়, ঋতুপর্ণ ঘোষ বাংলা মশালা ছবির সমর্থক ছিলেন, স্বীকার করে নিতেন স্বপন সাহা ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচান বলেই তাঁরা কাজ করতে পারেন। সত্য়ি কথাটা ঋতুপর্ণ ঘোষ সহজেই বলেছিলেন বলে জানান চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ওরফে ‘ঋতু’র ‘দীপু’।
For all the latest entertainment News Click Here